জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান পাকতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকদের মুখে হাসি থাকার কথা। এর বদলে শ্রমে-ঘামে ফলানো সোনার ধান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। টানা বৃষ্টির কারণে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চলনবিল অঞ্চলের বেশির ভাগ জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত। তিন-চার দিনের মধ্যে না কাটলে এ ধান থেকে কিছুই পাওয়া যাবে না বলছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও চলনবিলে প্রতি বিঘা ধান কাটতে চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক হলেই চলত। শ্রমিকরা দূরত্বভেদে প্রতি বিঘায় (মণপ্রতি ৫ থেকে ৮ কেজি ধান) ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন। বৃষ্টিতে ধান নুয়ে পড়ায় ১০ জন শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন। তাদের পারিশ্রমিকও দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
তাড়াশের কুন্দইল গ্রামের কৃষক আবু হানিফ ১৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এখন বিপত্তি বেধেছে বৃষ্টিতে। গত বুধবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দিনে ও রাতে থেমে থেমে ঝড়, বাতাস, বৃষ্টিতে পাকা ও আধপাকা ধান নুয়ে পড়েছে। জমিতে হারভেস্টার ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কৃষি শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সুযোগ পেয়ে শ্রমিকরাও চড়া মজুরি চাইছেন।
আবু হানিফ বলেন, নুয়ে পড়া ধান কাটতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শ্রমিক প্রয়োজন হয়। কষ্টও অনেক। এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকরা ১১-১২ কেজি ধান পারিশ্রমিক চাচ্ছেন। অনেক দরদাম করে ১১ কেজিতে রাজি করিয়েছি। ১৬ বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিককে ৪ বিঘার ধান দিতে হচ্ছে।
একই অবস্থা মাকড়শোন এলাকার কৃষক আলেপ আলীর। প্রতি মণে কৃষককে ১০ কেজি করে ধান দিতে হচ্ছে তাঁকে। শুধু আবু হানিফ বা আলেপ আলীর না, চলনবিল এলাকার বেশির ভাগ কৃষককে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে।
রুহাই এলাকার কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, সরিষা তোলার পর বোরো আবাদ করেছেন। নাবী জাতের ধান হওয়ায় ধান পাকতেও দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে ঝড়, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এতে জমির ধান নুয়ে পড়ছে। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে যাচ্ছে। আছে কাদাও। এ সুযোগে ধান কাটা শ্রমিকরা পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা দূরত্বভেদে প্রতি মণে ৭ থেকে ১১-১২ কেজির কমে ধান কাটতে চাচ্ছেন না।
বিপদ দেখে শ্রমিকরা মোট উৎপাদনের কমপক্ষে চার ভাগের এক ভাগ ধান নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ধাপতেঁতুলিয়া এলাকার কৃষক ফরহাদ আলী। আক্ষেপ করে বলেন, ১২ বিঘা জমির আংশিক ধান নুয়ে পড়েছে। এসব ধান কাটতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ ধান শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাবদ দিতে হবে। তিন-চার সপ্তাহ ঝড়-বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পারিশ্রমিক আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে ধানের বাজারদর ভালো। তাই শ্রমিকের পারিশ্রমিক বাবদ একটু বেশি খরচ হলেও কৃষক পুষিয়ে নিতে পারবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইসরায়েল
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা করার জন্য রোববার কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের শেষদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি আলোচকদের নির্দেশ দিয়েছেন— তারা যাতে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে।
তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় হামাস যে পরিবর্তনের শর্ত দিয়েছে, সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
গত শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে এবং তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
তবে একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এমন কিছু সংশোধন চেয়েছে যার মধ্যে একটি হলো— স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলেও নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন করে কোনো হামলা হবে না।
গাজার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালের বরাতে জানানো হয়, আল-মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুগুলোর ওপর বোমা হামলায় এক চিকিৎসক ও তাঁর তিন সন্তানসহ সাতজন নিহত হন।
এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দুই মার্কিন কর্মী খান ইউনিস এলাকায় একটি গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। যদিও হামাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৩৩৮ জন নিহত হয়েছেন।