দৃশ্যগত শিল্পসত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
Published: 18th, May 2025 GMT
আদিম যুগ থেকেই আমরা শিল্পে বাঁচি এবং আমাদের চারপাশে সবদিকেই আমরা শিল্পের উৎস কিংবা শিল্পের প্রয়োগ দেখতে পাই। তবে একবিংশ শতাব্দির এই পর্যায়ে এসে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিন্তা করতে ও চিন্তার প্রয়োগ করতে শুরু করেছে, তখন তা আমাদের ভাবায়—শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। মানুষের চেতনা বা চিন্তা কৌশল কি তবে এবার প্রয়োজনের অতীত কিংবা অপ্রচলিত হতে চললো? এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে হলে আমাদের বর্তমান বাস্তবতাই যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে একটু অতীতে ফিরে গিয়ে আবার বর্তমানের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে।
হোমো স্যাপিয়েন্সের উদ্ভব ঘটে আজ থেকে প্রায় বিশ তিরিশ লাখ বছর আগে। এরমধ্যে মস্তিষ্কের নানান পরিবর্তন ও অন্যান্য হোমিনিডের সাথে পার্থক্যগুলো প্রকট হতে থাকে যার ফলাফল আজকের আধুনিক যুগের মানুষ। মানুষের আজকের বিবর্তিত রূপ হচ্ছে ভাষার আবিষ্কার যা আমাদের মস্তিষ্কের বাম অংশটিকে সক্রিয় ও যুক্তি দিয়ে ভাবতে শেখায়। ভাষার পরই যা লক্ষ করা যায় তা হলো শিল্পসত্তা। বলা হয়ে থাকে, আমাদের আবেগ-অনুভূতি বা শিল্পসত্তা নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের ডান অংশের কারণে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শিল্পসত্তার শুরুটা কোথায়? তা বুঝতে আমাদেরকে আপার প্যালিওলিথিক যুগ কিংবা প্রস্তর যুগের শেষভাগের দিকে ফিরে তাকাতে হবে।
সবচেয়ে প্রাচীন শিল্পের চিহ্ন পাওয়া যায় চল্লিশ হাজার বছর আগে যা ছিল হাড়ের তৈরি একটি বাঁশি। তারপর দেখা যায় বিভিন্ন গহনা বা ট্রাম্পেটসহ অন্যান্য কিছু বাদ্যযন্ত্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো দৃশ্যগত শিল্পটা কোথায়? একত্রিশ হাজার বছর আগে আমরা দেখতে পাই ফ্রান্সের শ্যাভেট গুহায় মানুষের আঁকা গুহাচিত্র। ল্যাসক্যক্স গুহায় দেখা যায় ছয়শটিরও বেশি গুহাচিত্র যাদের বয়স আঠারো হাজার বছর। কাছাকাছি সময়ে ভাস্কর্য তৈরির নিদর্শন রয়েছে যার মধ্যে পাথরে করা ভিনাসের ভাস্কর্য, বিভিন্ন নারী ও পুরুষের অবয়ব উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীকালে প্রাচীন মিশরীয়, গ্রিক ও রোমান শিল্পে প্রতীকবাদ ও বাস্তবতার মিশ্রণের শিল্পকর্ম দেখা যায়। মধ্যযুগে ইউরোপীয় শিল্পধারা অধিকাংশই ধর্মীয় বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভরশীল থাকলেও রেনেসাঁ যুগে (১৪শ–১৭শ শতক) একটি দৃশ্যগত শিল্পচর্চায় বিপ্লব ঘটে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এবং মাইকেলেঞ্জেলো-র মতো শিল্পীদের মাধ্যমে যারা বাস্তবতা, মানব দেহবিদ্যা এবং দৃষ্টিকোণের (দূরত্বের অনুভূতি) নিখুঁত ব্যবহারে দৃশ্যগত শিল্পকলা বদলে দেন। পরে বারোক (ড্রামাটিক এবং আবেগপ্রবণ) ও রোকোকো (কল্পনাপ্রবণ এবং বিলাসিতাময়) ধারার উত্থান ঘটান।
তাহলে এখন ভাবার বিষয় মানুষ কেন শিল্পচর্চা করতে শুরু করল? কেন মানুষ বাকি প্রাণীদের মতো শুধু খাদ্য ও নিরাপত্তার চাহিদা মিটিয়েই খ্যান্ত হলো না? এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে আমাদেরকে ভাবতে হবে মানুষের কগ্নিশন বা চিন্তাপ্রক্রিয়া বা চিন্তা কৌশলের দিক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা সেই পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারবে আজকাল কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে।১৯শ শতকে ইম্প্রেশনিজম আবির্ভূত হয়, যেখানে শিল্পীরা আলো ও মুহূর্তের অনুভূতিকে ধরার চেষ্টা করেন এবং এক্সপ্রেশনিজম আত্মপ্রকাশ করে, যা অভ্যন্তরীণ আবেগ ও মানসিক অবস্থাকে চিত্রিত করে শিল্পের মাধ্যমে। আধুনিক শিল্পকলা (১৮৭০–১৯৭০) শিল্পের সংজ্ঞা ভেঙে নতুন রূপ দেয় যেখানে কিউবিজম, স্যাররিয়ালিজম ও অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমের মতো চিত্রকলার ধারা দেখতে পাওয়া যায়। পরে, উত্তরাধুনিক শিল্পকলার (১৯৭০-এর পর) উদ্ভবের পর শিল্পের উচ্চ আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ব্যঙ্গ, বহুত্ব ও সংস্কৃতির মিশ্রণকে একীভূত করতে চায়। দৃশ্যগত শিল্পকলার এই ইতিহাস দেখায়, কীভাবে মানুষ বারবার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে শিল্পের সীমা প্রসারিত করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। তাহলে এখন ভাবার বিষয় মানুষ কেন শিল্পচর্চা করতে শুরু করল? কেন মানুষ বাকি প্রাণীদের মতো শুধু খাদ্য ও নিরাপত্তার চাহিদা মিটিয়েই খ্যান্ত হলো না?
এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে আমাদেরকে ভাবতে হবে মানুষের কগ্নিশন বা চিন্তাপ্রক্রিয়া বা চিন্তা কৌশলের দিক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা সেই পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারবে আজকাল কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে। যে ভাষার আবিষ্কার আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনকে সর্বাধিক এগিয়ে দিয়েছে যা থেকেই উদ্ভব হয়েছে চিন্তাসত্তার। চিন্তাসত্তা বা অনুভূতি প্রকাশের ইচ্ছাই আমাদের মধ্যে গল্প করা বা গল্প বলার প্রয়োজন এবং আগ্রহ তৈরি করে। এর সঙ্গে সামাজিকতার একটি বড় যোগ রয়েছে। মানুষ জন্মগতভাবেই সামাজিক গোষ্ঠী বা দলের মধ্যে থেকে এসেছে এবং বিবর্তনগতভাবে সেই চাহিদা কালেক্টিভ আনকশাসনেস বা যৌথ অবচেতনের মধ্যে বসবাস করে। এর সঙ্গে ভাষার যোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে ভাষাজ্ঞান আরও অগ্রসর হয় এবং এর সঙ্গে গল্প বলতে চাওয়ার প্রবণতাও। সৃষ্টিশীলতাই মানুষের অত্যন্ত স্বাভাবিক ও চিন্তা কৌশলগত প্রবণতা।
এবারে কথা বলা যাক দৃশ্যগত শিল্পকলা ও চিন্তা কৌশলের যোগসূত্র নিয়ে। রবার্ট সলসো তার বই কগ্নিনেশন অ্যান্ড দ্য ভিজ্যুয়াল আর্ট-এ বলেছেন, মানুষের চিন্তা কৌশল বা কগ্নিশনের সরাসরি প্রকাশ হচ্ছে দৃশ্যগত শিল্প। কারণ মানুষ শিশুকাল থেকে দেখতে শেখে এবং দেখা তার জীবনে ভবিষ্যৎ চিন্তাগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। দেখার মাধ্যমেই মানুষ অনুভব করে, অনুবাদ করে, মনে রাখে, কল্পনা করে এবং অনুভূতির প্রকাশ ঘটায়। মানুষের রং, আকার, আকৃতি, গঠন, গভীরতা এবং গতি অনুভব করার মাধ্যমে এবং গল্প বলতে চাওয়ার আগ্রহ থেকেই তৈরি হয় দৃশ্যগত শিল্পকলা যার সঙ্গে মস্তিষের ভিজ্যুয়াল করটেক্সের যোগ রয়েছে। এছাড়াও মানুষ ভীষণ রকমের স্মৃতিকাতর এবং স্মৃতিপ্রবণ—দৃশ্যগত বস্তু এবং চারপাশের প্রভাবের ব্যাপারে। এছাড়াও মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়বীয় যোগাযোগ সাহায্য করে মস্তিষ্কে চিত্র তৈরি করতে এবং তা অন্যদের কাছে প্রকাশের আগ্রহ থেকেই মানুষ আঁকে বা তৈরি করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাদেরকে কিছু মেশিন নিয়ে, যা মানুষকে অনুকরণ করে, সেসব মেশিনের দর্শনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে, অ্যালান টিউরিং-এর মতো বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একটি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে প্রথমদিককার প্রোগ্রামগুলো কিছু সফলতা দেখালেও, বাস্তব সমস্যার সমাধানে অক্ষমতার জন্য
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত দ শ যগত শ ল প অন ভ ত আম দ র প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
পেশোয়ারকে উড়িয়ে প্লে–অফে সাকিবের লাহোর
যারা জিতবে, তারা উঠবে প্লে-অফে। যারা হারবে, তারা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়বে। পিএসএলে লাহোর কালান্দার্স ও পেশোয়ার জালমির এমন সমীকরণ লড়াইটিকে ‘অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনাল’ বানিয়ে ফেলে। এমন এক ম্যাচ দিয়েই দুই বছর পর পাকিস্তান সুপার লিগে প্রত্যাবর্তন সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ককে নিয়েই আজ ম্যাচটি খেলেছে লাহোর কালান্দার্স। আর পেশোয়ার জালমিকে ২৬ রানে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে নিশ্চিত করেছে প্লে-অফ খেলা। অবশ্য প্রথম এলিমিনেটরে খেলতে হবে লাহোরকে।
দুই বছর পর পিএসএলে সাকিবের প্রত্যাবর্তন ম্যাচটি হতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছিল সংশয়। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ধূলি-ঝড় ও পরে বজ্র-বৃষ্টিতে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারেনি। আবহাওয়া শান্ত হওয়ার পর যখন খেলা শুরু হলো ম্যাচটি হয়ে গেছে ১৩ ওভারের।
টসে জিতে সাকিবের লাহোরকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পেশোয়ার। লাহোর ১৩ ওভারে করে ৮ উইকেটে ১৪৯ রান। রান তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো পেশোয়ার ১৩ ওভারে করতে পারে ৮ উইকেটে ১২৩ রান। সাতে নেমে ১৪ বলে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন ড্যানিয়েল স্যামস। নয়ে নেমে ১৪ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন আহমেদ দানিয়াল। সাকিব ২ ওভারে ১৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। এর আগে লাহোরের ওপেনার ফখর জামান ৩৬ বলে করেছেন সর্বোচ্চ ৬০ রান। সাকিব ব্যাটিংয়ে নামেন ১১তম ওভারে। তবে প্রথম বলেই আউট হয়ে গেছেন এক সময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
প্রথম বলেই বোল্ড হয়েছেন সাকিব আল হাসান