কুয়েটে এবার প্রশাসনিক কাজেও বিরত থাকার ঘোষণা শিক্ষক সমিতির
Published: 18th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) এবার প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে শিক্ষক লাঞ্ছিত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন শিক্ষকেরা।
এ ছাড়া আগামীকাল সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিচারিক কার্যক্রম শেষ না হলে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
আজ দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষকেরা। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির ওই সভা চলে।
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দোষী ব্যক্তিদের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। যার কারণে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়েছে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্বার্থ রক্ষায় ও ওপরমহল নামক অদৃশ্য শক্তিকে তুষ্ট করছে বর্তমান প্রশাসন। আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে প্রশাসন কোনো সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না নিলে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
আরও পড়ুনকুয়েটে আবার অস্থিরতা, তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি১৫ মে ২০২৫সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশাহত হয়ে বলছি, এই সংকট নিরসনে প্রশাসনের কোনো প্রকার আগ্রহ নেই; সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমতাবস্থায় আমরা গতকাল শনিবার ও আজ ভিসি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলি। আমরা দেখেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শোকজ নোটিশ করা এবং এর জবাবদানের সময়সীমা পার হলেও পরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বর্তমান প্রশাসন তার একক সিদ্ধান্তে বিচারপ্রক্রিয়াকে বন্ধ করে রেখেছে।’
আরও পড়ুনকুয়েটের শিক্ষকেরা রোববারেই ক্লাসে ফিরতে চান, তবে...১৪ মে ২০২৫
এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম চালু, নতুন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন ও আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এই কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তাঁরা বলেন, সাবেক উপাচার্যের পতনের পর নতুন উপাচার্য আসার পরেও সেই পুরোনো প্রহসনের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে। দফায় দফায় তাঁরা স্থানীয় লোকজনের হামলার হুমকিও পাচ্ছেন। ৪ মে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা আতঙ্কিত। দ্রুত এ অবস্থার অবসান চান তাঁরা।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। এরপর ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
নগদ পরিচালনায় স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করবে সরকার
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ পরিচালনায় স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ রোববার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর এ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দুই জনই কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত সরকারের আমলে নগদে যত অনিয়ম যা হয়েছে, ইতোমধ্যে তা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে আরেকটা গ্রুপ ঢুকে নগদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যাদের নামে মামলা রয়েছে। তারা কেউ নগদে ঢুকতে পারবে না। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নগদকে পুনর্গঠন করে আলাদা স্বতন্ত্র বোর্ডের কাছে দেওয়া হবে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগ পরিচালনা করবে না। পুরোপুরি স্বতন্ত্র বোর্ড পরিচালনা করবে। অর্থ উপদেষ্টার মতে, নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা গ্রহণকারী মো. শাফায়েত আলমকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ তারা অবৈধভাবে এটি দখল করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক যার নামে মামলা করেছে তাকেই আবার নগদের সিইও করা হয়েছে- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। তবে সরকার তা মানবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তার (সাফায়েত আলমের) বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তা চলমান। তাহলে কি ডাক বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরোধ সৃষ্টি হবে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোনো বিরোধ হবে না।
গভর্নর বলেন, তার (সাফায়েত আলমের) সিইও পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। অবশ্যই উনি জালিয়াতি করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী শুনানির দিন উপস্থিত হননি। এর কারণ কী? এমন প্রশ্নে আহসান এইচ মনসুর বলেন, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে জানানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক নিয়োগে আট সপ্তাহের জন্য যে, স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল হাতে লেখা।
এর আগে গতকাল শনিবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, নগদের আগের বোর্ডে যারা ছিলেন তারা বিপুল আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কোটি কোটি জনগণের সম্পৃক্ততা আছে এবং শত শত কোটি টাকার আমানত এখানে জড়িত- তাই বাংলাদেশ ব্যাংক সাময়িক প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়।
আরিফ হোসেন খান বলেন, নগদে অর্থ তছরুপের ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তাঁদের মধ্যে একজন আসামিকে প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হয়। তাঁকে নগদের পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেয়নি, নিয়োগ দিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান নির্বাহী। তাঁরা দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের সব ধরনের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেন। ফলে গ্রাহকেরা ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন। এ জন্য দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। ১৯ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।