হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কারণে পিছিয়ে
Published: 19th, May 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক লড়াই শুরু করেছেন, কিন্তু ইতোমধ্যে তিনি এই দ্বন্দ্বে পিছিয়ে পড়েছেন। হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ– বিশ্ববিদ্যালয়টি উদারপন্থি পক্ষপাত ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন হার্ভার্ডের ২.৬৫ বিলিয়ন ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিলের হুমকি দিয়েছে। হার্ভার্ড এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে, যুক্তি দিয়েছে প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেছেন, হার্ভার্ড একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে হার্ভার্ড সম্প্রতি তাদের আর্কাইভে একটি প্রামাণিক ম্যাগনাকার্টা আবিষ্কার করেছে, যা স্বৈরাচারবিরোধী প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। এটি ইঙ্গিত দেয়, ট্রাম্পের হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে লড়াই কৌশলগতভাবে ভুল এবং তিনি ইতোমধ্যে এই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা মনে করছেন, আমেরিকানরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ব্যাপক বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। এই অনুমান একেবারেই ভুল। আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিঃসন্দেহে নিখুঁত নয় এবং জনগণও সেগুলোকে ত্রুটিহীন ভাবে না। কিন্তু অধিকাংশ আমেরিকানই এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল গুরুত্ব স্বীকার করেন এবং ট্রাম্পের আক্রমণের বিরোধিতা করেন।
এ মাসের শুরুর দিকে এপি/এনওআরসি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত ইস্যুতে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের প্রতি অস্বীকৃতির হার অনুমোদনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট বেশি। অর্থাৎ অধিকাংশ আমেরিকান ট্রাম্প যা করছেন, তা পছন্দ করছেন না।
এই জরিপের অন্যান্য তথ্য ব্যাখ্যা করে কেন এমন মনোভাব: টিউশন ফি নিয়ে জনমনে বাস্তব উদ্বেগ রয়েছে– ৫৮ শতাংশ আমেরিকান অন্তত খুবই চিন্তিত টিউশন খরচ নিয়ে। এর বিপরীতে তথাকথিত ‘উদারপন্থি পক্ষপাত’ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মাত্র ৩৬ শতাংশ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, আর ৩২ শতাংশ একেবারেই চিন্তিত নন।
রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদারপন্থাকে আক্রমণ করে আসছেন– এর শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালে উইলিয়াম এফ বাকলির ‘গড এন্ড মান অ্যাট ইয়েল’ বই প্রকাশের মাধ্যমে।
তবে সেই সময়ে বাকলির বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক ছিল না এবং ২০ বছর পর যখন সেমুর মার্টিন লিপসেট ও এভারেট কার্ল ল্যাড প্রথমবার জাতীয় পর্যায়ে অধ্যাপকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে জরিপ চালান, তখন দেখা যায়–একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, বরং একটি শক্তিশালী উদারপন্থি বহর বিদ্যমান। সেই জরিপে ৪৬ শতাংশ অধ্যাপক নিজেকে উদারপন্থি বলেন, ২৭ শতাংশ ছিলেন মধ্যপন্থি, আর ২৮ শতাংশ রক্ষণশীল।
এই শতাব্দীতে, ২০২৪ সালে ফায়ার পরিচালিত এক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫টি চার বছরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় হাজার অধ্যাপকের মধ্যে ৬৪ শতাংশ নিজেকে উদারপন্থি, ১৯ শতাংশ মধ্যপন্থি এবং ১৮ শতাংশ রক্ষণশীল বলে উল্লেখ করেন।
ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই অনুপাত কিছুটা ভিন্ন হতে পারে– যেমন হার্ভার্ডে উদারপন্থিদের হার ৭৩ শতাংশ, আর ব্রিগহাম ইয়াং ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাসে রক্ষণশীলদের সংখ্যা সামান্য বেশি। হার্ভার্ডের এক ছাত্র সংবাদপত্রের জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ শিক্ষক নিজেকে উদারপন্থি বা অতিউদারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, ২০ শতাংশ মধ্যপন্থি এবং মাত্র ৩ শতাংশ রক্ষণশীল। ডিউকে ‘দ্য ক্রনিকল অব হিগ্যের এডুকেশন’-এর জরিপে দেখা গেছে ৬২ শতাংশ শিক্ষক উদারপন্থি, ২৪ শতাংশ মধ্যপন্থি এবং ১৪ শতাংশ রক্ষণশীল।
এই ধরনের একমুখী রাজনৈতিক ঝোঁক অনেকের জন্য স্বস্তিকর নয়। সার্বিকভাবে মাত্র ২৭ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রক্ষণশীলদের জন্য ‘সম্মানজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ’ প্রদান করে।
তবে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা স্পষ্ট নয়। গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, চার বছরের কলেজে পড়ুয়া ডেমোক্র্যাটদের ৭৪ শতাংশ ও রিপাবলিকানদের ৭৩ শতাংশ মনে করে, তাদের স্কুল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখছে।
তারপরও এমন এক দেশে যেখানে উদারপন্থিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় আদর্শগত বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয় না এবং অতীতে কখনোই হতো না। তবে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো– ভোটাররা উদারপন্থি পক্ষপাতকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না, ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য অনুধাবন করেন।
একটি আগের এপি/এনওআরসি জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটার মনে করেন, রাজ্য সরকারগুলোর উচিত তাদের অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচিতে হস্তক্ষেপ করা। বিপরীতে ৬৮ শতাংশ মনে করে, এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ রাজ্য সরকারগুলোর থাকা উচিত নয়। ফেডারেল সরকার যদি ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করে, তবে সেটি আরও অজনপ্রিয় হবে। একই সময়ে, ভোটাররা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক উপকারও প্রত্যক্ষ করেন।
ট্রাম্প, সম্ভবত হার্ভার্ডকে বিশেষভাবে ঘৃণার লক্ষ্য মনে করছেন। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে দেখা গেছে, হার্ভার্ডের শিক্ষকের নিয়োগ, ছাত্র ভর্তির পদ্ধতি এবং শিক্ষাক্রমে ফেডারেল হস্তক্ষেপে ট্রাম্পের পক্ষে মাত্র ৩২ শতাংশ আমেরিকান। বিপরীতে ৬৬ শতাংশ হার্ভার্ডের পক্ষ নিয়েছ, যারা বলছে এটি ‘একটি ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।’
আরও এক প্রমাণ পাওয়া যায় ইউ গভ-এর এক জরিপে, যেখানে দেখা যায় মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন করেন ‘ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি ও শিক্ষাক্রম পরিচালনায় বেশি ভূমিকা নেওয়া।’ অর্ধেক মানুষ এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে।
ইতিহাসে ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষ বেছে নিতে রাজনৈতিকভাবে পারদর্শী প্রমাণিত হয়েছেন। তবে এবার হয়তো তিনি ভুল প্রতিপক্ষ বেছে নিয়েছেন।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ আম র ক ন র জন ত ক পদক ষ প পর চ ল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রিটিশ ভারত থেকে হজযাত্রা
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে হজযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক ঘটনা ছিল, যা বাষ্পীয় জাহাজের আগমনের সঙ্গে আরও সংগঠিত ও নিরাপদ রূপ লাভ করে। ব্রিটিশ সরকার এই যাত্রার ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শুধু ধর্মীয় নয়, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
বাষ্পীয় জাহাজে
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাষ্পীয় জাহাজের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হলে হজযাত্রা আরও সহজ ও দ্রুততর হয়। ব্রিটিশ সরকার হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব দেয় সে সময়ের বিখ্যাত পর্যটন কোম্পানি টমাস কুককে। বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং মুসলিমদের ধর্মীয় ভ্রমণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রশাসন হজ এবং ইরাকের কারবালায় ভ্রমণের জন্য নিরাপদ জাহাজ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়।
১৯২৭ সালে হজযাত্রার দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি হজ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি হজযাত্রীদের জন্য পরিবহন, থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে।
মোগল শিপিং লাইনস ও হজযাত্রী পরিবহন
ভারতীয় সমুদ্রবন্দর থেকে হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ‘মোগল শিপিং লাইনস’-এর। এই কোম্পানি, যার পূর্বনাম ছিল ‘বোম্বে অ্যান্ড পার্শিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি’, ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এটি হজযাত্রীদের জেদ্দায় পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে। ১৯২৭ সালে মোগল শিপিং লাইনস ২০ হাজার থেকে ৩৬ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করে, এবং ১৯৩০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ হজযাত্রী তাদের জাহাজে ভ্রমণ করে। বছরের ছয় থেকে সাত মাস ধরে এই কোম্পানির জাহাজ বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের হজযাত্রীদের লোহিত সাগরের জেদ্দা ও এডেন বন্দরে নিয়ে যেত।
বোম্বে থেকে জেদ্দায় যাত্রায় বাষ্পীয় জাহাজগুলো সাধারণত ১০-১২ দিন সময় নিত, যদিও অশান্ত সমুদ্র প্রায়ই যাত্রাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলত। এই জাহাজে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আশপাশের দেশের হজযাত্রীরাও ভ্রমণ করতেন।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪মোগল শিপিং লাইনস তাদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং কলকাতা বন্দর থেকে হজযাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে ভারত সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, বিশেষ করে বাঙালি মুসলিমরা বিকল্প হিসেবে ভারতীয় মালিকানাধীন ‘সিন্ধিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি’কে পৃষ্ঠপোষকতা করে। সিন্ধিয়ার জাহাজ ‘আল মদিনা’ হজযাত্রীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।
মোগল শিপিং লাইনস এবং সিন্ধিয়ার মধ্যে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উভয় কোম্পানি টিকিটের মূল্য কমিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। সিন্ধিয়া প্রায় বিনা মূল্যে হজযাত্রী পরিবহন করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে মোগল শিপিং লাইনস বিনা মূল্যে পরিবহনের পাশাপাশি হজযাত্রীদের ছাতা এবং জমজমের পানি বহনের জন্য কনটেইনার উপহার দিত। এই প্রতিযোগিতা তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক মহলে আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে।
প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব স্যার মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খানের উদ্যোগে দুই কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা হয়, যেখানে হজযাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১১৫ রুপি। তবে মোগল শিপিং লাইনস এই সমঝোতা মেনে চলেনি এবং সিন্ধিয়ার তুলনায় কম ভাড়ায় হজযাত্রী পরিবহন অব্যাহত রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হজযাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনহজ করতে গিয়ে মক্কা মদিনায় হারিয়ে গেলে কী করবেন০৮ মে ২০২৪ব্রিটিশ শাসনের পরে
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ভারত সরকার বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানিকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে, এবং ১৯৬২ সালে মোগল শিপিং লাইনস ভারত শিপিং করপোরেশনের অংশ হয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই হজযাত্রীদের জন্য পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলে।
পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ‘এম্পায়ার অরওয়েল’, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘সারধানা’, এবং মোগল লাইনসের ‘ইসলামি’ ও ‘মুহাম্মদি’ জাহাজ ভাড়া করে। এর মধ্যে ‘সারধানা’ চট্টগ্রাম ও করাচি বন্দর থেকে জেদ্দায় হজযাত্রী পরিবহন করত। ১৯৬০ সালে প্যান ইসলামিক স্টিমশিপ কোম্পানি চট্টগ্রাম ও করাচি থেকে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪সমুদ্রপথ থেকে বিমানে
ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বোম্বে-জেদ্দা রুটে ইন্ডিয়া শিপিং করপোরেশনের জাহাজ সার্ভিস ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলে। এর পর থেকে বিমান হজযাত্রার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে। বিমানযাত্রার সহজলভ্যতা ও দ্রুততার কারণে সমুদ্রপথে হজযাত্রা ক্রমেই বিলুপ্ত হয়।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে হজযাত্রা ছিল ধর্মীয়, সামাজিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। টমাস কুকের মতো এজেন্ট, হজ কমিটি এবং মোগল শিপিং লাইনসের মতো জাহাজ কোম্পানিগুলো এই যাত্রাকে সংগঠিত ও নিরাপদ করতে অবদান রাখে। মোগল শিপিং লাইনস এবং সিন্ধিয়ার প্রতিযোগিতা হজযাত্রীদের জন্য ভাড়া কমালেও ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ হয়। কালের পরিক্রমায় সমুদ্রপথের পরিবর্তে বিমানযাত্রা হজযাত্রার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে, তবে ব্রিটিশ আমলের এই ঐতিহ্য ইতিহাসের একটি অমূল্য অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫