শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে আবুল কাশেম মোতাইত (৪৫) নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের চরমাইঝারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবুল কাশেম স্বেচ্ছাসেবক দলের কুচাইপট্টি ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় অন্তত ১০টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে মাছ শিকার ও চরাঞ্চলের খাসজমি দখলে রাখা নিয়ে স্থানীয় মোতাইত ও খাঁ পরিবারের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। আজ দুপুরে মোতাইত পরিবারের একটি নৌকা নদীতে নামানো নিয়ে খাঁ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়া হয়। তখন কুচাইপট্টি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম খাঁ পরিবারের সদস্যদের গালাগাল করেন। এ ঘটনার জেরে কুচায়পট্টি সেরু মার্কেট এলাকায় কাশেমের ওপর হামলা করেন কাসেম আলী খাঁর সমর্থকেরা। তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে যান তাঁরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আবুল কাশেমের মৃত্যুর খবর চরমাইঝারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ১০টি বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয়টি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুলিশ কাশেমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

শরীয়তপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমান মাদবর বলেন, ‘আবুল কাশেম কুচাইপট্টি ইউনিয়নে আমাদের একজন নিষ্ঠাবান নেতা ছিলেন। আমরা জানতে পেরেছি, স্থানীয় বিরোধী পক্ষ তাঁকে হত্যা করেছে।’

হত্যাকাণ্ডের পরই কাশেম আলী খাঁ আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) মোহাম্মদ তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের পর দুই পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ান। তখন বেশ কিছু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ পর ব র র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে বাড়িঘরে লুটপাট-আগুন, এক পক্ষ এলাকাছাড়া

রাস্তা-সংলগ্ন বাড়ি দুটির ফটকে তালা ঝুলছে। রাস্তা থেকে বসতঘরের খোলা জানালা দিয়ে আগুনে পোড়া আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ছলিমের বাড়ির মুজিবুর রহমানের ঘরের চিত্র এটি।

গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে মুজিবুরের ঘরসহ ছলিমের বাড়ির গোষ্ঠীর ৩০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার পর ছলিমের বাড়ির লোকজন গ্রামছাড়া। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষ চান্দের বাড়ির লোকজন এই হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।

১৪ মে পূর্ববিরোধ ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মিয়াজুল হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি নাটাই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে এবং চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর লোক। তিনি সদর উপজেলা থেকে আশুগঞ্জের লালপুর পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পর ১৫ ও ১৬ মে চান্দের বাড়ি গোষ্ঠীর লোকজন প্রতিপক্ষ ছলিমের বাড়ির গোষ্ঠীর বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট চালায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরের নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের চান্দের বাড়ি ও ছলিমের বাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অনেক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। চান্দের বাড়ি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি সদস্য তকদির হোসেন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোবারক হোসেন। ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার, সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মিয়া, সাইদ মিয়া ও স্থানীয় বিএনপি নেতা কামাল হোসেন।

আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতা নিহত১৪ মে ২০২৫

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নাটাই মধ্যপাড়া, পশ্চিম পাড়া ও পূর্ব পাড়ায় ছলিমের বাড়ির লোকজনের অধিকাংশ বাড়িঘর ফাঁকা। নারী-পুরুষ কেউ নেই। বাড়িঘরে তালা ঝুলছে। বাইরে থেকে আগুনে পোড়া, লুটপাট ও ভাঙচুরের অবশিষ্ট অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। মধ্যপাড়ায় কয়েকজন বৃদ্ধ নারীকে দেখা যায়। তাঁদের একজন মুজিবুর রহমানের বাড়ির ফটকের তালা খুলে দিলে ভেতরে ঢুকে বসতঘরে আগুনে পোড়া আসবাব ও তোশক থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কয়েকজন জানান, তাঁদের ৪২ ভরি স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে। এ ছাড়া ৯ জনের ৩৭টি গরু নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।

নাটাই মধ্যপাড়ার জামাল মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, গত বুধবার রাত নয়টার দিকে চান্দের বাড়ির লোকজন অতর্কিতে হামলা চালায়। কোলের তিন মাস বয়সী ছেলেকে টানাহেঁচড়া করেছে। বসতঘরের পাঁচটি কক্ষে তারা আগুন দিয়েছে। আগুনে সব পুড়ে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা–লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। গত শনিবার সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে বাড়িঘরে লুটপাট-আগুন, এক পক্ষ এলাকাছাড়া