পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়েছে রাখাইনদের গুরুদক্ষিণা উৎসব। শুক্রবার (২৩ মে) সকাল ১০টায় উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের তুলতলী গ্রামের বৌদ্ধ বিহারে এ উৎসব শুরু হয়।
উৎসব উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলার রাখাইন উপাসক-উপাসিকারা বৌদ্ধ বিহারে এসে পঞ্চশীল গ্রহণ করেন। পরে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সঙ্গরাজ ভান্তে উকুইনন্দা মহাথেরো মহোদয়কে গুরুদক্ষিণা প্রদান শেষে আর্শিবাদ নেন। এসময় পেছনের ভুলভ্রান্তি ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করেন।
এছাড়াও দিনভর আহার প্রদান ও ধর্মীয় আলোচনাসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করেন রাখাইন সম্প্রদায়। প্রতিবছর বর্ষাবাসের আগে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ উৎসবটি উদযাপন করে আসছে তারা।
কলাপাড়া চৌরাস্তা এলকার রাখাইন পাড়ার বাসিন্দা মংখেলা বলেন, “সঙ্গরাজ ভান্তে উকুইনন্দা মহাথেরো মহোদয়ের ২৭তম আচারিযা উপলক্ষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে এসেছি। পরে গুরুদক্ষিণা প্রদান শেষে তার আর্শীবাদ নিয়েছি। ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে আমরা দিনটি উদযাপন করছি।”
তুলাতলী গ্রামের মং চো ডেন বলেন, “বিভিন্ন রাখাইন পাড়ার লোকজন গুরুদক্ষিণা দিতে আমাদের এখানে আসেন। আমরা সবাই পেছনের ভুলত্রুটি ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করেছি।”
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ইন্দ্রর বংশ ভিক্ষু বলেন, “রাখাইন উপাসক-উপাসিকাদের আয়োজনে গুরুদক্ষিণা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মধ্যে যারা বৌদ্ধ ভিক্ষু রয়েছেন এদের মধ্যে যারা সিনিয়র তাদের কাছে জুনিয়ররা পেছনের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আবার সিনিয়াররও জুনিয়র ভিক্ষুদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “সকালে এখানে পঞ্চশীল গ্রহণের পর উপাসক-উপাসিকারা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ৮৬ বছর বয়সী সঙ্গরাজ ভান্তে উকুইনন্দা মহাথেরো মহোদয়কে গুরুদক্ষিণা প্রদান করেছেন। প্রতিবছরই আমরা এ অনুষ্ঠানটি উদযাপন করি।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন র খ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
চর্যাগানের সুরে আদি সংস্কৃতির দ্যোতনা
চর্যাগান ধরেছেন সাদা পোশাক পরা সাধুরা। তাদের সুরে বিমোহিত দর্শনার্থী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আওয়াজ, সৃষ্টি করছে মায়াজাল। বাইরে বৃষ্টির ধারা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
ভাবসাধকদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয়বারের মতো তিন দিনব্যাপী চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫-এর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে এমন চিত্র দেখা গেছে। ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের যুগপূর্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানটি হয় দুটি পর্বে। আলোচনা পর্ব সেমিনার কক্ষে এবং চর্যাগান স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গানের অংশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা আর সেখানে গড়ায়নি। তাই ছাদের নিচেই সাধুরা ছড়ান সুরের লহর। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাবনগর সাধুসঙ্গের শিল্পীরা সমবেতভাবে লুইপা রচিত চর্যাপদের প্রথম পদটি পরিবেশন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ফ্রান্স থেকে আসা লালনপন্থি সাধিকা ফকির দেবোরাহ জান্নাত। তিনি বলেন, আদি সংস্কৃতির মধ্যেই মানবের মুক্তি। চর্যাপদের গানে তার নির্দেশনা রয়েছে। আজকে সাধকরা যে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ করেছেন, তা এ দেশের প্রাচীন সাধনার সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছে। নিজের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানোর জন্য চর্যাগান থেকে লালন সাঁইয়ের গানের কাছে, জ্ঞানের কাছে ফিরতে হয়। বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি চর্যাপদ থেকে ছয়টি গান পরিবেশন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক-শিক্ষক ড. কিথ ই কান্তু। তিনি বলেন, চর্যাপদের গান বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের অংশ। এ গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাব-সাধকরা তাদের যে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের সুরকার, শিল্পী ও প্রশিক্ষক সাধিকা সৃজনী তানিয়া ও ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের শিল্পী বাবুল আক্তার বাচ্চু। স্বাগত ভাষণ দেন গবেষক ও নাট্যকার ড. সাইমন জাকারিয়া।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের আসরে চর্যাগান পরিবেশন করেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা সাধকশিল্পী বাবুল আক্তার বাচ্চু, লুৎফর রহমান, আফজাল হোসেন, সোহেল, সানোয়ার, খলিল, আলী আজম, ফারুক হোসেনসহ অনেকে। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন নূরুননবী শান্ত ও কবি শাহেদ কায়েস। চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব-২০২৫ চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত।
আজকের আয়োজন
আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সাধকশিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে। ‘চর্যা-সাধনার উত্তরাধিকার: অতীশ-চৈতন্য-লালন’ শীর্ষক সংগীত-সেমিনারে প্রাচীন চর্যাপদের গানের পাশাপাশি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের চর্যাগান ও লালন সাঁইয়ের গান পরিবেশনের মাধ্যমে বক্তৃতা করবেন বরিশালের সাধক কবি ও চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সুরকার-শিল্পী শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের সাধকশিল্পী বাউল অন্তর সরকার, শরীয়তপুরের সাধকশিল্পী শিলা মল্লিকসহ অনেকেই।
চর্যাগান হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য নিদর্শন, যা চর্যাপদ নামেও পরিচিত। এটি মূলত অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যদের সাধনবিষয়ক গান ও সংকলন।