কীটনাশকের ব্যবহারে মৌমাছি বিপন্নের পথে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে খাদ্যের মান ও পরিমাণের ওপর। পৃথিবীতে মৌমাছিসহ অন্য যেসব পতঙ্গ পরাগায়নে ভূমিকা রাখছে, সেসব প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মৌমাছি, নিরাপদ খাদ্য ও পরিবেশ রক্ষায় ঝুঁকি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন। বিশ্ব মৌ দিবসে শিসউক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাপা, বিসেফ ফাউন্ডেশন এবং নর্থ বেঙ্গল হানি কমিউনিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজক। 

অনুষ্ঠানে ভিডিওতে মৌচাষে ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়। সিরাজগঞ্জের মৌচাষি আব্দুর রশিদ মণ্ডল জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে তাঁর খামারের ১৬০টি বাক্সে বিষ প্রয়োগে মৌমাছিগুলো মারা যায়, যার ক্ষতি প্রায় ৬ লাখ টাকা। এতে তরুণরা মৌচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। সচেতনতা ছাড়া এ শিল্প টিকবে না। নর্থ বেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজের জাহাঙ্গীর আলম জানান, পৃথিবীর ৮৬% পরাগায়ন মৌমাছির মাধ্যমে হয় এবং বর্তমানে ৬টি মৌজাতির মধ্যে ৪টি বিলুপ্তির পথে। বিসেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড.

জয়নুল আবেদীন জানান, আগে কৃষিবিদরা কীটনাশকের পক্ষে থাকলেও এখন তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশে কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক নিয়ম মানা হয় না। তিনি যথাযথ রেজিস্ট্রেশন, মৌসুমি সংরক্ষণ এবং আবহাওয়া বিবেচনায় কীটনাশক প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দেন।

পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশে মৌচাষকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে কমিউনিটি ভিত্তিক উদ্যোগ ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। অতিরিক্ত কীটনাশকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, ফলন কমছে এবং মৌমাছির প্রজন্ম দুর্বল হচ্ছে। তিনি বলেন, মানসম্মত দেশীয় মধু উৎপাদনে মনোযোগ দিলে তা রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

এদিকে ‘খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে মৌমাছির জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করি’– এই স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় র‍্যালি ও আলোচনা সভা। এতে কৃষি গবেষক, শিক্ষক, মৌচাষি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. সাখাওয়াৎ হোসেন। তিনি বলেন, মৌমাছি শুধু মধু উৎপাদনেই নয়; বরং খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও অসাধারণ ভূমিকা রাখে। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড আরইউ পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা করার জন্য রোববার কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের শেষদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি আলোচকদের নির্দেশ দিয়েছেন—  তারা যাতে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে।

তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় হামাস যে পরিবর্তনের শর্ত দিয়েছে, সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

গত শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে এবং তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

তবে একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এমন কিছু সংশোধন চেয়েছে যার মধ্যে একটি হলো— স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলেও নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন করে কোনো হামলা হবে না।

গাজার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালের বরাতে জানানো হয়, আল-মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুগুলোর ওপর বোমা হামলায় এক চিকিৎসক ও তাঁর তিন সন্তানসহ সাতজন নিহত হন।

এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দুই মার্কিন কর্মী খান ইউনিস এলাকায় একটি গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। যদিও হামাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৩৩৮ জন নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ