কুড়িগ্রামে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
Published: 19th, May 2025 GMT
কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব অঞ্চলের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় কাউন, ধান, বাদাম, পেঁয়াজসহ সবজি ক্ষেত ডুবে যাচ্ছে। জিঞ্জিরাম নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় একটি কাঠের সাঁকো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষজন।
আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা পাড়ের দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী, বিদ্যানন্দ এলাকাগুলোতে দেখা যায়, টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে যাওয়াতে এসব এলাকার আবাদি ফসল ডুবে গেছে। কৃষকেরা তাড়াহুড়ো করে আধা-পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।
কেউ কেউ অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বাদাম ক্ষেত থেকে তুলে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ কৃষক অন্যান্য আবাদি ফসল তুলতে না পারায়, তিস্তার পানিতে এসব ডুবে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক কৃষক।
রাজারহাটের তিস্তাপাড়ের কৃষক মো.
আরেক কৃষক হবিবর রহমান বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা জমিত এবার কাউন আবাদ করছি। কাউনগুল্যা কোমলায় (অপরিপক্ব) আছে। তিস্তার পানির কারণে সোগ ডুবি গেছে। মোর মেল্যা (অনেক) টেকা ক্ষতি হইল।’
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাটের দেড়শত বসতভিটা, আবাদি ফসল ও বিদ্যুতের খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় তিনশত বসতভিটা। ভাঙনের হাত থেকে সম্পদ রক্ষার জন্য বাসিন্দারা অপরিপক্ব গাছ কেটে ফেলছেন, ঘর-বাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। ভিটে-মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে বেগমগঞ্জ এলাকার কয়েকটি পরিবার।
উলিপুরের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, ‘হামার ১৫ বিঘা জমি সোগ ভাঙি গেছে। আবাদি ফসল, ভিটে-মাটি ভাঙছে। আত্মীয়র বাসায় উঠছি।’
আরেক বাসিন্দা সাজু মিয়া বলেন, ‘আমার তিনটা ঘর, সুপারির বাগান সব ভেঙে নদীতে গেছে। এবারি আমার প্রথম ভাঙন হয়। আমার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বাকি ফলের গাছগুলো কেটে নিচ্ছি।’
এদিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ৫ দিন জেলার প্রধান ৪ নদ-নদী তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বাড়তে পারে। পানি বাড়ার কারণে এসব অঞ্চলের নীচু চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, আগামী ৫ দিন রংপুর ও ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় কুড়িগ্রামের এই চার নদ-নদীতে পানিবৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে জেলায় আগামী এক সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস নেওয়ার সময় বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, আহত ৪
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেওয়ার সময় একটি বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসের চালকের সহকারী, ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীসহ কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় বাসটি ছাড়াও এর পাশে থাকা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার কেন্দুরবাগের মীম সিএনজি ফিলিং স্টেশনে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে রামগতি-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী আজাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী খালি বাস গ্যাসের জন্য কেন্দুরবাগের মীম সিএনজি ফিলিং স্টেশনে আসে। গ্যাস নেওয়ার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বাসটির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে বাসটি এবং এর পাশে থাকা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া চারজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কেন্দুরবাগ বাজার এলাকার সিএনজিচালক মো. রেজু মিয়া (৬৫), বাসের চালকের সহকারী মো. বেচু মিয়া (২৬), মোহাম্মদ আরমান (২৩) ও ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী মো. জাবেদ হোসেন (৪০)।
চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাসে গ্যাস ভর্তির প্রায় শেষ পর্যায়ে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহত কাউকে পাননি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা কয়েকজন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের কারও অবস্থা গুরুতর নয়।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে কোনো যাত্রী ছিল না। ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশকে বিস্ফোরণের বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে বাসটি জব্দ করা হয়েছে।