এশিয়ার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে আরও পিছিয়ে আছেন নারীরা। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার বড় কারণ ক্রয়ক্ষমতা, সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাব। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে পাঁচ বছরে লিঙ্গবৈষম্য কমেছে ২ শতাংশ।

মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) চলতি মাসে ‘দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি এ মাসে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১৫টি দেশের ওপর জরিপ করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে জিএসএমএ। দেশগুলো হলো মিসর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সেনেগাল, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, তানজানিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো।

জিএসএমএ ২০২৪ সালে এসব দেশে জরিপ চালায়। জরিপে ভারত বাদে বাকি ১৪টি দেশে ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের এক হাজার নারী ও পুরুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ভারতে দুই হাজার জনের ওপর জরিপ চালানো হয়।

জিএসএমএর গত বছরের প্রতিবেদনেও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট–সেবা গ্রহণে বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে ছিলেন (২৪ শতাংশ)। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ব্যবধানও বেশি ছিল। সে সময় ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের পিছিয়ে থাকার বড় কারণ হিসেবে শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাবের কথা বলা হয়েছিল।

স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্র

জিএসএমএ বলেছে, বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬৮ শতাংশ নারী মুঠোফোনের মালিক। এখানে লিঙ্গবৈষম্যে পাকিস্তান শুধু পিছিয়ে। পাকিস্তানে ৯৩ শতাংশ পুরুষ ও ৫৮ শতাংশ নারী মুঠোফোনের মালিক।

দেশের ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ শতাংশ নারীর স্মার্টফোন আছে। জরিপে উল্লেখিত দেশগুলোর মধ্যে এশিয়ায় বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম নারী ও পুরুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।

মুঠোফোনে ইন্টারনেট–সেবা গ্রহণেও এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। দেশের ৪২ শতাংশ পুরুষ ও ২৬ শতাংশ নারী মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গত পাঁচ বছরে দেশে মুঠোফোনের মালিকানায় ৪ শতাংশ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ২ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, রুয়ান্ডা, উগান্ডায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ফিচার ফোন (বাটন ফোন নামে পরিচিত) ব্যবহার করেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ পুরুষ ও ৭৩ শতাংশ নারী ব্যবসার কাজে মুঠোফোন ব্যবহার করেন। এ সূচকে বাংলাদেশ জরিপে অংশ নেওয়া এশিয়ার বাকি চারটি দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।

এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিনেট ও আই-সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বাংলাদেশে নারীদের মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কম দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডিজিটাল দক্ষতার বিষয় তো আছেই।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা

জিএসএমএ বলছে, বাংলাদেশ, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, তানজানিয়া ও উগান্ডায় মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা। এ ছাড়া সাক্ষরতা, ডিজিটাল দক্ষতা, ডেটা সহজলভ্য না হওয়া এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ৭৮ শতাংশ নারী মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। কিন্তু তাঁদের প্রায় অর্ধেক নারী ও পুরুষ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এই সচেতনতায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে শুধু ভারত। দেশটিতে ৭৪ শতাংশ পুরুষ ও ৬২ শতাংশ নারী মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশে যাঁরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট সম্পর্কে জানেন কিন্তু ব্যবহার করেন না, তাঁদের কাছে ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতা, ক্রয়ক্ষমতা, প্রাসঙ্গিকতা এবং নিরাপত্তাশঙ্কা।

আরও পড়ুনদেশে সবার জন্য কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা নেই০২ এপ্রিল ২০২৫

আর বাংলাদেশে যাঁরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁদের আরও ব্যবহার বাড়ানোর প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা, নিরাপত্তাশঙ্কা এবং সংযোগ–অভিজ্ঞতা।

মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের ক্রয়ক্ষমতা প্রসঙ্গে অনন্য রায়হান বলেন, স্মার্টফোন সহজলভ্য করতে কিস্তিতে ফোন কেনার সুবিধা চালু করতে হবে। সরকার ডেটার খরচ কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। কিন্তু দেশের ইন্টারনেট–ব্যবস্থার যে কাঠামো, সেখানে পরিবর্তন এনে সঠিক প্রাইস রেগুলেশন ঠিক করতে হবে যেন তা গ্রাহকবান্ধব হয়। এ ছাড়া সরকারকে এই খাতে কর ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ, এটা এখানে বড় প্রতিবন্ধকতা।

জরিপ করা দেশগুলোতে গ্রামে পুরুষের চেয়ে নারীরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট সম্পর্কে বেশি জানার পরও তা ব্যবহারের সুযোগ কম। জিএসএমএ বলেছে, বাংলাদেশের ৫৪ শতাংশ গ্রামের নারীরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট সম্পর্কে জানার পরও তা ব্যবহারের সুযোগ পান না।

প্রতিবেদনে জিএসএমএ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের বাধার আরও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতার বিষয় উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশে ১৭ শতাংশ পুরুষ ও ৩০ শতাংশ নারী পড়তে ও লিখতে না পারার সমস্যার কথা উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে। এরপর নারী ও পুরুষ—উভয়ের কাছেই মুঠোফোনে ইন্টারনেটের ডেটা খরচ ও মুঠোফোনের দামের প্রতিবন্ধকতার কথা বেশি বলা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ শতাংশ পুরুষ ও ৬ শতাংশ নারী বলেছেন, ইন্টারনেট তাঁদের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়।

এ ছাড়া যাঁরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁদের ব্যবহার আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে ২০ শতাংশ পুরুষ ও ১৬ শতাংশ নারী ডেটার খরচের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ১৬ শতাংশ পুরুষ ও ১৫ শতাংশ নারী ইন্টারনেটের ধীরগতির কথা বলেছেন।

দেশে যাঁরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁদের সাপ্তাহিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইনে ভিডিও দেখা, মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার, অনলাইন বিনোদন এবং ভিডিও কল। সবচেয়ে কম হচ্ছে কৃষিবিষয়ক তথ্য, অনলাইনে চাকরি খোঁজা, অনলাইনে কিছু অর্ডার করা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি সেবা ও অনলাইনে আয় করা।

ইন্টারনেটের অর্থবহ ব্যবহার প্রসঙ্গে ডিনেট ও আই-সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান বলেন, বাজারে নানা উদ্যোগ আছে। কিন্তু তার কোনটা কাজে লাগে আর কোনটা লাগে না, সে বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। সহজলভ্য সেবা ও কনটেন্ট চালু করতে হবে। ডিজিটাল দক্ষতা বাড়ানোয় আরও উদ্যোগ নিতে হবে।

আরও পড়ুনদেশের ৭০% পরিবার এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী০৬ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র স জ এসএমএ উল ল খ আরও প সবচ য় ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা করার জন্য রোববার কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের শেষদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি আলোচকদের নির্দেশ দিয়েছেন—  তারা যাতে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে।

তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় হামাস যে পরিবর্তনের শর্ত দিয়েছে, সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

গত শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে এবং তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

তবে একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এমন কিছু সংশোধন চেয়েছে যার মধ্যে একটি হলো— স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলেও নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন করে কোনো হামলা হবে না।

গাজার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালের বরাতে জানানো হয়, আল-মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুগুলোর ওপর বোমা হামলায় এক চিকিৎসক ও তাঁর তিন সন্তানসহ সাতজন নিহত হন।

এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দুই মার্কিন কর্মী খান ইউনিস এলাকায় একটি গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। যদিও হামাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৩৩৮ জন নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ