অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে
Published: 19th, May 2025 GMT
অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাধা দিতে একটি গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই আইন প্রণয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) বিষয়ে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় তরুণ-তরুণীরা বলেন, ছোট থেকে নারীর প্রতি বৈষম্য দেখে আসছেন তাঁরা। ধর্মীয় বয়ানের মাধ্যমে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাধা দিতে একটি গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। হিন্দু রীতিনীতি বৈষম্যে পরিপূর্ণ। এসব রীতিনীতি আইন হিসেবে ব্যবহার করতে শেখানো হয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে। বিয়ে নিবন্ধন সবার জন্য বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। সব ধর্মের ও সব শ্রেণির নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা হলে তা কল্যাণকর হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে সমাজে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রযুক্তির প্রসারের মধ্য নিয়ে নারীর যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশেও হতে হবে। অভিন্ন পারিবারিক আইনের পক্ষে জনমত তৈরি করা সহজ কাজ নয়। এ জন্য সমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় ওয়াজে নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে এবং সমতা প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সোচ্চার হতে হবে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীকেই কথা বলতে হবে। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ অনুসারে নারীকে ব্যবহার করছে। নারী অধিকার যেন কারও লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তরুণ–তরুণীদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক দীপ্তি শিকদার বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের বিষয়টি ধর্মের দোহাই দিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয়। এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণের অভাবও লক্ষ করা যায়। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল থেকে জনমত তৈরির কাজ করছে।
সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। তরুণ প্রতিনিধির মধ্যে বক্তব্য দেন শিউলি বিশ্বাস, মুমতাহিনা, রীতা জেসমিন, জারিন চৌধুরী, ফাহমিদা নাজনীন এবং প্রজ্ঞা লাবণী সাদিয়া।
সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল কর্মকর্তা সিননোমে মারমা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
সব পলিটেকনিকে বিক্ষোভ কাল, হাইকোর্টের সামনে অবস্থানের ডাক
একটি রিট মামলায় দেওয়া রায় বাতিলের দাবিতে আগামীকাল রোববার হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা। এদিন সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করার ঘোষণাও দিয়েছে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি দিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। সেখানে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের সমস্যার যে সমাধান; সেটি আমরা এখনও দেখতে পাইনি।’
মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিলেও হাইকোর্টের যে রায় আছে, সেটি নিয়ে কোনো ফলাফল তারা পাননি বলে তুলে ধরেন জোবায়ের। তিনি বলেন, ‘এ রায়টি নিয়ে শুনানি করা হয়েছিল, সেদিন রায়টি স্থগিত করা হয়।’
আগামীকাল রোববার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এই রায়টি সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি করা হোক। এদিন প্রত্যেকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হবে এবং ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের এই দাবিগুলো দ্রুততম সময় মেনে নিন।’
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখার খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকার কারিগরি শিক্ষক তথা ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের এ রূপরেখা সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হবে।’
ছয় দফা পূরণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে রাস্তায় নামেন। সপ্তাহখানেক ধরে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করে। এরপর তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে তাদের তরফ থেকে।
৭ মে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের পদোন্নতি বিষয়ে হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা।
২. ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা ও মামলা করার সঙ্গে জড়িত ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
৩. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদী অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।
৪. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে।
৫. বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের মূল বেতনের সমান অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।