Prothomalo:
2025-07-03@19:23:02 GMT

তামাত্তু হজের নিয়ম

Published: 18th, May 2025 GMT

বেশির ভাগ হজযাত্রী তামাত্তু হজ করেন। এক ইহরামে ওমরাহ শেষ করে আলাদা ইহরাম করে হজ করাকে তামাত্তু বলে।

১. ওমরাহর ইহরাম (ফরজ)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে গোসল বা অজু করে নিতে হবে। মিকাত অতিক্রমের আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরুন, অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন। শুধু ওমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.

..) পড়ে নিন। 

২. ওমরাহর তাওয়াফ (ফরজ)

অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাঁ কাঁধের ওপর রাখাকে ‘ইজতিবা’ বলে। হাজরে আসওয়াদ সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান (ডান পাশে তাকালে সবুজ বাতিও দেখতে পাবেন)। এরপর দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন। তারপর ডানে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে। এরপর হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলুন। পরে হাত ছেড়ে দিন এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে থাকুন, যাতে পবিত্র কাবাঘর পূর্ণ বাঁয়ে থাকে। পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা সুন্নত । ‘রমল’ অর্থ বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।

রুকনে ইয়ামেনিকে সম্ভব হলে শুধু হাতে স্পর্শ করুন। চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার, ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আযিযু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন’ বলুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন। পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। হাতে সাত দানার তসবিহ অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে সাত চক্কর ভুল হবে না। এ সময় মনে যেই দোয়া, সুরা, আয়াত মনে আসে, তা দিয়ে দোয়া করবেন। কারণ, এটা দোয়া কবুলের সময়।

আরও পড়ুনহজযাত্রীদের টিকা গ্রহণে লাগবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট০৮ এপ্রিল ২০২৫

৩. তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব)

মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে বা মসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করুন। মনে রাখবেন, এটা দোয়া কবুলের সময়। এরপর মন ভরে জমজমের পানি পান করুন।

৪. ওমরাহর সাঈ (ওয়াজিব)

সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত) কাবা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈয়ের নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মধ্যে [এটা সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (আ.) পানির জন্য দৌড়েছিলেন] একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হলো। মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে দোয়ার মতো করে হাত তুলে তাকবির পড়ুন এবং আগের মতো চলে সেখান থেকে সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হলো। এভাবে সপ্তম চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ করুন। প্রতি চক্করে সাফা ও মারওয়াতে হাত তুলে দোয়া করুন।

৫. হলক করা (ওয়াজিব)

পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে সম্পূর্ণ মাথা ন্যাড়া করবেন। তবে মাথার চুল ছাঁটতেও পারেন। নারী হলে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক কড় পরিমাণ কাটতে হবে। 

 এ পর্যন্ত ওমরাহর কাজ শেষ 

হজের ইহরাম না বাঁধা পর্যন্ত ইহরামের আগের মতো সব কাজ করতে পারবেন।

আরও পড়ুনমক্কার জমজম কূপের উৎপত্তি০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৬. হজের ইহরাম (ফরজ)

হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহর নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছে যাবেন।

৭. মিনায় অবস্থান (সুন্নত)

৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করুন।

৮. আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৯ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন। মসজিদে ‘নামিরা’য় উভয় নামাজ জামাতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করুন।

আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার কাছ থেকে দূরে থাকে, তাহলে সেখানেই অবস্থান করবেন। নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ সুবিধামতো আলাদাভাবে আদায় করুন। হজের কোনো বিষয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলে ঝগড়া করবেন না। মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওনা হোন।

 ৯. মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)

আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান এবং এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করুন। এখানেই রাত যাপন করুন (এটি সুন্নত)। ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করুন (এটি ওয়াজিব)। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল (অপারগ) ও নারীদের বেলায় এটা অপরিহার্য নয়। রাতে ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করুন। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুনসহজ ওমরাহ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

১০. কঙ্কর মারা (প্রথম দিন)

১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।

১১. কোরবানি করা (ওয়াজিব)

১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পরই কেবল কোরবানি নিশ্চিত পন্থায় আদায় করুন। কোরবানির পরই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে মাথা ন্যাড়া (হলক) করুন (ওয়াজিব)। তবে চুল ছোটও করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে: কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা জরুরি ।

১২. তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)

১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম। তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে জিয়ারত করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।

১৩. সাঈ (ওয়াজিব)

তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চক্কর। এভাবে সাতটি চক্কর সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর চক্করগুলো হবে)।

১৪. কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)

১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন তিন (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) করতে হবে। ১১-১২ জিলহজ দুপুর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু। ভিড় এড়ানোর জন্য আসর নামাজের পর অথবা সুবিধাজনক সময়ে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে—প্রথমে ছোট, মধ্যম, তারপর বড় শয়তানকে। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করুন। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।

আরও পড়ুন বাংলাদেশি হজযাত্রীর ইন্তেকাল হলে কী হয়০১ জুলাই ২০২৪

১৫. মিনায় রাতযাপন

মিনায় অবস্থানরত দিনগুলোয় (১০ ও ১১ জিলহজ) মিনাতেই রাত যাপন করুন। আর যদি ১৩ তারিখ ‘রমি’ (কঙ্কর ছুড়ে মারা) শেষ করে ফিরতে চান (সুন্নত), তবে ১২ তারিখ রাত যাপন করুন।

১৬. মিনা ত্যাগ

১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতেই হবে, এটা ঠিক নয়। তবে সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম।

১৭. বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়।

আরও পড়ুনমক্কায় ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা২৫ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় অবস থ ন দ য় কর ন ম রওয় য় হজয ত র স ন নত ন কর ন র জন য শ ষ কর করব ন র সময় ইহর ম ওমর হ

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াম চমস্কির দৃষ্টিতে ইসরায়েলি হামলা

নোয়াম চমস্কিকে শুধু ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে চেনা যথেষ্ট নয়। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিশ্বমানবতার বিবেক হয়ে উঠেছেন বহু আগেই। গত শতকের ষাটের দশক থেকে সক্রিয় ও স্পষ্টভাষী এই রাজনৈতিক সমালোচক বরাবরই প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, সাম্রাজ্যবাদ, যুদ্ধ ও সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাত নিয়ে। চমস্কি মনে করেন, ‘ফর দ্য পাওয়ারফুল, ক্রাইমস আর দোজ দ্যাট আদারস কমিট’। ন্যায়ের সংজ্ঞা যদি পক্ষবিশেষ নির্ধারণ করে, তাহলে তা আর ন্যায় থাকে না, বরং হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির বাহন।

চমস্কির মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এক প্রকার বিকৃত নৈতিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর জন্য এক সেট নীতি, আর দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর জন্য আরেক। এই দ্বিচারিতা প্রবলভাবে প্রতিফলিত ইরান-ইসরায়েল সংকটে। একদিকে ইসরায়েল নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তি হিসেবে গোপনে রাখে এবং পশ্চিমা বিশ্ব তার অস্ত্রভান্ডার নিয়ে নীরব। অপরদিকে ইরান শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করলেও তাকে ‘বিশ্বশান্তির হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। চমস্কি বলেন, আমরা যখন ‘সন্ত্রাস’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করি, তখন সতর্ক হওয়া দরকার যে কারা এটা সংজ্ঞায়িত করছে।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শত্রুতা হঠাৎ তৈরি হয়নি। চমস্কি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে পশ্চিমা মদদপুষ্ট শাহকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এই হস্তক্ষেপ ইরানিদের মনে গভীর রাজনৈতিক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব কেবল শাসক পরিবর্তন নয়; বরং ছিল ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার নামান্তর। চমস্কির মতে, বিপ্লব-পরবর্তী ইরান স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে গিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের শত্রুতে পরিণত হয়।
এই শত্রুতার সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে ওঠে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। ২০১৫ সালের ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ চুক্তি চমস্কির দৃষ্টিতে ছিল কূটনৈতিক সমঝোতার ইতিবাচক নজির। ইরান এই চুক্তির আওতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করে, পরিদর্শকদের ঢুকতে দেয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মেনে নেয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন একতরফা চুক্তিটি বাতিল এবং ইরানকে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ঘটনাকে চমস্কি বলেন ‘কৃত্রিম সংকট তৈরির ধ্রুপদি উদাহরণ’। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রই প্রথমে চুক্তি ভঙ্গ করে সৃষ্ট সংকটের দায় চাপায় ইরানের ওপর। আন্তর্জাতিক মিডিয়া সেই বয়ানকেই নিরীক্ষাহীনভাবে গ্রহণ করে।

চমস্কি আরও দেখান, কেবল নিষেধাজ্ঞা আরোপই নয়; ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ইরানে সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে; ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে। এমনকি সামরিক হামলার হুমকিও দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। অথচ পশ্চিমা প্রচারে ঘটনাগুলো আত্মরক্ষার পদক্ষেপ বলে বৈধতা পায়। চমস্কির ভাষায়, মার্কিন নীতির মৌল ভিত্তিই হলো– নিজেরা করলে বৈধ, অন্য কেউ করলে অপরাধ।
ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার আন্তর্জাতিকভাবে ওপেন সিক্রেট হলেও যুক্তরাষ্ট্র কখনও সেটি স্বীকার করে না। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কোনো রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি-এনপিটি স্বাক্ষর না করলে তাকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বেআইনি। ইসরায়েল এনপিটি স্বাক্ষর করেনি। তাই পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা বন্ধ করতে হয়। আইনি ফাঁক এড়াতে চমস্কির ভাষায়– ‘দ্য পলিসি ইজ: ডোন্ট আস্ক, ডোন্ট টেল’।

চমস্কির মতে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য অন্যতম কার্যকর ও ন্যায্য উপায় হতে পারে গোটা অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত ঘোষণা। ইরান একাধিকবার এই প্রস্তাব দিয়েছে; আরব রাষ্ট্রগুলোরও দীর্ঘদিনের দাবি; জি৭৭ গোষ্ঠীর দেশগুলোও এ প্রস্তাবকে সমর্থন করে। কিন্তু এ উদ্যোগ বারবার ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরোধিতায়। চমস্কির প্রশ্ন, যদি বিশ্বশান্তিই উদ্দেশ্য হয়, তবে কেন দুই রাষ্ট্রই পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে বাধা দিচ্ছে?
‘ন্যায্য যুদ্ধতত্ত্ব’ সম্পর্কে চমস্কির মত– এটি এক ধরনের মতামতভিত্তিক কাঠামো, যা বাস্তবে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি মনে করেন, আফগানিস্তান বা ইরাক যুদ্ধকে পশ্চিমা বয়ানে ‘ন্যায্য’ বলা হলেও আসলে আগ্রাসনেরই পরিপাটি কেস স্টাডি।

ইসরায়েল যদি ইরানে হামলা চালায়; পশ্চিমা বয়ানে সেটা ‘প্রি-এম্পটিভ’ বা কল্পিত বিপদের আশঙ্কা থেকে আঘাত। অথচ জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আত্মরক্ষা কেবল তখনই বৈধ, যখন আগ্রাসন বাস্তবে সংঘটিত হয়। চমস্কির মতে, প্রি-এম্পটিভ আঘাত প্রতিরক্ষা নয়; আগ্রাসন।
ইরান বর্তমানে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক অবরোধ, সাইবার আক্রমণ ও সামরিক হুমকির মুখে। চমস্কি প্রশ্ন করেন– ‘তাহলে কি ইরানেরও অধিকার আছে পাল্টা প্রতিরোধমূলক হামলা চালানোর?’ তাৎক্ষণিক সেটি অগ্রহণযোগ্য আখ্যা পায়। এই অসামঞ্জস্যই চমস্কির মতে আধুনিক নীতিবোধের বিপর্যয়। তাঁর মতে, যদি ইসরায়েলের উদ্বেগ বৈধ হয়, তবে ইরানের উদ্বেগও সমানভাবে ন্যায্য।
চূড়ান্তভাবে চমস্কি যুদ্ধ নয়; শান্তি ও সংলাপের পথকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, হয় আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করতে হবে, না হয় আমরাই বিলুপ্তির মুখোমুখি হবো। তাঁর অবস্থান, সব রাষ্ট্রকেই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে– বন্ধু হোক বা শত্রু। এই অবস্থান নিছক নীতিকথা নয়; বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বের প্রতি জরুরি আবেদন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত রাজনৈতিক হলেও গভীর নৈতিক সংকটও বটে। এই সংকটে কেবল পারমাণবিক অস্ত্র নয়, সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্ন জড়িত। চমস্কি বিশ্বাস করেন, সত্যিকারের শান্তি তখনই সম্ভব, যখন আমরা দ্বিচারিতা পরিহার করে প্রত্যেক মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও জীবনের গুরুত্ব সমানভাবে বিবেচনা করব; হোক সে ইরানি কিংবা ইসরায়েলি।

সাঈফ ইবনে রফিক: কবি ও সাংবাদিক
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ