খাবার থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুভাবেই প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান অপরিহার্য।
থাইরয়েড হরমোন (টি৪ ও টি৩) সংশ্লেষণে আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব হাইপোথাইরয়েডিজম ও গলগণ্ড রোগের কারণ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত গ্রহণ থাইরয়েডের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের থাইরয়েডের রোগ আছে।
টি৪ হরমোনকে আরও সক্রিয় টি৩-তে রূপান্তর করতে সহায়তা করে সেলেনিয়াম। পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে থাইরয়েডকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেলেনিয়ামের ঘাটতি বা বাড়তি দুটিই ক্ষতিকর।
জিংক হরমোন সংশ্লেষণ ও রূপান্তরে ভূমিকা পালন করে এবং ঘাটতি হাইপোথাইরয়েডিজমে অবদান রাখতে পারে। হরমোন উৎপাদনে সরাসরি যুক্ত না হলেও আয়রন থাইরয়েডের কার্যকারিতা সমর্থন করে। এটির ঘাটতি হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করতে পারে।
খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক
কিছু খাদ্য উপাদান থাইরয়েডের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রুসিফেরাস শাকসবজি (যেমন বাঁধাকপি, ব্রকলি ও কেল) হলো গয়টারোজেনিক, যা গলগণ্ড বাড়ায়। তবে এগুলো রান্না করলে তাঁদের গলগণ্ডের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। সয়া প্রচুর পরিমাণে খেলে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের আয়োডিনের মাত্রা কম বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার লেভোথাইরক্সিন শোষণকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণের আগে আলাদাভাবে খালি পেটে ওষুধ খাওয়া উচিত।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর চর্বি ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা অটোইমিউন থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এ ছাড়া সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা আছে, এমন ব্যক্তিরা গ্লুটেনমুক্ত খাবার থেকে উপকৃত হতে পারেন। কারণ, এটি হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিসের মতো অটোইমিউন থাইরয়েড রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কেউ কেউ অটোইমিউন প্রোটোকল খাবার গ্রহণ করেন, তবে এ জন্য পেশাদার তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন। নিরামিষাশীদের খাদ্য নিয়ে যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রন গ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।
পরামর্শ● আয়োডিনযুক্ত লবণ ও আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিতভাবে খান।
● সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রন–সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
● বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্যদানা খেতে হবে।
● সবজি রান্না করে খেতে হবে। সয়া পরিমিত খাবেন।
● থাইরয়েড ওষুধের জন্য সঠিক সময় অনুসরণ করুন।
● বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে খাবারের তালিকা তৈরি করুন।
ডা.
শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)
আগামীকাল পড়ুন: নবজাতকের হাইপোথাইরয়েডিজম
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতের বৃষ্টিতে ৪৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতভর বৃষ্টিতে পাকা-আধাপাকা ধান, ভুট্টা, শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১০ বছরে একরাতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই।
আরো পড়ুন:
তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, মিলেছে শীতের আভাস
গাছ থেকে সাইনবোর্ড ও পেরেক তোলার অভিযান হিলি পৌরসভার
লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সারা দিন আকাশ মেঘলা ছিল। সন্ধ্যার পরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকে।
জেলার বিদিরপুর এলাকার আমন ধান চাষি আমানউল্লাহ বলেন, ‘‘আমার দুই বিঘা জমির ধান পুরোপুরি ডুবে গেছে। কয়েক দিন পরে ধান কাটা শুরু হতো। শেষ মুহূর্তে দুর্যোগের কবলে পড়ে অধিকাংশ ধান শেষ হয়ে গেছে।’’ একই এলাকার আরেক চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘আমরা কল্পনাও করিনি এই সময়ে এসে এত বৃষ্টি হবে।’’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর রোপা আমন ধান, ৩৭ হেক্টর আলু, ৯১৭ হেক্টর সরিষা, ৩১৬ হেক্টর শাকসবজি, ২৪৪ হেক্টর পেঁয়াজ, ২৫০ হেক্টর মাসকলাই, ৬৮ হেক্টর ভূট্টা, ১৩ হেক্টর স্ট্রবেরি এবং ৩৭৯ হেক্টর রসুন রয়েছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে, সেগুলো কিছুটা ক্ষতি হবে। এর পাশাপাশি শাকসবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।’’
তবে জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে এবং আর বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/শিয়াম/বকুল