জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ১৭০ আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত বছর আগস্ট মাসের শেষ দিকে এ-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) চিঠি পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৩ জনের বৈধ-অবৈধ সব সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছে তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থা থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, মহাপরিচালক জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সম্পদের হিসাব চাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার, বোন শেখ রেহানা ও তাঁর পরিবার, সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, সাবেক সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গসংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, মামলা তদন্তের স্বার্থে আসামির সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। এটি তদন্ত সংস্থার চলমান প্রক্রিয়া। কার কী পরিমাণ সম্পদ আছে, সেটি তদন্ত কর্মকর্তার জানা প্রয়োজন। তা ছাড়া ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সঙ্গে আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। এসব কারণে তাদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। সম্পদের হিসাব ছাড়া কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে সেটা অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তা ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা থেকেও এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দেওয়া বা সম্পদ বাজেয়াপ্ত ঘোষণার বিধান আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম সমকালকে বলেন, মামলা তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেক কর্মকর্তা আসামিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে থাকেন। এটি তাদের নিজস্ব উদ্যোগ। তবে রায়ের সময় ট্রাইব্যুনাল মনে করলে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এসব সম্পদ দিতে পারেন বা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে পারেন।
এদিকে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩৪২টি অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬২ জন এবং ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ব্যক্তির জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পরোয়ানা জারির পর ৫৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি ৮৭ আসামি পলাতক। ৪২টি মামলার তদন্ত চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত স স থ কর মকর ত র পর ব র স থ বর অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চসিকের ‘হেলথ কার্ড’ চালু
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচালিত পাঁচটি বিদ্যালয়ে ‘স্টুডেন্ট হেলথ কার্ড’ চালু করা হয়েছে। স্কুল পর্যায়ে এ কার্যক্রম দেশে প্রথম বলে দাবি করেছে চসিক কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার নগরের কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। হেলথ কার্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাদান এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করা হবে।
হেলথ কার্ড চালু করা অন্য চার প্রতিষ্ঠান হলো– পাথরঘাটা সিটি করপোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, গুলএজার বেগম সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, ইমারাতুন্নেসা সিটি করপোরেশন কিন্ডারগার্টেন ও পাঁচলাইশ কিন্ডারগার্টেন।
চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষামূলক পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হলে ধীরে ধীরে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও এর আওতায় আনা হবে।
অনুষ্ঠানে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা শুধু অভিভাবকদের নয়, বরং প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনেরও দায়িত্ব। হেলথ কার্ডের মাধ্যমে শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাদান এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্টুডেন্টস হেলথ কার্ডে শিক্ষার্থীর পরিচিতিমূলক তথ্য– জন্মতারিখ, বিদ্যালয়ের নাম, শ্রেণি, অভিভাবকের নাম ও যোগাযোগ ঠিকানা সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি ৫ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত মোট ১৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রেকর্ড সংরক্ষণ করা যাবে। পরীক্ষায় ওজন, উচ্চতা, দাঁতের অবস্থা, চোখ-কান, ত্বক-চুলের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ এবং হিমোগ্লোবিনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কার্ডের একটি পৃথক অংশে টিকাদান-সংক্রান্ত তথ্য থাকবে, যাতে বিসিজি, পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, এমআর, পেন্টাভ্যালেন্ট, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, র্যাবিসসহ গুরুত্বপূর্ণ টিকার রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি টিমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত এসব তথ্য সংরক্ষণে সহায়তা করবেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা ধরা পড়লে তারা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। মুখ্য আলোচক ছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী। বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মদ ও চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা।