কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব অঞ্চলের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় কাউন, ধান, বাদাম, পেঁয়াজসহ সবজি ক্ষেত ডুবে যাচ্ছে। জিঞ্জিরাম নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় একটি কাঠের সাঁকো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষজন। 

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা পাড়ের দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী, বিদ্যানন্দ এলাকাগুলোতে দেখা যায়, টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে যাওয়াতে এসব এলাকার আবাদি ফসল ডুবে গেছে। কৃষকেরা তাড়াহুড়ো করে আধা-পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।

কেউ কেউ অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বাদাম ক্ষেত থেকে তুলে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ কৃষক অন্যান্য আবাদি ফসল তুলতে না পারায়, তিস্তার পানিতে এসব ডুবে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক কৃষক।

রাজারহাটের তিস্তাপাড়ের কৃষক মো.

ফয়জার আলী সমকালকে বলেন, ‘আর ১৪টা দিন গেলে বাদাম গুল্যা ঘরত তুলবের পালুং (পেলাম) হয়। সর্বনাশা তিস্তার পানি হঠাৎ আসি সোগ (সব) ভাসি (ডুবে) গেইল।’ 

আরেক কৃষক হবিবর রহমান বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা জমিত এবার কাউন আবাদ করছি। কাউনগুল্যা কোমলায় (অপরিপক্ব) আছে। তিস্তার পানির কারণে সোগ ডুবি গেছে। মোর মেল্যা (অনেক) টেকা ক্ষতি হইল।’

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাটের দেড়শত বসতভিটা, আবাদি ফসল ও বিদ্যুতের খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় তিনশত বসতভিটা। ভাঙনের হাত থেকে সম্পদ রক্ষার জন্য বাসিন্দারা অপরিপক্ব গাছ কেটে ফেলছেন, ঘর-বাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। ভিটে-মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে বেগমগঞ্জ এলাকার কয়েকটি পরিবার। 


উলিপুরের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, ‘হামার ১৫ বিঘা জমি সোগ ভাঙি গেছে। আবাদি ফসল, ভিটে-মাটি ভাঙছে। আত্মীয়র বাসায় উঠছি।’


আরেক বাসিন্দা সাজু মিয়া বলেন, ‘আমার তিনটা ঘর, সুপারির বাগান সব ভেঙে নদীতে গেছে। এবারি আমার প্রথম ভাঙন হয়। আমার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বাকি ফলের গাছগুলো কেটে নিচ্ছি।’


এদিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ৫ দিন জেলার প্রধান ৪ নদ-নদী তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বাড়তে পারে। পানি বাড়ার কারণে এসব অঞ্চলের নীচু চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 


পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, আগামী ৫ দিন রংপুর ও ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় কুড়িগ্রামের এই চার নদ-নদীতে পানিবৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে জেলায় আগামী এক সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে ফ্ল্যাট দখলে জেলা যুবদল সভাপতির সহায়তার অভিযোগ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী শহরে একটি ফ্ল্যাট দখলের ঘটনায় জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম ওরফে সুমনের সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কাজল রেখা নামের এক নারী নোয়াখালী প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাজল রেখা অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে তাঁর বড় ছেলে আল মাহমুদের বন্ধু উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নূর হোসেনকে তাঁদের মালিকানাধীন চৌমুহনী পৌরসভার কুরিপাড়া এলাকার একটি তিনতলা বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। এরপর তিনি ছেলের পড়ালেখার সুবিধার্থে ঢাকায় চলে যান। তখন থেকে নূর হোসেন তাঁর বাড়ি দেখাশোনা করছিলেন। ‌একপর্যায়ে নূর হোসেন তাঁর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেন এবং বাড়িতে থাকা অন্য ভাড়াটেদের বের করে দেন।

কাজল রেখা অভিযোগ করেন, নূর হোসেনের দলীয় প্রভাবের কারণে তিনি অনেক চেষ্টা করেও গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাড়ি দখলমুক্ত করতে পারেননি। পরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুবলীগ নেতা নূর হোসেন আত্মগোপন করলে গত ৮ মার্চ তিনি তাঁর বাড়িটি দখলে নেন। এরপর নূর হোসেন জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিমের শরণাপন্ন হয়ে তাঁর (মঞ্জুরুল আজিম) লোকজনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি পুনরায় দখল করেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কাজল রেখা নামের ওই নারীর ফ্ল্যাট দখলের ঘটনায় তিনি কিংবা তাঁর কোনো লোক জড়িত নন। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই নারীকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

এদিকে ফ্ল্যাট দখল করে রাখার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কাজল রেখা। তিনি বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর বেগমগঞ্জ থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করে এলেও ফ্ল্যাটটি এখনো দখলমুক্ত হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাজমি–সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়গুলো আদালতের এখতিয়ার। এরপরও ওই নারীর অভিযোগ পাওয়ার পর বেগমগঞ্জ থানায় পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় খোঁজ নিতে পারেন।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার কথা। হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। মীমাংসা না হয়ে থাকলে ওই নারী আদালতে যেতে পারেন। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁরা ফ্ল্যাটের মালিকানার টাকাপয়সা লেনদেনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালীতে ফ্ল্যাট দখলে জেলা যুবদল সভাপতির সহায়তার অভিযোগ