ধানমন্ডিতে এক যুবককে কোপানোর ভিডিও ভাইরাল, হয়নি মামলা
Published: 20th, May 2025 GMT
রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্ট্রাল রোডে সাইফ হোসেন মুন্না নামের এক যুবককে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত ওই যুবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকার সেন্ট্রাল রোডের ভূতের গলিতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি।
সোমবার রাতে ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিসিটিভি ফুটেজ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে কাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পথে সাইফ হোসেন মুন্নাকে গতিরোধ করেন একজন। এ সময় মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন আরও দুই ব্যক্তি। আরেক মোটরসাইকেলে সেখানে হাজির হন আরও একজন। এ সময় মুন্নাকে প্রথমে একজন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে মোটরসাইকেল থেকে নেমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একজন এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে। ওই ব্যক্তি কালো পাঞ্জাবি এবং হেলমেট পরা ছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করলে মুন্নাকে অন্যরা মারধর করেন।
জানা যায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মুন্নার হাত ও পায়ে ব্যাপক জখম হয়েছেন। তার শরীরে বেশ কয়েকটি কোপের দাগ রয়েছে। দুর্বৃত্তরা মুন্নাকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ বলেন, ‘এলাকায় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় পুলিশ কাজ করছে। মামলা হলে পুলিশ আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক প য় জখম ধ নমন ড এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনাবগঞ্জে শিক্ষক সঙ্কটে প্রাথমিক শিক্ষা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষককের পদ শূন্য। ২০২১ সালে বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক মারা যাওয়ার পর থেকেই এখন পর্যন্ত পদটিতে কাউকে নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে একজন সহকারী শিক্ষককে দিয়ে চালানো হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের কাজ।
নরেন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া বিদ্যালয় যেন জেলার অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতীকী চিত্র। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। একই সঙ্গে রয়েছে সহকারী শিক্ষকের সংকটও। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরীসংখ্যান অনুযায়ী- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭০৮টি। এরমধ্যে পরীক্ষণ বিদ্যালয় রয়েছে দুটি। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৪১৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাকি ২৯৩ বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়গুলোতে একজন সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রায় দেড়শতাধিক সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ হয় ৩৫ শতাংশ। বেশ কয়েক বছর ধরে এ পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। বাকি ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। অবসরের তুলনায় পদোন্নতি ও নিয়োগের গতি কম থাকায় এই সমস্যা দিনদিন বাড়ছে বলে মনে করেন অনেকেই।
প্রধান শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে সবচেয়ে বেশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলায়। বাকি তিনটি উপজেলায় শিক্ষক সঙ্কট থাকলেও এই দুটি উপজেলার থেকে তুলনামূলক বেশি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান- প্রধান শিক্ষক সঙ্কটের কারণে একজন সহকারী শিক্ষককে বিদ্যালয়টির দায়িত্বভার দেওয়া হয়। এতে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করা শিক্ষক কমে যায়। ফলে অনান্য শিক্ষকদেরও উপর বাড়তি চাপ পড়ে।
শিক্ষক স্বল্পতার কারণে একজন শিক্ষককে যখন একাধিক ক্লাস করাতে হয়, তখন তিনি বাধ্য হয়ে দায়সারাভাবে পাঠদান করান। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হন।
শাজাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাইমুল হক বলেন, “প্রধান শিক্ষক থাকলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে ভালো হয়। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাকেই উপজেলার বিভিন্ন মিটিংয়ে যেতে হয়। পরে এই ঘাটতি পূরণ হয় না।”
নরেন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “একটি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক হলেন প্রধান অভিভাবক। তিনি অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এতে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমে যায়। এরপরেও স্কুলের প্রশাসনিক কাজেও প্রধান শিক্ষকের ব্যাপক ভূমিকা থাকে।”
মিঠিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আখতার বলেন, “শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকলে পাঠদান ব্যাহত হয়। স্বল্প শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ে বাড়তি ক্লাস নিতে হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত পাঠ পায় না। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক সঙ্কট দূর করা প্রয়োজন।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জেছের আলী জানান, ‘‘যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সেখানে একজন সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেহেতু প্রধান শিক্ষক নেই একটু ঝামেলা হবেই। আগের তুলনায় সহকারী শিক্ষক সঙ্কটের সংখ্যা অনেক কমেছে। এখনও এখনও কিছু বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ খালি আছে। তবে এই সঙ্কট কবে কাটিয়ে ওঠা যাবে তা বলা যাচ্ছে না। আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ হলে এ সঙ্কট কিছুটা কমতে পারে।”
শিক্ষার মান নিয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক কিছু সঙ্কটের মুখোমুখী হয়েছেন। তবে শিক্ষার মান একেবারেই কমে যায়নি। চতুর্মুখী সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে শিক্ষাদান। তবে অনান্য জায়গার থেকে আমরা অনেক ভালো করছি।”
ঢাকা/শিয়াম/এস