লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদীতে ধস নেমেছে উৎপাদনে। অতীতে ব্যাপক উৎপাদন লক্ষ্য করা গেলেও এবার লিচুর স্বাভাবিক ফলন দেখা যায়নি। এখন যেসব লিচু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো দেশি লিচু (আঁটি লিচু) হিসেবে পরিচিত। এসব লিচুর গুণগত মান খুব বেশি উন্নত নয়, সুস্বাদু বা রসালোও নয়। এছাড়াও লিচুর চাহিদা মেটাতে অপরিপক্ব লিচু বাজারে তোলা হয়েছে। দামও মোটামুটি চড়া।

তবে ফলন বিপর্যয় হলেও উপজেলার পৌর শহরসহ গ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে দেশি লিচুর বেচাকেনা শুরু হয়েছে।  চলতি মাসেই স্থানীয় জাতের আঁটির লিচু বাজারে এসেছে। আর ৩ দিন পর আগামী ২৫ মে আসবে ঈশ্বরদীর রসালো বোম্বাই লিচু। এই লিচুর সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচু বাজারে না আসা পর্যন্ত লিচুর হাট সরগরম হবে না বলে মনে করছেন লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি আমিরুল ইসলাম সরদার বলেন, এবার ঈশ্বরদীতে শতকরা ২০-৩০ ভাগ গাছে লিচু ধরেছে। অতীতে কখনো লিচুর এমন ফলন বিপর্যয় দেখা যায়নি। এখন যেসব লিচু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, এগুলো দেশি লিচু (আঁটি লিচু) হিসেবে পরিচিত। এসব লিচুর গুণগত মান খুব বেশি উন্নত নয় এবং সুস্বাদু বা রসালোও নয়, তবে নতুন ফলের স্বাদ নিতে অনেকেই কিনছেন।

ঈশ্বরদীর বড় লিচুর বাজার আওতাপাড়া ও জয়নগর শিমুলতালা বাজারের আড়তদার এবং ঈশ্বরদী ফল ভান্ডারের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের বাজারে লিচু ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়েছে। ১০০ লিচুর এক আঁটি মানভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোম্বাই লিচু কয়েক দিনের মধ্যেই আসবে।

রূপপুর গ্রামের লিচু চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, আমার ৫০ বছরের লিচু চাষের ইতিহাসে এমন ফলন বিপর্যয় দেখিনি। অন্য বছর এসময় দেশি লিচুর বেচাকেনা জমজমাট হয়ে ওঠে, তবে এবার লিচুর ফলন খুব কম, সেজন্য বেচাকেনা খুবই কম। লিচুর চাহিদা মেটাতে অপরিপক্ব লিচু বাজারে তোলা হয়েছে। দামও মোটামুটি চড়া।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচুর জাতের মধ্যে রয়েছে মোজাফ্ফর (দেশি), বোম্বাই ও চায়না। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার ফলন একেবারেই কম।

জানা গেছে, এ বছর ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। এবার লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরাও। তবে ঈশ্বরদীতে লিচুর উৎপাদনে এবার যে ধস নামবে সে তথ্য কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা আগেই জানিয়েছিলেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩১০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। প্রথম দিকে আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে মুকুল আসেনি। কিন্তু চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে যেভাবে লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে তাতে ভালো ফলনের আশা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে কৃষকের মনে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লিচু গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। এ জন্য আমরাও উদ্বিগ্ন। আবহাওয়ার এ অবস্থা সপ্তাহজুড়ে চললে গড় হিসেবে লিচুর উৎপাদন আরো ৩০ ভাগ কম হবে। এজন্য সেচ প্রদানসহ লিচু চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ফলন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা করার জন্য রোববার কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের শেষদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি আলোচকদের নির্দেশ দিয়েছেন—  তারা যাতে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে।

তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় হামাস যে পরিবর্তনের শর্ত দিয়েছে, সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

গত শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে এবং তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

তবে একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এমন কিছু সংশোধন চেয়েছে যার মধ্যে একটি হলো— স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলেও নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন করে কোনো হামলা হবে না।

গাজার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালের বরাতে জানানো হয়, আল-মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুগুলোর ওপর বোমা হামলায় এক চিকিৎসক ও তাঁর তিন সন্তানসহ সাতজন নিহত হন।

এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দুই মার্কিন কর্মী খান ইউনিস এলাকায় একটি গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। যদিও হামাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৩৩৮ জন নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ