১৯৭৫ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে নিজেদের বাড়িতে মেয়েকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন হান তে-সুন। মেয়ে কিয়ং-হা তখন শিশু। বয়স মাত্র চার বছর।

সেদিনের কথা মনে করে হান তে–সুন বলেন, ‘আমি বাজারে যাচ্ছিলাম। কিয়ং-হাকে বললাম, তুই চল না? কিন্তু সে জবাব দিল, “না, আমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি।” ফিরে এসে দেখি ও নেই।’

এরপর চার দশকের বেশি কেটে যায়। হান আর মেয়েকে খুঁজে পাননি। অবশেষে ২০১৯ সালে মা-মেয়ের পুনর্মিলন হয়। তবে তত দিনে বয়স বেড়ে মধ্যবয়সী নারীতে পরিণত হয়েছেন কিয়ং-হা। তিনি তখন মার্কিন নাগরিক হিসেবে পরিচিত। তাঁর কিয়ং–হা নামটিও নেই। সেটি বদলে রাখা হয়েছে লরি বেন্ডার।

হানের অভিযোগ, মেয়ে কিয়ং-হাকে তাঁদের বাড়ির কাছ থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর তাঁকে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেন সেখানকার একটি পরিবার তাঁকে লালন–পালন করতে পারে। তিনি গত বছরের অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মেয়ের অবৈধ দত্তক প্রক্রিয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে এ মামলা করেছেন তিনি।

শুধু হান নন—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত মানুষ দক্ষিণ কোরিয়ার বিতর্কিত বিদেশি দত্তক কর্মসূচির বিরুদ্ধে ভয়ানক সব অভিযোগ এনেছেন। এর মধ্যে আছে জালিয়াতি, অবৈধ দত্তক, অপহরণ ও মানব পাচারের মতো অভিযোগ।

হানের অভিযোগ, মেয়ে কিয়ং-হাকে তাঁদের বাড়ির কাছ থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর তাঁকে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেন সেখানকার একটি পরিবার তাঁকে লালন–পালন করতে পারে। হান গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এত দীর্ঘ সময় ধরে এবং এত বিপুল সংখ্যায় শিশুদের বিদেশে দত্তক দেওয়ার নজির বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। ১৯৫০-এর দশকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ শিশুকে বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশুকে পশ্চিমা দেশগুলোতে পাঠানো হয়।

চলতি বছরের মার্চ মাসে এক তদন্তে দেখা যায়, যথেষ্ট নজরদারি না করে দক্ষিণ কোরিয়ার একেকটি সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা নজরদারি না করায় বেসরকারি সংস্থাগুলো শিশুদের গণহারে বিদেশে পাঠিয়েছে। লাভের আশায় শিশুদের পণ্যের মতো করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ তদন্তের ফলাফল দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলার পথ খুলে দিতে পারে। হান আগামী মাসে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ মামলা দুটি যুগান্তকারী মামলার একটি। হান হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম কোনো জন্মদাতা অভিভাবক, যিনি তাঁর সন্তানকে বিদেশে দত্তক পাঠানোর ঘটনায় দেশটির সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইছেন। এর আগে ২০১৯ সালে দত্তক শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া এক ব্যক্তি দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিদেশে দত্তক হওয়া কারও পক্ষ থেকে মামলা করার ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার–পরিজনকে খুঁজে না পাওয়ার যন্ত্রণায় ভোগা ব্যক্তিদের প্রতি সরকার গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করছে।

সরকার আরও বলেছে, তারা হানের মামলাকে ‘গভীর অনুশোচনাবোধের’ সঙ্গে বিবেচনা করছে। মামলার রায়ের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

৭১ বছর বয়সী হান বিবিসিকে বলেন, সরকারকে এ ঘটনার দায় নিতে হবে।

হান বলেন, ‘আমি ৪৪ বছর ধরে মেয়েকে উদ্‌ভ্রান্তের মতো খুঁজে ফিরেছি। এই দীর্ঘ সময়ে কেউ কি একবারও আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে? না, একবারও না।’

আমি ৪৪ বছর ধরে মেয়েকে উদ্‌ভ্রান্তের মতো খুঁজে ফিরেছি। এই দীর্ঘ সময়ে কেউ কি একবারও আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে? না, একবারও না। —হান তে–সুন, দক্ষিণ কোরীয় মা

কয়েক দশক ধরে হান তে-সুন ও তাঁর স্বামী মেয়ের খোঁজ পেতে থানায় থানায় ছুটেছেন, অনাথ আশ্রমে গেছেন, মেয়ের সন্ধান চেয়ে শহরের অলিগলিতে বিজ্ঞাপন ঝুলিয়েছেন, এমনকি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমেও নিখোঁজ সংবাদ দিয়ে তথ্য চেয়েছেন।

হান বলেন, তিনি দিনের পর দিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মেয়েকে খুঁজেছেন। এতটাই হেঁটেছেন যে পায়ের নখগুলো খসে পড়েছিল।

১৯৯০ সালে এক টিভি অনুষ্ঠানের পর এক নারী হানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যাঁকে দেখে হান মনে করেছিলেন এটাই তাঁর মেয়ে কিয়ং-হা। তিনি সেই নারীকে কিছুদিন নিজের বাড়িতে এনে রাখেন। পরে সেই নারী স্বীকার করেন, তিনি আসলে হানের মেয়ে নন।

২০১৯ সালে হান ‘৩২৫ কামরা’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। সংগঠনটি বিদেশে দত্তক হিসেবে পাঠানো কোরীয় সন্তানদের ডিএনএ মিলিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের কাজ করে। আর এতে হানের জন্য নতুন এক পথ খুলে যায়।

ডিএনএ পরীক্ষায় লরি বেন্ডারের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়, যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার একজন নার্স। কয়েক দফায় হানের সঙ্গে ফোনালাপের পর লরি কোরিয়ায় আসেন। সিউলের বিমানবন্দরে ঘটে মা-মেয়ের আবেগঘন পুনর্মিলন। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হান তাঁর চুলে হাত বোলাতে থাকেন।

এই মামলা দুটি যুগান্তকারী মামলার একটি। হান হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম কোনো জন্মদাতা অভিভাবক, যিনি তাঁর সন্তানকে বিদেশে দত্তক পাঠানোর ঘটনায় দেশটির সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইছেন। এর আগে ২০১৯ সালে দত্তক শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া এক ব্যক্তিও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

হান বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে চুল কাটার কাজ করি। চুল ছুঁয়ে আমি ঠিক বুঝতে পারি, এটা আমার মেয়ের চুল কি না। আমি একবার ভুল করে ভেবেছিলাম তাঁকে পেয়েছি। তাই এবার তাঁর চুল স্পর্শ করে নিশ্চিত হতে চেয়েছি।’

মেয়েকে দেখে হানের প্রথম কথাই ছিল, ‘আমি অনেক দুঃখিত।’

হান বলেন, শৈশবে তাঁর মেয়ে যে বাড়িতে থাকতে পারেনি, সে জন্য নিজেকে তাঁর দোষী মনে হয়। মেয়ে তাঁর মাকে কতটাই না খুঁজে বেড়াচ্ছে তা নিয়ে ভাবতেন তিনি। এত বছর পর মেয়েকে দেখে মনে হলো, মায়ের জন্য কতটাই–না ভালোবাসা নিয়ে তিনি অপেক্ষা করছিলেন।

বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া আগের এক সাক্ষাৎকারে হান মেয়েকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি বর্ণনা করে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে হৃৎপিণ্ডে তৈরি হওয়া একটি ফুটো সেরে গেছে। এখন আমি নিজেকে পরিপূর্ণ একজন মানুষ মনে করছি।’

পুনর্মিলনের পর মা-মেয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন যে ১৯৭৫ সালের মে মাসে নিখোঁজ হওয়ার দিনটিতে আসলে কী ঘটেছিল।

ঘটনার দিন কিয়ং-হা বাড়ির কাছে খেলছিলেন। অপরিচিত এক নারী তাঁর কাছে এসে বলেন যে তিনি তাঁর মাকে চেনেন। ওই নারী কিয়ং-হাকে আরও বলেন যে তাঁর মায়ের আর তাঁকে দরকার নেই। এরপর ওই নারী কিয়ং হা-কে একটি রেলস্টেশনে নিয়ে যান। নারীর সঙ্গে ট্রেনে করে একটি গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তাঁকে সেখানে ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠায়। কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় এক দম্পতির কাছে দত্তক শিশু হিসেবে পাঠানো হয়।

অনেক বছর পর কিয়ং-হা জানতে পারেন, তাঁর নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে তাঁকে পরিত্যক্ত অনাথ হিসেবে দেখানো হয়—যার মা–বাবার পরিচয় জানা নেই।

এর আগে সাক্ষাৎকারে কিয়ং-হা এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘এটা যেন এক মিথ্যা জীবন কাটানো, যা কিছু জানা ছিল, তার কিছুই সত্য নয়।’

তবে শুধু কিয়ং-হার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেনি, দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন ঘটনা আরও দেখা যায়।

এশিয়া থেকে পশ্চিমে ‘শিশু ব্যবসা’

দক্ষিণ কোরিয়ার বৈদেশিক দত্তক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫০-৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট দেশটিতে তখন আনুমানিক এক লাখ শিশু অনাথ ও বাস্তুচ্যুত ছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন সমাজে দত্তক নেওয়ার প্রবণতা খুব কম থাকায় সরকার তখন ‘মানবিক উদ্যোগ’ হিসেবে বৈদেশিক দত্তক কার্যক্রম শুরু করে।

এ কর্মসূচি পরিচালনার পুরোপুরি দায়িত্ব ছিল বেসরকারি দত্তক সংস্থার হাতে। যদিও তখন সরকারিভাবে এসব সংস্থার ওপর নজরদারি ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আইনগত সুবিধার ভিত্তিতে সংস্থাগুলোর ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়।

চার দশকের বেশি সময় ধরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে বেড়িয়েছেন হান তে-সুন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ব র দ ধ র সরক র র ২০১৯ স ল হ ন বল ন পর ব র ন র পর প রথম র একট একব র

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েদের জন্য সবার আগে দরকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: মিথিলা

বহু পরিচয়ে তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান–অভিনেত্রী, গায়ক, মডেল, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, মা। একেকটি পরিচয়ের ছায়া পেরিয়ে যে কাহিনি তাঁর জীবনগাথার অন্তরালে জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে, তা হলো–একজন নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার অদম্য সংগ্রাম। তিনি রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে রেখেছেন। মিথিলার পরিচয় শুধু শোবিজ তারকা নন বরং নারীর প্রেরণার প্রতীকও। তিনি জানেন কীভাবে ব্যক্তিগত ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েও নিজের স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হয়। যেমন গানে, যেমন পর্দায়, তেমনই বাস্তব জীবনের দৃঢ়তায়।

সাম্প্রতিক সময়ে যখন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জনমনে কৌতূহল তুঙ্গে, তখন মিথিলা নীরবে উচ্চারণ করেছেন অন্য এক বার্তা–নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার। তাঁর নিজের কথাতেই উঠে এসেছে জীবনের কঠিন অধ্যায়গুলো। ২৩ বছর বয়সে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, অল্প বয়সেই মা হয়ে ওঠা, স্বপ্নের সংসারের ভেঙে যাওয়া, নতুন করে শুরু করার সংগ্রাম–সবই যেন তাঁকে তৈরি করেছে এক নতুন রূপে।

মিথিলা বলেন, ‘২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনটাকে অন্যরকম ভাবে দেখে এসেছিলাম। হঠাৎ করে সেটি পাল্টে গেল... মেয়েদের নিজেদের কোনো আসল জায়গা থাকে না। নয় শ্বশুরবাড়ি, নয় বাপের বাড়ি। এখন এত বছর পর আমার নিজের একটা জায়গা আছে। এর কৃতিত্ব কিন্তু সম্পূর্ণ আমার।’ এই কৃতিত্ব কেবল কথায় নয়, কর্মেও ধরা পড়ে। ইউনিসেফ, ব্র্যাক কিংবা ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাঁর কাজ, তাঁর গবেষণা, তাঁর শিশু মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা, এমনকি পিএইচডি পর্যায়ের একাডেমিক পথচলা–সব মিলিয়ে তিনি আলাদা। 

অভিনয় থেকেও তিনি কখনও দূরে যাননি। ২০২৪ সালের শুরুতেই মুক্তি পায় ‘জলে জ্বলে তারা’। এরপর ‘অ্যালেন স্বপন ২’-এ তাঁর অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করে। ফিচার ফিল্ম থেকে নাটক, আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট থেকে সীমান্ত পেরোনো সংলাপ–সবখানেই তাঁর সরব উপস্থিতি।

তবে এই আলোকিত পথচলা খুব সহজ ছিল না। বিচ্ছেদের পর জীবনের দায়ভার একাই নিতে হয়েছিল তাঁকে। আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না, ছিল অনিশ্চয়তা। একসময় নিজের ও সন্তানের জন্য একটি গাড়িও ছিল না তাঁর হাতে। অথচ অভ্যাস ছিল ভিন্ন। তখন বুঝেছিলেন, একজন নারীর নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটা জরুরি। তাঁর ভাষায়, ‘আমার একটা গাড়িও ছিল না। আমি গাড়িতে চলাফেরায় অভ্যস্ত ছিলাম, আমার বাচ্চাও তাই ছিল। আমি তখন বুঝে গিয়েছিলাম, জীবনে নিজের জায়গা থাকাটা খুব দরকার। মেয়েদের জন্য সব থেকে আগে দরকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা না থাকলে মেয়েরা অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।’

আজকের মিথিলা সেই সব বাধা টপকে দাঁড়িয়ে আছেন অনন্য উচ্চতায়। একদিকে সংসার সামলাচ্ছেন, অন্যদিকে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। একই সঙ্গে মাতৃত্ব, ক্যারিয়ার, পড়াশোনা আর সমাজ নিয়ে সচেতন ভাবনা–সবকিছুই নিজের মতো করে সামলে নিচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল যতটা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে, তার চেয়েও বেশি আলোচনার দাবিদার তাঁর কর্মজীবন। কারণ, আজকের এই ‘মিথিলা’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে শ্রম, সাহস, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকার এক অসামান্য যাত্রা। তবে এই মিথিলারও গুঞ্জন পিছু ছাড়ছে না। এসব জল্পনা বা গুঞ্জন মোটেই কানে নেন না মিথিলা। অভিনেত্রীর কথায়, ‘এত ব্যস্ত থাকি আমার সময় নেই এগুলো মাথায় নেওয়ার। নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। আমার স্বামীও তাই। যারা কাজের মানুষ তারা ঠিকই বোঝে। তারা নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অন্যের কাজেও ঝামেলা করে না।’

মিথিলা বলেন, ‘যাদের কোনো কাজ নেই তারাই সারাক্ষণ এসব নিয়ে মেতে থাকে। মানুষ কী ভাবছে সেগুলো নিয়ে আমি কখনোই চিন্তিত নই। আমার পরিবার, সন্তান, আশপাশের মানুষগুলোই আমার সাপোর্ট সিস্টেম, তারা সবাই আমাকে বোঝে।’


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ