বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মানবিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। সোমবার  (২৬ মে) সকালে কাজীপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজ মাঠে আয়োজিত এই মেডিকেল ক্যাম্পে ১ হাজার ৪৯৩  জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়।

সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার পারভেজ ভুইয়া জানান, বগুড়া সেনানিবাসের ১১ পদাতিক ডিভিশনের ৪০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির ব্যবস্থাপনায় এই ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পে ৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিসিন, চক্ষু, গাইনি, শিশু ও চর্ম রোগের ১ হাজার ৪৯৩ জন রোগীকে চিকিৎসা ও ৫১ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সেনাবাহিনীর মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। জটিল রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ও অপারেশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কাজে সম্পৃক্ত হবে না সেনাবাহিনী: সেনা সদর

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না: সেনাবাহিনী

অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সেনাবাহিনী ভবিষ্যতেও এ ধরনের সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ আর্মি ক্যাম্প অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ জানান, সিরাজগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায় এ ধরনের মেডিকেল ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকবে।
 

ঢাকা/রাসেল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স র জগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিন যে দুই জায়গায় ট্রাম্পকে পাত্তা দেন না

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো অনেক কিছুই অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এই রক্তের স্রোত কবে থামবে, কিংবা কী শর্তে সেটা বন্ধ হবে, তা কেউ বলতে পারেন না। তবে একটা বিষয়ে আমরা সবাই নিশ্চিত হতে পেরেছি। সেটা হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প, দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন বলে যে ঘোষণাটি দিয়েছিলেন, সেটিকে কেউই গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। এটা এখন প্রমাণিত যে রাজনৈতিকভাবে এই সংকট মীমাংসায় ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিনে রাশিয়া ইউক্রেনে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এটি ছিল পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অন্যতম বড় একটা আক্রমণ। সংঘাতটি যে হঠাৎ করেই থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, এই আক্রমণ তারই প্রতিফলন।

এর কারণ হলো, ভ্লাদিমির পুতিন এখনো লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন—এ চার প্রদেশ দখলে নেওয়ার লক্ষ্য অবিচল রয়েছেন। বর্তমানে লুহানস্কের প্রায় পুরোটা এবং বাকি তিনটির বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে রাশিয়া।

আরও পড়ুনপুতিনের যে সাত সত্যি জানেন না ট্রাম্প২৩ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র দিয়েছে, তা অন্য সব মিত্রদেশ মিলিয়ে যতটুকু দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি। যদিও মানবিক ও অন্যান্য সহায়তা মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে অন্য দেশগুলো মোট সহায়তায় এগিয়ে।

ট্রাম্পের ভুল হলো, তিনি নিজেকে অসাধারণ একজন চুক্তি নির্মাতা হিসেবে মনে করেন। পুতিনের সঙ্গে কথিত সখ্য এবং ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব—সব মিলিয়ে তিনি ভেবে নিয়েছিলেন, কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করবেনই। সম্ভবত তিনি ভেবে নিয়েছিলেন, এই চুক্তির বদৌলতে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারেন।

কিন্তু গত কয়েক দিনে কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তাতে পরিষ্কার যে একবিন্দু ছাড়ও দিতে চান না পুতিন। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। এ ঘটনায় ট্রাম্পের অবস্থান দুর্বল হলো।

এটাও হতে পারে যে পুতিনকে সব তথ্যই ভালোভাবে জাননো হয়েছে। কিন্তু তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শক্তির আধিপত্য শেষ পর্যন্ত বিজয় এনে দেবে। তিনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন, পশ্চিমারা এ যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ট্রাম্প চুক্তি করার প্রচেষ্টা থেকে সরে যাবেন, এমনকি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়াও বন্ধ করে দেবেন।

এখন ট্রাম্প পুতিনের ওপর ক্ষুব্ধ। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুতিনকে নিয়ে লিখেছেন, ‘পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছেন’ এবং ‘অপ্রযোজনীয়ভাবে অনেক মানুষ হত্যা করছে’। ট্রাম্পকে যখন জিজ্ঞাসা করা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়াতে চান কি না, তিনি উত্তর দিয়েছেন, ‘অবশ্যই’। কিন্তু এবারই প্রথম পুতিনকে সতর্ক করলেন না ট্রাম্প, কিংবা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলেন না। গত মাসের শেষ দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির থামো!’

ট্রাম্প–পুতিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি অনিবার্য প্রবণতা। পুতিন এখনো তাঁর ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্পের তোষামোদি ও ভয় দেখানো—দুটিকেই তিনি সমানভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এ কারণেই পুতিন ট্রাম্পের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কোনো আগ্রহ দেখাননি। অথচ জেলেনস্কি সঙ্গে সঙ্গে সেটি গ্রহণ করেছিলেন। এপ্রিলের শেষে ট্রাম্প রাশিয়াকে হুমকি দেন যে যদি তারা ‘বেসামরিক এলাকা, শহর ও জনপদে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া বন্ধ না করে’ তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। সেই হুমকিতেও পুতিন বিচলিত হননি। এই সতর্কবার্তা পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ট্রাম্প–জেলেনস্কির সাক্ষাতের পর আসে। এটি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে কিছুটা আশাবাদী করলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এতে বিচলিত হননি।

আরও পড়ুনট্রাম্পের যে বিশ্বাসঘাতকতায় পুতিন এখন আরও সাহসী১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যা–ই হোক, ট্রাম্প শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়া এবং কথার বাইরে গিয়ে এবার যদি সত্যি সত্যিই রাশিয়ার ওপর আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপও করেন, তারপরও যুদ্ধ থামবে না। এর পেছনে কমপক্ষে দুটি কারণ আছে।

প্রথমত, এই যুদ্ধ পুতিন ডেকে এনেছেন। নিজের লক্ষ্য পূরণে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে বাজি ধরেছেন। যত মূল্য চুকাতে হোক না কেন, তিনি সেটা করবেনই। এই সংঘাতে কতজন রাশিয়ান সৈনিক হতাহত হয়েছেন, সেই হিসাব নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এ সংখ্যা ৯ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে নিহতের সংখ্যা এক লাখের বেশি।

এই যুদ্ধ রাশিয়ার অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস না করলেও বড় চাপ তৈরি করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে দেখা যাচ্ছে, মোট সরকারি ব্যয়ের ৩৫ শতাংশই সামরিক ব্যয়। চলতি বছর তা আরও বেড়ে ৩৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ, যার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ২১ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে।

পুতিনের ক্ষমতা এখনই হুমকির মুখে নেই। তবে রাশিয়ার জনগণ এত বড় ত্যাগ স্বীকার করার পর তিনি যদি অর্ধেক সাফল্য নিয়েই থেমে যান, তাহলে রাজনৈতিকভাবে তিনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। ফলে এত রক্তপাত ও বিপুল ব্যয়ের পর পুতিন সহজে সমঝোতায় যাবেন—এমনটা আশা করা বৃথা।

দ্বিতীয়ত, পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন যে পুতিন মনে করেন যে রাশিয়ান বাহিনী জিততে চলেছে। পুতিন সম্ভবত জানেন না, রাশিয়ান সেনাদের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্রটা। এই যুদ্ধে আনুমানিক ১৪ হাজার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও গোলাবারুদ নিক্ষেপের ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কারণ হলো, জেনারেলরা হয়তো এই খারাপ সংবাদ তাঁদের নেতাকে দিতে ভয় পান।

আবার এটাও হতে পারে যে পুতিনকে সব তথ্যই ভালোভাবে জাননো হয়েছে। কিন্তু তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শক্তির আধিপত্য শেষ পর্যন্ত বিজয় এনে দেবে। তিনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন, পশ্চিমারা এ যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ট্রাম্প চুক্তি করার প্রচেষ্টা থেকে সরে যাবেন, এমনকি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়াও বন্ধ করে দেবেন।

যা–ই হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। এ যুদ্ধ যদি আগামী ফেব্রুয়ারিত পঞ্চম বছরে পা দেয় এবং সেটা থামার কোনো লক্ষণ তখনও যদি দেখা না যায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

রজন মেনন নিউইয়র্ক সিটি কলেজে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইমেরিটাস অধ্যাপক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ