খুনিদের গ্রেপ্তার নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না এলে যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকি ছাত্রদলের
Published: 18th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর খুনিদের গ্রেপ্তার নিয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্পষ্ট বক্তব্য না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। খুনিদের গ্রেপ্তারে স্পষ্ট বক্তব্য ও সদিচ্ছা দেখা না গেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
শাহরিয়ারের হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ রোববার বিকেলে পৌনে দুই ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। সেখান থেকে এই হুমকি দেন তাঁরা। অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ এই নির্দলীয় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা লক্ষ করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর আজকের দিন পর্যন্ত আমাদেরকে আশ্বস্তই করতে পারেননি যে সাম্যর প্রকৃত খুনিদের ধরার জন্য তাঁদের কোনো প্রকার সদিচ্ছা রয়েছে কি না, বা তাঁদের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ রয়েছে কি না।’
এই হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী পারভেজ হত্যার পরও এই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁদের পরিবারের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিমূলক কোনো বাক্য আমরা শুনিনি।’
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রদলের যেসব নেতা-কর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সামান্যতম সহানুভূতির কোনো বক্তব্য দেননি। সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সামান্যতম সহমর্মিতা তিনি দেখাননি। আমরা তাঁর এ অবস্থানের নিন্দা জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যদি ছাত্রদল শাহবাগ চত্বর থেকে যমুনায় পদযাত্রা শুরু করে, এই পদযাত্রা রোখার ক্ষমতা কারও নেই। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যদি এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক এবং সদিচ্ছার অভাব আগামীতে আমরা লক্ষ করি, তাহলে ছাত্রদল যমুনায় যাবে এবং দাবি আদায় করেই বাসায় ফিরবে। আমরা যতক্ষণ চাইব, ততক্ষণ যমুনা অবরোধ করে রাখব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে যমুনাতে একদল আন্দোলন করলে তাদের পানি ছিটিয়ে স্বাগত জানানো হয়, কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশি হামলা করে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করা হয়। শাহরিয়ারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করার কোনো নমুনা আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি শাহরিয়ারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল অবস্থান গ্রহণ করবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার করার প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আমরা আজকে এখানে ঘোষণা করছি।’
‘শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে’ ছাত্রদল আজ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছিল। পরে তারা পৌনে দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে।
৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী পারভেজ হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন তিনি। অবরোধে কর্মসূচিতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি। পারভেজ হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর শাহরিয়ার আলম সাম্য ক্যাম্পাস–সংলগ্ন এলাকায় নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মীকে ভবিষ্যতে যদি এ রকম গায়ে আঘাত করা হয়, ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী আর বসে থাকবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন নাছির উদ্দীন। শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যরাতে শোকবিহ্বল ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হৃদয়বিদারক আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ তাঁর।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উপাচার্য এখন পর্যন্ত শাহরিয়ারের হত্যাকাণ্ডকে ধারণ করতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।’ ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠুভাবে হতো, তাহলে শাহরিয়ার আলম সাম্যকে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না।
শাহরিয়ারের হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ রোববার বিকেলে পৌনে দুই ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র র আলম স ম য সরক র র প রক ত র প রক শ হব গ র হত য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: স্বপ্নগুলো বুকপকেটে লুকিয়ে ফেলেছি
গত ১২ মাসকে আমরা মেলাতে পারি ১৯৭২ সালের সঙ্গে। আমাদের ইতিহাসে কেবল এই দুই বছরে অনেক মিল।
বিশাল অর্জন ও বিপুল প্রত্যাশা শেষে পায়ের নিচে শক্ত পাথুরে মাটি টের পাওয়া। ১২ মাসে মানে ৩৬৫ দিনও বটে। এ রকম প্রতিটি দিন গেছে আশা, স্বপ্ন, অপেক্ষায়।
মানুষকে কোনো অর্থে আর বলা যায় না ধৈর্য ধরেন, অনেক কিছু হবে; প্রশাসন-অফিস-আদালতের চেহারা পাল্টাবে; পুরোনো দিন বদলাবে।
সে রকম কিছু হয়নি। লক্ষণও নেই। বরং বাড়তি প্রতিক্রিয়াশীল ভবিষ্যৎ যেন কড়া নাড়ছে। মুরাদনগর দুঃস্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না। বাতাসে ভাসে প্রতিশোধের নষ্ট ঘ্রাণ। পথে-প্রান্তরে হাঁটলে সেসব টের পাওয়া যায়।
অভ্যুত্থানের সামনের সারির সংগঠকদের ভাগ্যবান একাংশের সাক্ষাৎকার আর প্রোফাইল প্রমোশন শেষে মিডিয়া জগৎ সামনের দিনগুলোতে মেঠো বাস্তব জগতের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় পাবে আশা করি।
তারা তখন দেখবে মাঠে ফসল বলে কিছু নেই। বরং অচেনা আগাছা জমেছে বেশ।
আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থান: নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কেন জরুরি১৪ আগস্ট ২০২৪বৈষম্য কমানোর ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ‘লাল জুলাই’য়ের। বৈষম্য কাঠামোগত ব্যাপার। টিএসসিতে বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সামনে বক্তৃতা দিয়ে মুগ্ধ করা এক জিনিস, মানুষকে ঔপনিবেশিক আইনকানুনের বাঁধন মুক্ত করা ভিন্ন জিনিস।
সচিবালয়ে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেটা হবার নয়। রাষ্ট্রের ভেতরে ঢুকে রাষ্ট্র বদলানো দুরূহ। বলশেভিকরাও সেটা পারেনি। জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্রকে হাঁটু মুড়ে বসতে বাধ্য করতে হয়।
‘৩৬ জুলাই’ থেকে সেই অধ্যায় শুরুর দরকার ছিল। কিন্তু পরদিন থেকেই ঘটেছে উল্টো। সব সম্ভাবনা আটকে গেল ঢাকার রমনা ও মতিঝিলে।
মনে পড়ছে, রাস্তায় দেখা হলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেবল বলতেন আমাদের দেশ গঠনের কাজ দিতে বলেন। বিষণ্ন হয়ে তাঁদের সামনে মাথা নুইয়ে থেকেছি।
‘২০২৪–এর আগস্ট’ বিপ্লব ছিল না। আবেগের বশে অনেকে সেটা বলে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করেছেন। কিন্তু ৩৬ জুলাই অবশ্যই একটা বিপ্লবী মুহূর্ত হাজির করেছিলেন শহীদেরা। এটা স্রেফ রেজিম চেঞ্জ ছিল না।
প্রতিটি উপজেলার মানুষ ভাবছিল এবার নতুন নায়কেরা, তাদেরই জীবিত সন্তানেরা তাদের কাছে আসবে, তাদের সঙ্গে নিয়ে দমনমূলক প্রশাসনিক ঐতিহ্য ভাঙতে। অভূতপূর্ব অহিংস এক কাফেলা তৈরি হতে পারত এভাবে। সেটা ঘটেনি।
৩৬ জুলাই হারিয়ে গেল ৮ আগস্টের ভেতর। ইন্তিফাদা ব্যর্থ হলো। সচিবালয় আত্মস্থ করে নিল তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর নতুন সম্ভাবনাকে।
কর্নওয়ালিশের আত্মা হয়তো হাসছিল তখন কোথাও বসে। গণ–অভ্যুত্থানের যৌথ গর্বকে পায়ে দলে ‘মাস্টারমাইন্ড’ খোঁজায় নামিয়ে দেওয়া হলো তাবৎ মিডিয়াকে।
চব্বিশের মূল দর্শন ছিল বৈষম্যের অবসানে রাষ্ট্র সংস্কার। এ দেশে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার কৃষক, শ্রমিক, দলিত এবং নারী সমাজ।
গত ৮ হাজার ৭৬০ ঘণ্টায় কৃষক-শ্রমিক-দলিত ও নারীদের ভাগ্য বদলতে মৌলিক কী পদক্ষেপ পেলাম আমরা? এক বছরে যতগুলো কমিশন হলো, তাতে কৃষি খাত বাদই থাকল। শ্রমিকদের বিষয়েও প্রথমে কোনো কমিশন ছিল না।
পরে সেটা হলো এবং ৪৪৫ পাতার চমৎকার প্রতিবেদনও জমা পড়ল। তারপর সুনসান নীরবতা। শ্রম খাত বিষয়ে কোনো সুপারিশ নিয়ে কোথাও কোনো আলাপ নেই, বিতর্ক নেই।
দলিত, সংখ্যালঘু, পাহাড়িসহ ছোট ছোট দুঃখী জনগোষ্ঠীগুলোর হাতে কোন প্রাপ্তি নিয়ে গণ–অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদ্যাপন করবে? কী দেওয়া হলো তাঁদের? মাঝখানে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাও বাদ পড়ল। জায়গা হলো না বহুত্ববাদেরও।
আরও পড়ুনজুলাই গণ-অভ্যুত্থান: কোথায় ব্যর্থ, কোথায় সফল০১ জুলাই ২০২৫তীর্থের কাকের মতো মাঝেমধ্যে পত্রিকায় খুঁজি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্ল্যাটফর্মে খোদ কৃষক উপকৃত হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ নিয়ে কথা হলো কি না!
অভ্যুত্থানের কোনো শক্তি সেখানে আদৌ কখনো প্রশ্ন করেছে কৃষি বিষয়ে? শ্রমিকদের প্রধান চাওয়া জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঐকমত্য কমিশনের বাহাসের তালিকায় এল কি কখনো? কোটি কোটি শ্রমজীবীর জন্য এসব কি সবচেয়ে জরুরি সংস্কার প্রশ্ন ছিল না?
অনেকগুলো বছর শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হচ্ছে। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যদি হয় সিঙ্গেল ডিজিটে এবং খাদ্যপণ্যের দাম যদি বাড়ে ডাবল ডিজিটে, তাহলে অর্থনীতির হিসাবে কোটি কোটি মজুরের ভোগ কমে যাচ্ছে।
১০-১৫ বছর যদি কারও প্রকৃত মজুরি এভাবে কমতে থাকে, তাহলে তাঁর রান্নাঘরের কী চেহারা হয়? লাখ লাখ শ্রমিককে দরিদ্র বানানোর এই কাঠামোগত ব্যবস্থা নতুন সরকার কি সামান্যও বদলাতে পেরেছে? শিক্ষার্থী-নেতারা কখনো এ রকম দাবিতে যমুনার সামনে দাঁড়িয়েছেন?
ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে গরিবদের জন্য ফ্রি বাস সেবা ও কম দামে ফ্ল্যাট বানানোর প্রতিশ্রুতি দেখে নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে নিয়ে ধন্য ধন্য করছি।
কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থী নেতৃত্ব ও অভ্যুত্থানের সরকার এবারের বাজেটে সে রকম কিছু করতে কেন পারলেন না? যে শিক্ষার্থী নেতৃত্ব সরকারের উপদেষ্টা হলেন, অভ্যুত্থানের পর যাঁরা পরিচালক, মহাপরিচালক হয়ে দপ্তর-অধিদপ্তরের বস হয়ে বসলেন—সবাই আপনারা ছিলেন গণ–অভ্যুত্থানের মোহরপ্রাপ্ত।
ফেসবুকের লাইক-শেয়ারের প্রলোভন এড়িয়ে প্রান্তিক সমাজের জন্য কেন কিছু ডেলিভারি দিতে পারলেন না? আপনাদের হাতে প্রশাসন, পুলিশ এবং অভ্যুত্থানে নারীদের অচিন্তনীয় অংশগ্রহণের জ্যান্ত স্মৃতি থাকার পরও ১৬ মে নারীরা অধিকার চেয়ে মৈত্রী সমাবেশ করায় তাঁদের শুনতে হলো ‘বেশ্যার’ অপবাদ।
নারী কমিশনবিরোধী সমাবেশে ভাষণ দিয়ে এলেন দিনবদলের শপথে অঙ্গীকারবদ্ধ শিক্ষার্থী নেতৃত্বের প্রতিনিধিরাই। অনলাইনে লাঞ্ছনার হাত থেকে রেহাই পেলেন না উমামা, তাসনূভা, জারার মতো স্বৈরতন্ত্রবিরোধী সামনের সারির লড়াকু সংগঠকেরাও। মব-সহিংসতা আর বেনামি মামলায় গ্রাম-শহরজুড়ে এখন কেবল আতঙ্ক।
মব আর মামলা নতুন এক রাজনৈতিক–অর্থনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে নানা নবীন সিন্ডিকেটের। এভাবে ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবী মুহূর্তটি ৩৬৫ দিন ধরে একটু একটু করে রক্তাক্ত হলো।
আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানের পর এই বিভেদরেখা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ১৯ মে ২০২৫মাঝে শিক্ষার্থী নেতৃত্ব দল করলেন। পাঁচ দশক বাংলাদেশের মানুষ দলীয়-গণতন্ত্রহীন দল দেখেছে। এ রকম দল ও পরিবারতন্ত্র থেকে তারা রাজনীতিতে নতুন মেধার প্রতিযোগিতা চেয়েছে।
ফলে এনসিপি নিয়ে কৌতূহল ও শুভকামনার শেষ নেই। অথচ দলটির কেন্দ্র সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অস্পষ্টতা কাটিয়ে উঠতে পারল না এখনো। এখনো নিজস্ব রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র নেই তাঁদের।
কর্মীদের মাঝে রাষ্ট্রনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে বহু মত। এত অস্পষ্টতা নিয়ে শত শত শহীদের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেওয়া দুরূহ। অথচ গণ–অভ্যুত্থানের এজেন্সি ছাড়তেও অনিচ্ছুক তাঁরা।
সামনে নির্বাচন। বিএনপিসহ অনেকে শিক্ষার্থীদের দলকে আকারে-ইঙ্গিতে বলছে ‘কিংস পার্টি’। সেই অপবাদ এড়াতে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দারুণ নজির স্থাপন করেছেন। কিন্তু উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আছে, নাকি নেই?
এ বিষয়ে দলটি আরও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেবে কি না? প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের দল নিয়ে বিতর্কের আরেক বড় জায়গা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার অবস্থান। এনসিপির অনেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণের পক্ষে বলেছেন বারবার।
কেউ কেউ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা চাইতেও বলেছেন। কিন্তু একই দলের আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশের শেষে অজ্ঞাতপরিচয়ধারীরা আওয়াজ ওঠালেন, ‘গোলাম আযমের বাংলায়—আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই।’ লীগের দুঃশাসনের স্মৃতি পুঁজি করে ’৭১–এর স্মৃতিকে ধামাচাপা দেওয়ার এই চেষ্টা কারা করলেন?
এঁদের থামাতে চেয়েছেন? ১২ মাসে তার প্রবল নজির মেলেনি। ফলে আমাদের সব প্রত্যাশা ১৯৭২, ১৯৯১–এর মতোই আবারও বুকপকেটে লুকিয়ে নিচ্ছি। মানুষ তো কেবল তার স্বপ্নের সমান। শত শত বছর বাংলা তো কেবল আশা আর অপেক্ষা করে যায় নূরলদীনদের জন্য।এসব ঘটনা নতুন দল, তার কর্মী বাহিনী এবং তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভ্রম বাড়ানোর পাশাপাশি গণ–অভ্যুত্থানের ইমেজেও পেরেক বসিয়েছে।
দক্ষিণপন্থী নানা শক্তি শিক্ষার্থী নেতৃত্ব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যবহার করে শেষোক্তদের জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। কিন্তু সরকার ও তার ‘নিয়োগকর্তা’রা কি আদৌ ভিন্ন কোনো বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন?
এঁদের থামাতে চেয়েছেন? ১২ মাসে তার প্রবল নজির মেলেনি। ফলে আমাদের সব প্রত্যাশা ১৯৭২, ১৯৯১–এর মতোই আবারও বুকপকেটে লুকিয়ে নিচ্ছি।
মানুষ তো কেবল তার স্বপ্নের সমান। শত শত বছর বাংলা তো কেবল আশা আর অপেক্ষা করে যায় নূরলদীনদের জন্য।
হয়তো কালো পূর্ণিমায়, মরা আঙিনাজুড়ে কেউ দেবে আবার নতুন ডাক; স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে আবার হয়তো উঠবে ধ্বনি, শব্দ, শিস! দুঃখিনী মায়েরা হয়তো আবার দেশের তরে উৎসর্গ করবেন নাড়িছেঁড়া অনেক ধন! মুক্তির আকাঙ্ক্ষা যে মরে না হায়!
● আলতাফ পারভেজ গবেষক ও লেখক
* মতামত লেখকের নিজস্ব