ঈদের ছুটি সমন্বয়ে আজ খোলা সরকারি অফিস- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
Published: 24th, May 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি মিলছে। তাই ঘোষণা অনুযায়ী ছুটি সমন্বয়ে শনিবার (২৪ মে) সরকারি সব অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক খোলা রয়েছে।
এর আগে গত ১৭ মে একইভাবে দেশের সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সরকারি নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ঈদ উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এই বর্ধিত ছুটির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্যই দুটি শনিবার অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অফিস আদেশেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ২৪ মে তাদের মূল ক্যাম্পাসসহ দেশের সব আঞ্চলিক কেন্দ্রেও স্বাভাবিক দাপ্তরিক কার্যক্রম চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সই করা এই আদেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগীয় প্রধানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও পৃথক এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, শনিবার দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে এবং সেখানে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম চলবে। একইভাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে যে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ২৪ মে খোলা থাকবে।
নির্বাহী আদেশের ফলে ছুটি শুরু হবে আগামী ৫ জুন, শেষ হবে ১৪ জুন।
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ মে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ১১ ও ১২ জুন নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আগামী ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি এবং দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে ১৭ মে (শনিবার) ও ২৪ মে (শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা রাখার ঘোষণা করা হলো। ছুটিকালীন সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এবং সাপ্তাহিক ছুটির ওই দুই দিন সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস খোলা থাকবে।
তবে বাড়তি ছুটির এই দুই দিনে জরুরি সেবায় নিয়োজিত সরকারি দপ্তরগুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছিল প্রজ্ঞাপনে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতায় পড়বে না।
হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন।
চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতায় পড়বেন না বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব সরক র কর ম র
এছাড়াও পড়ুন:
২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর
৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর
কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।
প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন।
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ