সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বা সামাজিক ভীতিতে যারা ভুগতে শুরু করেন এক সময় তাদের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। যারা সোশ্যাল অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন তাদের যেকোনো ধরনের সিচুয়েশনের এক রকম অহেতুক ভীতি তৈরি হয়। এই ধরণের মানুষেরা ভাবতে থাকে তাকে কেউ পছন্দ করে না।

মিটিংয়ে কথা বলা, সামাজিকভাবে কারও সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, নতুন কারও সাথে পরিচিত হওয়া বা  অন্য কারও সামনে কিছু পারফর্ম করার সময় সমস্যা অনুভব করেন। বিশেষ করে যে কাজগুলোতে আমাদের অন্যের চোখে নিজেদেরকে ইভ্যালুয়েট করার সুযোগ থাকে সেই জায়গাতে এক ধরণের অ্যাংজাইটি তৈরি হয়। এবং এর প্রভাবে নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। 

কাদের বেশি হয়: যারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। জেনেটিক বা জিনগত কারণে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি হতে পারে। আবার মস্তিষ্কের মিগডালায় যদি কোনো গুণগত মানের ত্রুটি থাকে তাহলেও হতে পারে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি। শৈশবে  যদি কেউ নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় বা কারো দ্বারা সমালোচনা, নেতিবাচক মন্তব্য, মজা, খারাপ আচরণ কিংবা বুলিংয়ের শিকার হয় তাহলেও পরবর্তীতে সোশ্যাল ফোবিয়া হতে পারে। 

আরো পড়ুন:

ঘুম থেকে উঠেই স্কোয়াট করছেন, এতে শরীরে যা ঘটছে

রাজধানীর জনবহুল এলাকায় সিগারেট কারখানা, বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ডা.

মেখলা সরকার, সাইকিয়াট্রিষ্ট একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘সোশ্যাল অ্যাংজাইটি দেখা দিলে ব্যাক্তির মনে হয়, আমাকে মনে হয় আরেকজন খুব নেতিবাচকভাবে দেখছে। আমাকে বোধহয় খুব অটোয়াড লাগছে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে ব্যক্তির পারফরমেন্স কিন্তু সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে যায়।’’

কি কি সমস্যা দেখা দেয়: 

গলা শুকিয়ে যায়

বুক ধড়ফড় করে

খুব নার্ভাস ফিল হয়

হাত কাঁপে

শ্বাসকষ্ট হতে পারে

মানসিক স্ট্যাবিলিটি নষ্ট হতে পারে

উল্লেখ্য, সোশ্যাল অ্যাংজাইটি মানুষের সামাজিক পটেনশিয়ালিটি নষ্ট করে দেয়। জীবনের প্রতি আগ্রহ করে যায়। এই সমস্যা দূর করতে সাইকোথেরাপির অংশ হিসেবে কিছু বিহেভিয়ার থেরাপি গ্রহণ করা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্  গ্রহণ করা উচিত।

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের শুধু এক জায়গায় আছে ড্রাগনস ব্লাড ট্রি 

একটি গাছ, যার রক্ত লাল। মাথা দেখতে অনেকটা ছাতার মতো, গঠন যেন কোনো গ্রহান্তরের জীবের মতো। এই প্রজাতির গাছের নাম ‘ড্রাগনস ব্লাড ট্রি’। দেখে মনে হয় যেন রূপকথার পাতা থেকে নেমে আসা কোনো চরিত্র। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ প্রজাতির গাছ এখন টিকে থাকার কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে। ফুরিয়ে আসছে তার শ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, আগ্রাসী পশুপালন আর দশকজুড়ে চলমান যুদ্ধ এই প্রজাতির গাছকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। এই বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছে একটি গোটা দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি। তবে ধূলিঝড় আর যুদ্ধের দেশ ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপে গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনপণ লড়াই করছেন একদল মানুষ। 

আরব সাগরের ওপর দিয়ে ধেয়ে আসা ধুলাময় বাতাসে উঁচু মালভূমিতে নিজের গোড়ালির চেয়ে নিচু এক চারাকে আগলে রেখেছেন সিনা কায়বানি। তিনি ও তাঁর পরিবার একটি নার্সারি পরিচালনার মাধ্যমে বিপন্ন এই প্রজাতির গাছ রক্ষায় একটানা লড়াই করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এসব গাছের মরে যাওয়া নিজের সন্তানকে হারানোর মতো।’

একসময় সোকোত্রা দ্বীপজুড়ে মাশরুমের মতো ছায়া দেওয়া মাথা আর কাঠের ভেতরে বইতে থাকা রক্তলাল রসের জন্য বিখ্যাত এই প্রজাতির গাছ ছড়িয়ে ছিল। 

হর্ন অব আফ্রিকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোকোত্রাকে গ্যালাপাগোস দ্বীপের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এটা এক নিঃসঙ্গ অথচ মোহময় দ্বীপ। এখানে ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। যার এক-তৃতীয়াংশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এর জীববৈচিত্র্য এতটাই বিস্ময়কর যে ২০০৮ সালে ইউনেসকো একে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদা দিয়েছিল। পাথর ভেদ করে উঠে আসা ‘বোতল গাছের’ ফুলে ওঠা কাণ্ড যেন শিল্পীর হাতে গড়া ভাস্কর্য। আরও আছে ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স গাছ, যাদের প্যাঁচানো ডালপালা আকাশের দিকে এমনভাবে উঠে যায় যে দেখলে মনে হয়, প্রার্থনায় মেলে ধরা দুটি হাত।

তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের কল্পনাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করে ‘ড্রাগনস ব্লাড ট্রি’। এটা যেন এক অপার্থিব গাছ। ড. সিউসের রঙিন কল্পকাহিনি থেকে উঠে আসা কোনো জীবন্ত চরিত্র। প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার পর্যটক এই দ্বীপে পা রাখেন; যাঁদের বেশির ভাগই আসেন ড্রাগনের রক্তাভ বনের পরাবাস্তব দৃশ্য দেখতে।

সোকোত্রা দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য স্থানীয় গাইড রাখা বাধ্যতামূলক এবং দ্বীপের বাসিন্দাদের পরিচালিত ক্যাম্পে থাকার নিয়মও রয়েছে। অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে স্থানীয়রা যেন বঞ্চিত না হন, সে কারণেই এ ব্যবস্থা। কিন্তু এই প্রজাতির গাছ যদি হারিয়ে যায়, তাহলে দ্বীপবাসীর জীবিকার একমাত্র ভরসাটিও হারিয়ে যাবে। এ কারণে গাছগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এরা সোকোত্রার আত্মা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ