বেশির ভাগ হজযাত্রী তামাত্তু হজ করেন। এক ইহরামে ওমরাহ শেষ করে আলাদা ইহরাম করে হজ করাকে তামাত্তু বলে।
১. ওমরাহর ইহরাম (ফরজ)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে গোসল বা অজু করে নিতে হবে। মিকাত অতিক্রমের আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরুন, অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন। শুধু ওমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.
২. ওমরাহর তাওয়াফ (ফরজ)
অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাঁ কাঁধের ওপর রাখাকে ‘ইজতিবা’ বলে। হাজরে আসওয়াদ সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান (ডান পাশে তাকালে সবুজ বাতিও দেখতে পাবেন)। এরপর দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন। তারপর ডানে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে। এরপর হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলুন। পরে হাত ছেড়ে দিন এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে থাকুন, যাতে পবিত্র কাবাঘর পূর্ণ বাঁয়ে থাকে। পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা সুন্নত । ‘রমল’ অর্থ বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।
রুকনে ইয়ামেনিকে সম্ভব হলে শুধু হাতে স্পর্শ করুন। চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার, ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আযিযু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন’ বলুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন। পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। হাতে সাত দানার তসবিহ অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে সাত চক্কর ভুল হবে না। এ সময় মনে যেই দোয়া, সুরা, আয়াত মনে আসে, তা দিয়ে দোয়া করবেন। কারণ, এটা দোয়া কবুলের সময়।
আরও পড়ুনহজযাত্রীদের টিকা গ্রহণে লাগবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট০৮ এপ্রিল ২০২৫৩. তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব)
মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে বা মসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করুন। মনে রাখবেন, এটা দোয়া কবুলের সময়। এরপর মন ভরে জমজমের পানি পান করুন।
৪. ওমরাহর সাঈ (ওয়াজিব)
সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত) কাবা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈয়ের নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মধ্যে [এটা সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (আ.) পানির জন্য দৌড়েছিলেন] একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হলো। মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে দোয়ার মতো করে হাত তুলে তাকবির পড়ুন এবং আগের মতো চলে সেখান থেকে সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হলো। এভাবে সপ্তম চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ করুন। প্রতি চক্করে সাফা ও মারওয়াতে হাত তুলে দোয়া করুন।
৫. হলক করা (ওয়াজিব)
পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে সম্পূর্ণ মাথা ন্যাড়া করবেন। তবে মাথার চুল ছাঁটতেও পারেন। নারী হলে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক কড় পরিমাণ কাটতে হবে।
এ পর্যন্ত ওমরাহর কাজ শেষ
হজের ইহরাম না বাঁধা পর্যন্ত ইহরামের আগের মতো সব কাজ করতে পারবেন।
আরও পড়ুনমক্কার জমজম কূপের উৎপত্তি০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৬. হজের ইহরাম (ফরজ)
হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহর নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছে যাবেন।
৭. মিনায় অবস্থান (সুন্নত)
৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করুন।
৮. আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৯ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন। মসজিদে ‘নামিরা’য় উভয় নামাজ জামাতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করুন।
আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার কাছ থেকে দূরে থাকে, তাহলে সেখানেই অবস্থান করবেন। নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ সুবিধামতো আলাদাভাবে আদায় করুন। হজের কোনো বিষয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলে ঝগড়া করবেন না। মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওনা হোন।
৯. মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান এবং এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করুন। এখানেই রাত যাপন করুন (এটি সুন্নত)। ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করুন (এটি ওয়াজিব)। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল (অপারগ) ও নারীদের বেলায় এটা অপরিহার্য নয়। রাতে ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করুন। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুনসহজ ওমরাহ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫১০. কঙ্কর মারা (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।
১১. কোরবানি করা (ওয়াজিব)
১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পরই কেবল কোরবানি নিশ্চিত পন্থায় আদায় করুন। কোরবানির পরই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে মাথা ন্যাড়া (হলক) করুন (ওয়াজিব)। তবে চুল ছোটও করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে: কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা জরুরি ।
১২. তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)
১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম। তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে জিয়ারত করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।
১৩. সাঈ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চক্কর। এভাবে সাতটি চক্কর সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর চক্করগুলো হবে)।
১৪. কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন তিন (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) করতে হবে। ১১-১২ জিলহজ দুপুর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু। ভিড় এড়ানোর জন্য আসর নামাজের পর অথবা সুবিধাজনক সময়ে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে—প্রথমে ছোট, মধ্যম, তারপর বড় শয়তানকে। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করুন। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।
আরও পড়ুন বাংলাদেশি হজযাত্রীর ইন্তেকাল হলে কী হয়০১ জুলাই ২০২৪১৫. মিনায় রাতযাপন
মিনায় অবস্থানরত দিনগুলোয় (১০ ও ১১ জিলহজ) মিনাতেই রাত যাপন করুন। আর যদি ১৩ তারিখ ‘রমি’ (কঙ্কর ছুড়ে মারা) শেষ করে ফিরতে চান (সুন্নত), তবে ১২ তারিখ রাত যাপন করুন।
১৬. মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতেই হবে, এটা ঠিক নয়। তবে সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম।
১৭. বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়।
আরও পড়ুনমক্কায় ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা২৫ জুন ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় অবস থ ন দ য় কর ন ম রওয় য় হজয ত র স ন নত ন কর ন র জন য শ ষ কর করব ন র সময় ইহর ম ওমর হ
এছাড়াও পড়ুন:
কবরের ৩ প্রশ্ন ও ইসলামের ৩ মূলনীতি
আমরা মুসলিম। ইসলাম আমাদের ধর্ম, এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের ধর্মের তিনটি মূলনীতি, যেগুলো কবরে আমাদের প্রশ্ন করা হবে, সেগুলো কি আমরা সবাই ভালোভাবে জানি?
এই তিন মূলনীতি জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যকীয়। কবরে ফেরেশতা মুনকার ও নাকিরের প্রশ্নগুলোই আমাদের ধর্মের অন্যতম ভিত্তি।
কবরের তিনটি প্রশ্নমৃত্যুর পর কবরে প্রশ্নকারী ফেরেশতা মুনকার ও নাকির তিনটি মৌলিক প্রশ্ন করবেন—
১. তোমার প্রতিপালক কে?
২. তোমার ধর্ম কী?
৩. তোমার নবী কে?
বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুজন ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, “তোমার প্রতিপালক কে?” সে বলে, “আমার প্রতিপালক আল্লাহ।” তাঁরা প্রশ্ন করেন, “তোমার ধর্ম কী?” বলে, “আমার ধর্ম ইসলাম।” তাঁরা আবার প্রশ্ন করেন, “তোমাদের মধ্যে প্রেরিত এই ব্যক্তি কে?” সে বলে, “তিনি আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)।” তারপর তাঁরা বলেন, “তুমি কীভাবে জানলে?” সে বলে, “আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাঁর ওপর ইমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।”’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৫৩)
যে বান্দা এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে, সে কবরে শান্তি পাবে। আর যে ভুল উত্তর দেবে, সে কবরের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন।
ইসলামের তিনটি মূলনীতিইসলামের তিনটি মূলনীতি হলো—
১. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে জানা ও চেনা।
২. ইসলাম সম্পর্কে বিশদভাবে জানা।
৩. আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে জানা।
আরও পড়ুনকবর জিয়ারতে কী করব, কী করব না১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫১. প্রথম মূলনীতি: রব সম্পর্কে জানাইসলামের প্রথম মূলনীতি হলো আমাদের রব, আল্লাহ তাআলাকে সঠিকভাবে জানা ও চেনা। ‘রব’ অর্থ সবকিছুর মালিক, স্রষ্টা ও পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী উপাস্য। আল্লাহই আমাদের ও সমগ্র বিশ্বকে তাঁর দয়ায় সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিপালন করছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহরই জন্য, যিনি বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ১)
আল্লাহকে কীভাবে চিনব
আমরা আল্লাহকে তাঁর নিদর্শন ও সৃষ্টিরাজির মাধ্যমে চিনতে পারি। কোরআনে আকাশ, পৃথিবী, সূর্য, চাঁদ, দিন-রাতের মতো অটল ও পরিবর্তনশীল সৃষ্টির কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৪)
তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৭)
আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন কেবল তাঁর ইবাদত ও দাসত্বের জন্য। তিনি বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬)
এ দাসত্বের মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ, অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা ও তাঁর আনুগত্য করা।
প্রথম ফরজ
আল্লাহর ওপর ইমান আনা ও তাগুত (আল্লাহবিরোধী শক্তি) অস্বীকার করা আমাদের ওপর প্রথম ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, সে সুদৃঢ় হাতল ধরেছে, যা ভাঙার নয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬)
এখানে ‘সুদৃঢ় হাতল’ বলতে কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই) বোঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয় মূলনীতি: নবী সম্পর্কে জানাইসলামের দ্বিতীয় মূলনীতি হলো আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিশদভাবে জানা। তিনি কুরাইশ গোত্রের বংশোদ্ভূত, তাঁর বাবা আবদুল্লাহ ও দাদা আবদুল মুত্তালিব। তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন।
তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এর মধ্যে ৪০ বছর ছিল নবুয়ত–পূর্ব সময়। তিনি তাঁর আমলকে শিরকের কলুষতা থেকে পবিত্র রাখতে এবং প্রতিমা ও তার পূজারীদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুননেতৃত্ব গঠনে মহানবী (সা.)–র ৫ মূলনীতি২৮ আগস্ট ২০২৩রাসুল (সা.) ‘পড়ো’ শব্দের মাধ্যমে নবুওয়তপ্রাপ্ত হন। (সুরা আলাক, আয়াত: ১) এবং ‘হে চাদরাবৃত, উঠুন’ শব্দের মাধ্যমে রিসালাতপ্রাপ্ত হন। (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ১ থেকে ৭)
আল্লাহ তাঁকে মানুষকে শিরক থেকে ভীতি প্রদর্শন এবং তাওহিদের দিকে আহ্বানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে চাদরাবৃত, উঠুন, সতর্ক করুন। আপনার প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ১ থেকে ৭)
এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে—
‘উঠুন, সতর্ক করুন’—শিরক থেকে মানুষকে ভয় দেখান এবং তাওহিদের দিকে আহ্বান করুন।
‘আপনার প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করুন’—তাওহিদ প্রচার করুন।
‘আপনার পোশাক পবিত্র করুন’—আপনার আমলকে শিরকের কলুষতা থেকে মুক্ত রাখুন।
‘অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন’—প্রতিমা ও তার পূজারীদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করুন।
তিনি প্রথম ১০ বছর মক্কায় তাওহিদ প্রচার করেন। মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার পর তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
তৃতীয় মূলনীতি: ধর্ম সম্পর্কে জানাইসলাম আমাদের দ্বীন। আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-কে ইসলাম নিয়ে সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরণ করেছেন। তাঁর প্রতিটি নির্দেশ কথায় ও কাজে পালন করা এবং নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকা মুসলিমের কর্তব্য।
ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫)
তিনি আরও বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ৭)
আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ হলো এককভাবে তাঁর ইবাদত করা, যাঁর কোনো শরিক নেই।
আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিষেধ হলো তাঁর ইবাদতে কাউকে শরিক করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তবে এর নিম্নপর্যায়ের গুনাহ ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি জান।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮, ১১৬)
শেষ কথাইসলামের তিনটি মূলনীতি—আল্লাহকে জানা, নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে জানা ও ইসলাম সম্পর্কে জানা আমাদের জীবনের ভিত্তি। এই মূলনীতিগুলো ভালোভাবে জানলে আমরা আল্লাহর ইবাদত সঠিকভাবে করতে পারব, রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ যথাযথভাবে পালন করতে আগ্রহী হব ও কবরের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ।
আমাদের প্রতিনিয়ত এই দোয়া পড়া উচিত।
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কবর।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৩৭৭)
আরও পড়ুনকেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ১৮ জুন ২০২৫