সুদানের এল-ফাশারে আধাসামরিক বাহিনীর গোলাবর্ষণে নিহত ১৪ বেসামরিক
Published: 19th, May 2025 GMT
সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশারে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর কামানের গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছে।
এল ফাশারের প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির বরাত দিয়ে সোমবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
রবিবার (১৮ মে) এল ফাশারের প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “আরএসএফ মিলিশিয়াদের কামান হামলায় আজ ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আবু শৌক বাস্তুচ্যুত শিবিরের নাইভাশা মার্কেট ও উত্তর এল ফাশেরের বেশ কয়েকটি এলাকা লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়েছিল।”
আবু শৌক ক্যাম্পের জরুরি বিভাগও এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে যে, আরএসএফের কামান হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে, আমরা এখনও নিহত ও আহতের সম্পূর্ণ সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারিনি।”
এদিকে, স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠী সুদানিজ ডক্টরস নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এল ফাশারের আশেপাশের এলাকা এবং আবু শৌক বাস্তুচ্যুত শিবির লক্ষ্য করে আরএসএফের ‘ইচ্ছাকৃত গোলাবর্ষণে’ ১৯ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছে।
হামলার বিষয়ে আরএসএফের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
২০১৪ সালের ১০ মে থেকে, সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে এল ফাশারে ভয়াবহ লড়াই চলছে। আরএসএফের দারফুরের প্রায় পুরো বিশাল পশ্চিমাঞ্চল দখল করে নিয়েছে। তারা দারফুরের রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশার অবরোধ করে রেখেছে। কিন্তু শহরটি দখল করতে পারেনি। সেখানে সেনাবাহিনী-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বারবার তাদের পিছনে ঠেলে দিয়েছে।
ক্ষমতার দখল ঘিরে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই চলছে। জাতিসংঘ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের গবেষণায়, মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বলে অনুমান করা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আরএসএফ র এল ফ শ র র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)