হাতিরঝিলের মতো আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ লক্ষ্যে চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও খননে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে দেড় বছরের মধ্যে চ্যানেলটি ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হয়েছে। নেই তেমন পানিপ্রবাহ। দুর্গন্ধ ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরাট হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে প্রাচীন এই জলপথ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করা না গেলে শতকোটি টাকা খরচ করেও এ ধরনের প্রকল্পের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আদি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় খননের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটির এক পাশে কামরাঙ্গীরচর। এই এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মাটি তুলে কিছু কাজ করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবার জায়গাটা বদলে যাবে; কিন্তু এখন আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শুধু টাকা খরচ হয়েছে, সুফল কিছু নেই।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করা না গেলে শতকোটি টাকা খরচ করেও এ ধরনের প্রকল্পের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আদি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় খননের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।নেই নতুন উদ্যোগ

একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর শাখা এই আদি চ্যানেল ছিল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটি দিয়েই পণ্য পরিবহন ও নৌযান চলাচল হতো। শহরের সম্প্রসারণ, দখল ও দূষণের কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে চ্যানেলটি উদ্ধার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকৃত কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে চ্যানেলটির প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খনন ও দখলমুক্ত করার কাজ চালানো হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ছিল বর্জ্য ও মাটি অপসারণ এবং সীমানাখুঁটি বসানো। সে সময় বলা হয়েছিল, এই চ্যানেলটিতে নান্দনিক বসার স্থান ও সবুজায়ন করা হবে। তবে সেই কাজ আর এগোয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর পরিকল্পনা তিনি শোনেননি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে এই চ্যানেল পর্যন্ত পানিপ্রবাহ যেন ঠিক থাকে, সেই কাজ তাঁরা অব্যাহত রেখেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, চ্যানেলটির বেশির ভাগ অংশে কচুরিপানা জন্মেছে। পলি জমে অনেক জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। চ্যানেলের পাশে ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়েছে। অনেক জায়গায় পানি না থাকায় চ্যানেলটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। বর্তমানে চ্যানেলের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই, এত টাকা খরচ করে মাটি অপসারণ করা হয়েছিল।

সিটি করপোরেশন মাটি তুলে কিছু কাজ করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবার জায়গাটা বদলে যাবে; কিন্তু এখন আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শুধু টাকা খরচ হয়েছে, সুফল কিছু নেই।কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের অবস্থান লালবাগের ইসলামবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার মধ্যে। এর সীমানা কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে হাজারীবাগের রায়েরবাজার পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি সচল থাকলে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার জলাবদ্ধতা কমে যাবে। একসময় মৃতপ্রায় চ্যানেলটিকে হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর কথা বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলকে হাতিরঝিলের চেয়েও বেশি নান্দনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে তাঁদের।

তবে বর্তমানে এই চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করার নতুন কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন সেই সময়ে আদি চ্যানেল খনন ও পুনরুদ্ধারের দায়িত্বে থাকা ডিএসসিসির পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের। আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করতে সে সময় উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

নগরবাসীর প্রশ্ন—যদি দেড় বছরের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার খননকাজের সুফল হারিয়ে যায়, তাহলে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারকারী নাগরিকদের আচরণ বদলানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে উন্নয়ন শুধু খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।নজরদারির অভাব

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সে সময় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চ্যানেলের পাশে হাঁটার পথ তৈরির পরিকল্পনা থেকেই পাড়ে কিছু পলি ও বর্জ্য ফেলা হয়েছে। চ্যানেল পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরুর আগে এটি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়েছিল। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে থাকা বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙেও দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া কীভাবে এ চ্যানেলকে হাতিরঝিলের রূপ দেওয়া, বিনোদনের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা ও অবসর সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যায়, এ-সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগও দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির দুজন কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকার কারণে যত দিন যাচ্ছে, চ্যানেলটি আবার মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পানি অপসারণ করতে হলে এই চ্যানেলটি সচল রাখতে হবে।

নগরবাসীর প্রশ্ন—যদি দেড় বছরের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার খননকাজের সুফল হারিয়ে যায়, তাহলে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারকারী নাগরিকদের আচরণ বদলানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে উন্নয়ন শুধু খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই চ য ন ল কর মকর ত ড এসস স প রকল প ব যবস থ র এল ক ৩০ ক ট র প রক এল ক র হয় ছ ল র স ফল প রক শ বর জ য বলছ ন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ