যদি বলি আগামীকাল রাস্তায় নামবো, তাহলে তিনি ২৪ ঘণ্টাও থাকতে পারবেন না: গয়েশ্বর
Published: 25th, May 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘ক্ষমতায় থাকার জন্য ড. ইউনূস মৌলবাদী গোষ্ঠীকে এক করে ফেলেছেন। জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে অন্যদের বিভক্তি তৈরির চেষ্টা করছেন। আমরা যদি বলি যে আগামীকাল রাস্তায় নামবো, তাহলে মনে হয় তিনি ২৪ ঘণ্টাও থাকতে পারবেন না। কিন্তু আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোন। তার সাফল্য মানেই হলো, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সফলতা। আজ যারা জুলাই আন্দোলনের মুকুট চায়, তাদের তো মুকুট অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। আমরাও দিয়েছি।’
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও’ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা চলে যাওয়ার কথা বলেছেন- এটা কেউই বিশ্বাস করছে না। মানুষ বলাবলি করছে যে, ড.
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই তার পদত্যাগের নাটক সাজানো হয় বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘নাহিদকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা বকাবকি করলেন, ‘তোমরা যা শুরু করেছো, সেটা বন্ধ না করলে আমি থাকবো না।’ নাহিদ বাইরে এসেই তার (প্রধান উপদেষ্টার) পদত্যাগের ইচ্ছার কথা জানালেন। যদি তিনি পদত্যাগের কথা বলেই থাকেন, তাহলে পরদিনই একজন উপদেষ্টা কীভাবে সেটা অস্বীকার করেন।’
এনসিপিসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পর ৯০ ভাগ ছাত্র পড়ার টেবিলে ফিরে গেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত সচিবালয়ে যাইনি। কিন্তু তারা (বৈষম্যবিরোধী নেতারা) এত ঘন ঘন সচিবালয়ে যায় কেন, ডিসি অফিসে যায় কেন? ওসির টেবিলের সামনে বসে থাকে কেন? তারা বিভিন্ন দপ্তরে যাচ্ছে, ডিসি-এসপিদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আজ যে জাতি তাদের মাথায় তুলেছে, সেই মাথা থেকে যদি পায়ের তলায় পড়ে যায় সেটার জন্য কি জাতি দায়ী?’
দেশে দুর্নীতি কমেনি বরং বেড়েছে- এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘হাসিনার আমলের ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনও রয়ে গেছে। এই সরকার তো দুর্নীতি রোধে হাত দেয়নি! কয়জনকে ধরা হয়েছে? ধরার উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বিচারও করেনি। আমাদের অন্য কিছু মনে করবেন না। আমরা লড়াই করা জাতি। গণতন্ত্র, জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার আগে ঈশ্বর যেন আমার মৃত্যু না দেন।’
দেশের বন্দর নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘বন্দর চালানোর জন্য যদি দেশে লোক না থাকে তাহলে বিদেশ থেকে আমরা এক্সপার্ট আনতে পারি। যেমনটি গার্মেন্টস শিল্প উন্নয়নে বিদেশের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লিজ দিতে হবে কেন? এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘নয় মাসে একজনেরও বিচার হয়নি। অথচ সরকার চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি- সেটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রকে আমরা কারও কাছে দেবো না।’
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেয়ার বিষয়ে গণশুনানি করুন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন। অন্তর্বর্তী সরকার সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সরকারের উচিত অতিদ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।’
সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বন্দর লিজ ও করিডোর দেওয়া, এনবিআর ভাঙা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করবেন না। দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নির্বাচিত সরকার করিডোর, বন্দর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ এলিডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম। আরও বক্তব্য রাখেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ পদত য গ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গোমতীর চরে ১১ হাজার হেক্টর সবজিক্ষেত পানির নিচে
হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর দুই পাশের চরের ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে চরের বিস্তীর্ণ এলাকার সবজির ক্ষেত। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই এবার হঠাৎ বন্যায় ডুবছে তাদের ফসল। কষ্টের ফসল হারিয়ে যাওয়ায় কাঁদছেন চরের কৃষকরা। অনেককেই ডুবন্ত জমি থেকে নানা জাতের সবজি তুলে নিতে দেখা গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, হঠাৎ গোমতীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমতলী ও কাচিয়াতলীসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চরের যেসব জমিতে করলা, মুলা, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছিল, তা এখন পানিতে ডুবে আছে। কৃষকের অনেকেই মাথায় হাত দিয়ে নদীর কিনারায় বসে আছেন। কৃষকরা বলছেন, আর মাত্র দুই দিন সময় পেলেই এসব সবজি বাজারে তোলা যেত।
আমতলী এলাকার কৃষক সুজন মিয়া জানান, গোমতী নদীর এ চরে প্রায় ৩ একর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন। আর দুই দিন পরই এসব ফসল বাজারে বিক্রি করা যেত। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে সব ফসল তলিয়ে গেছে। তার ভাষ্য, তিনি ব্যাংক ঋণ ও কিস্তি নিয়ে দুই বছর আগে কৃষিকাজ শুরু করেছেন। তার প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর।
কাচিয়াতলী এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। এবারের বন্যায় আমাদের সব ফসল পানিতে ডুবে গেল। পানিতে নেমে কিছু করলা সংগ্রহ করেছি, বাকি সব নষ্ট হয়ে গেছে।’ বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবীদ্বারের বেশ কিছু এলাকার চিত্র একই।
পাঁচথুবী এলাকার কৃষক আবদুল কাদের ও আবদুস সালাম জানান, ৩-৪ দিন সময় পেলেই সবজি বিক্রি করতে পারতেন তারা। কিন্তু পানিতে সব ফসল ডুবে গেছে। মাচায় কিছু করলা আছে, সেগুলো নৌকায় করে গিয়ে সংগ্রহ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, গোমতী নদীর চরে চলতি বন্যায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সব উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেয় তাহলে তারা পাবেন।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, গোমতী নদীর বিপৎসীমার সর্বোচ্চ পরিমাপ ১১ দশমিক ৩০ মিটার হলেও পানির উচ্চতা ৬ থেকে ৮ মিটার হলেই চরের অনেক কৃষিজমি ডুবে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই নদীর পানি ৯ দশমিক ৪৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল।