করতোয়া নদীর নীরব বয়ে চলা স্রোত, এর দু’পাশে ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজি, পাখির কিচিরমিচির আর বিস্তৃত সবুজ মাঠ– এ সবকিছুর সম্মিলনে গড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের এক অনন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত জনপদ বগুড়া। প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা অপরূপ চিত্রপট যেন জেগে আছে এ জনপদের প্রতিটি কোণে, নিঃশ্বাসে।
শুধু প্রকৃতি নয়, ইতিহাসেরও এক গৌরবময় স্থান বগুড়া। এ জনপদের প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী মহাস্থানগড় বাংলার প্রাচীনতম নগর হিসেবে স্বীকৃত। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসনামলে এর উত্থান ঘটে; যা পরবর্তী সময়ে গুপ্ত, পাল ও সেন যুগে সমৃদ্ধ হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে বিভিন্ন সভ্যতার নিদর্শন ব্রাহ্মীলিপির শিলালিপি, পোড়ামাটির শিল্পকর্ম, প্রাচীন মুদ্রা ও সৌধ। ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য এখানে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ জাদুঘর, যেখানে এসব নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, সাক্ষ্য দেয় বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের।
মহাস্থানগড়ের অন্যতম আকর্ষণ বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর, যা আজও লোককাহিনির সঙ্গে মিশে আছে। চাঁদ সওদাগরের জীবনগাথা, দেবী মনসার অভিশাপ ও বেহুলার সাহসিকতা এসব গল্প এখানকার বাতাসে আজও ধ্বনিত হয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন এসব ইতিহাস আর লোকবিশ্বাসের পাঁজর ছুঁয়ে দেখতে।
জানা যায়, বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুণ্ড্রনগরে এসেছিলেন। তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা দেন। চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে। ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠায় আসেন হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.

) এবং তাঁর শিষ্য। কথিত আছে, তিনি প্রাচীন পুণ্ড্রনগরে প্রবেশের সময় করতোয়া নদী পার হয়েছিলেন একটা বিশাল মাছের আকৃতির নৌকার পিঠে চড়ে।
মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশে। মনে করা হয়, এখানে শহর পত্তনের মূল কারণ এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম উচ্চতম অঞ্চল। এখানের ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ মিটার উঁচু। মহাস্থানগড় বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে অবস্থিত। ১৫ থেকে ২০ মিটার ওপরের অঞ্চলগুলোকে বন্যামুক্ত ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল বলে ধরা যায়। 
বগুড়ায় করতোয়া ও যমুনার ঘাটে সূর্যাস্তের দৃশ্য যেন এক চিত্রশিল্পীর তুলিতে আঁকা ক্যানভাস। নদীর ঢেউ, পাখির কলকাকলি, ধানক্ষেতের সবুজগালিচা আর মাটির ঘ্রাণ মিলে বগুড়াকে করে তুলেছে এক জীবন্ত কবিতা।
বগুড়া শুধু একটি শহরের নাম নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সমন্বয়। প্রাচীন পুণ্ড্রনগরীর উত্তরসূরি এই জনপদ আজও উত্তরবঙ্গের হৃদস্পন্দন এবং সময়ের সঙ্গে পথচলা এক উজ্জ্বল দীপ্তি। v
সভাপতি
সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ 

উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ নিয়ে ষড়যন্ত্র ও বিএসসি প্রকৌশলীদের তিন দফার প্রতিবাদে গাজীপুরে রেল ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। 

বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় মাঝিরখোলা রেল ক্রসিং অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। 

শিক্ষার্থী ও রেলওয়ে জংশন স্টেশন সূত্রে জানা গেছে,  শিক্ষার্থীরা জয়দেবপুর শিমুলতলী সড়কের পশ্চিম বুরুলিয়া এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। এর পাশেই ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের রেললাইনে অবস্থান নিয়েছেন৷ এতে ওই রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছে৷ 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের ৪০ লক্ষাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও প্রায় ৪ লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই দাবি জাতীয় কর্মক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াবে। 

ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ৭ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এর পাশাপাশি বুধবার সকাল ১০টা থেকে গাজীপুরে মহাসড়ক ও রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা রেললাইন ব্লক করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। 

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ