অনলাইনে কনটেন্ট নির্মাতাদের আয় কমছে, হুমকিতে ইন্টারনেটে আয়ের কাঠামো
Published: 19th, May 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং সার্চ ইঞ্জিনের ‘জিরো ক্লিক’ পদ্ধতি কনটেন্ট নির্মাতাদের প্রচলিত আয়ের কাঠামোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন এ পদ্ধতি ইন্টারনেটে কাজের ধরন ও অনলাইনে অর্থ আয়ের প্রচলিত পদ্ধতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারে বলে জানিয়েছেন ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ম্যাথিউ প্রিন্স।
সম্প্রতি কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাথিউ প্রিন্স বলেন, অনলাইনে তথ্য অনুসন্ধানের ধরন বদলে যাওয়ায় ওয়েবসাইটগুলো আগের মতো দর্শক পাচ্ছে না। এতে আয় কমে যাচ্ছে কনটেন্ট নির্মাতাদের। ওয়েবের আয়কাঠামো দেড় দশক ধরে নির্ভর করছে অনলাইন সার্চের ওপর; অর্থাৎ অনলাইনের অধিকাংশ কর্মকাণ্ডের পেছনে ছিল সার্চ ইঞ্জিন। একসময় গুগলে কিছু সার্চ করলে ব্যবহারকারীকে পাঠানো হতো সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে। এটা ছিল একধরনের ভারসাম্যপূর্ণ বিনিময়।
বর্তমানে গুগল আগের মতোই তথ্য সংগ্রহ করলেও নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে দর্শক পাঠানোর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ বিষয়ে প্রিন্স বলেন, ‘গুগলের সার্চ পেজেই ৭৫ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ফলে মূল ওয়েবসাইটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। এ কারণে যেসব ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন বা পাঠকপ্রিয়তার মাধ্যমে আয় করত, তাদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ওয়েবে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয় কমার পেছনে এআই প্রযুক্তিও ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন প্রিন্স। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন এআই প্রতিষ্ঠান ওয়েব থেকে বিপুল পরিমাণ কনটেন্ট সংগ্রহ করে নিজেদের মডেল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, কিন্তু সেই কনটেন্টের উৎসে ব্যবহারকারীদের ফেরত পাঠাচ্ছে না। গুগলের ক্ষেত্রে আগে ছিল ২:১ অনুপাত, এখন সেটা ৬:১। কিন্তু ওপেনএআইয়ের ক্ষেত্রে সেটা ২৫০:১, আর অ্যানথ্রপিকের ক্ষেত্রে ৬,০০০:১; অর্থাৎ তারা হাজার হাজার পেজ সংগ্রহ করলেও সেই ওয়েবসাইটে কোনো দর্শক পাঠাচ্ছে না, যা দীর্ঘ মেয়াদে ওয়েবের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কনটেন্ট নির্মাতারা যদি আয় না করতে পারেন, তাহলে তাঁরা আর নতুন কনটেন্ট তৈরি করবেন না। এতে পুরো ইন্টারনেট–ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কনট ন ট ন র ম ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।