সুস্থতার জন্য ব্যয় করা একটা মিনিটও গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটার মতো সহজ ব্যায়াম আর নেই। ছাদে, গ্যারেজে, এমনকি বারান্দা বা ঘরেও রোজ খানিকটা হাঁটাহাঁটি করা সম্ভব। কীভাবে হাঁটলে সবচেয়ে বেশি উপকার মিলবে, জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন

কদম গুণে হাঁটার উপকারিতা

আপনি যতবারই পা ফেলছেন, ততবারই ক্যালরি পুড়ছে। কতটা পুড়ছে, তা নির্ভর করছে আপনার ওজন এবং হাঁটার গতির ওপর। বুঝতেই পারছেন, ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে দ্রুত হাঁটতে হবে এবং যতটা বেশিবার সম্ভব, পা ফেলতে হবে। তবে আপনি যদি হালকা গতিতেও ১০ হাজার কদম হাঁটেন, তা-ও আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ খানিকটা উপকারে আসবে। কারণ, প্রতি পদক্ষেপেই কিছু না কিছু ক্যালরি পোড়ে।

১০ হাজার কদমের মধ‍্যে কয়েক হাজার কদম যদি একটু দ্রুত হাঁটেন, তাহলে আরও একটু বেশি ক্যালরি পুড়বে। যেকোনো গতিতেই আপনি ১০ হাজার কদম হাঁটুন না কেন, সারা দিনে এতটা হাঁটার অর্থই হলো আপনি আপনার বসে থাকার সময়টা কমিয়ে দিচ্ছেন। আর হাঁটার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করছেন। হয়তো কাজের ফাঁকে সময় পেলেই একটু হেঁটে নিচ্ছেন অফিস কিংবা বাসার করিডরে, হয়তো দুটি তলা সিঁড়ি ভাঙছেন, কিংবা হয়তো গাড়িতে বসে না থেকে খানিকটা পথ হাঁটছেন।

এভাবে আপনার বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমছে। তবে সংখ্যাটা যে ১০ হাজারই হতে হবে, তা নয়। সুস্থ থাকতে রোজ সাড়ে সাত হাজার কদম হাঁটাই যথেষ্ট। গবেষণার ফলাফল এমনটাই জানাচ্ছে। রোজ পাঁচ হাজার কদম হাঁটলে বিষণ্নতাও কমে।

আরও পড়ুনএকটু জোরে হাঁটলেই পা ব্যথা করে, কী করি?১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটার গুণ

জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটা বা ইন্টারভাল ওয়াকিং ট্রেনিংয়ের জন্য তুলনামূলক কম সময় প্রয়োজন, মাত্র ৩০ মিনিট। প্রথমে আপনাকে ধীরে অর্থাৎ আপনার স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে হবে তিন মিনিট। এরপর দ্রুতগতিতে তিন মিনিট। এ সময়টা আপনাকে এমন দ্রুতগতিতে হাঁটতে হবে, যাতে আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি দ্রুত হয়ে ওঠে এবং শ্বাস ভারী হয়ে আসে। এভাবে আপনাকে পর্যায়ক্রমে ধীরে ও দ্রুতগতিতে হাঁটতে হবে, মোট ৩০ মিনিট। সবশেষে কয়েক মিনিট কুলডাউন করতে হয়।

এই পদ্ধতির অনেক উপকার; উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। বয়সজনিত পেশিক্ষয় কম হয়। আর এতে সব মিলিয়ে যে ক্যালরি পোড়ে, তা আপনার ওজনকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখতেও সহায়তা করে। সময় কম লাগে বলে এই পদ্ধতির চর্চা চালিয়ে যাওয়া সহজ। যেকোনো ব্যায়ামের উপকার পেতে নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক। তিন মিনিটের ১০টি অডিও ক্লিপ দিয়ে প্লে–লিস্ট সাজিয়ে নিলে এই তিন মিনিটের হিসাবও করা যায় অনায়াসে। তা ছাড়া এই চর্চায় জয়েন্টের ওপরেও বাড়তি চাপ পড়ে না।

আরও পড়ুন১ মিনিট, ৫ মিনিট, আধা ঘণ্টা—কতক্ষণ হাঁটলে কী উপকার৩০ জানুয়ারি ২০২৫সিদ্ধান্ত আপনার

দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি সরাসরি কমিয়ে আনতে পারে বলে সুস্থ থাকার জন্য জাপানি পদ্ধতিটিই বেশি ভালো। আপনি চাইলে কেবল এটির চর্চাই করতে পারেন। তবে সারা দিনে বহু কদম হাঁটার উপকারিতাও অস্বীকার করার উপায় নেই। আপনি চাইলে এমনভাবে জীবনধারা সাজিয়ে নিতে পারেন, যাতে ৩০ মিনিট জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটা হয়, আবার সারা দিনের অন্য সময়েও বেশ খানিকটা হাঁটা হয়। ৩০ মিনিট জাপানি পদ্ধতিতে হাঁটার সময়ই তো আপনি কদম গণনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবেন। সারা দিনের বাকি সাড়ে ২৩ ঘণ্টায় দৈনন্দিন কাজের মধ্যেও বেশ খানিকটা হাঁটার চর্চা রাখতে পারেন। আর অবশ্যই যেকোনো ব্যায়ামের ক্ষেত্রেই খেয়াল রাখুন সঠিক দেহভঙ্গির দিকে। সব মিলিয়ে সুস্থ থাকবেন আপনি।

আরও পড়ুনহাঁটার নিয়মগুলো মানছেন তো?০৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র কদম হ ৩০ ম ন ট র জন য আপন ক আপন র উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থাকে সমর্থন করে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তার দল ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে। ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থাকে সমর্থন করে না। এনসিপি সেক্যুলারিস্ট বা ধর্মতান্ত্রিক-কোনো মতবাদকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না। এনসিপি জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে।

সোমবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘কয়েকটি বিষয়ে এনসিপি’র দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। এই পোস্টে নানা বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন (অঞ্চল) তৈরির ভিশন আছে এনসিপির।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘কয়েকটি বিষয়ে এনসিপি'র দৃষ্টিভঙ্গি-

১। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই এনসিপির পথচলা। এছাড়াও আমরা বাংলার হিন্দু-মুসলমান-দলিতের উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতাকে রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করি।

২। এনসিপি নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও আত্মিক অনুভবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম—তার নৈতিকতা ও মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চাকে এনসিপি মূল্যায়ন করে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এনসিপি। এনসিপি মনে করে রাষ্ট্রের উচিত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অখণ্ডতা রক্ষা করা। এনসিপি ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে এবং ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থাকে সমর্থন করে না। এনসিপি সেকুলারিস্ট বা ধর্মতান্ত্রিক (Theocratic)—কোনো মতবাদকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না; বরং ধর্মীয় সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও দায়-দরদ অনুশীলনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়াই এনসিপির লক্ষ্য।

৩। এনসিপি জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে। বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র বঙ্গীয় বদ্বীপের সভ্যতাগত পরিচয়কে ধারণ করে জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলবে এনসিপি।

৪। নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন এনসিপির অন্যতম মূলনীতি। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে এনসিপি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে এনসিপি কাজ করবে।

৫। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। এনসিপি এই আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে। এনসিপি মনে করে বাংলাদেশের উচিত ন্যায্যতা, মর্যাদা, সভ্যতা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে অন্য রাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।

৬। এনসিপি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক দূর্নীতিমুক্ত একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অনুরুপ হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগর ব্যবস্থাপনা, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান হবে এনসিপির প্রধান নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন তৈরির ভিশন আছে এনসিপির।

৭। এনসিপি বিশ্বাস করে, একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা এনসিপির প্রধানতম রাজনৈতিক কর্তব্য। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের জন্য প্রথম ধাপটি হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রনয়ণ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ