কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে সরকারি রাস্তার জমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে দোকানপাট। সড়ক-সংলগ্ন নালার মুখে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে ঝিলের পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ঝিলের পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভুগতে হয় আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে আসন্ন বর্ষায় এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ময়লা পানি ওঠার আশঙ্কা করছেন তারা।

শমশেরনগর বাজার এলাকা ভানুগাছ রোডে হাজী মো.

উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে রাস্তার সরকারি জমি দখল করে ১৫-২০ বছর ধরে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। ফলে পথচারী চলাচলের রাস্তা বন্ধসহ পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়রা জানান, কালিবাড়ী মার্কেটের বিপরীতে চা বাগান ঝিলের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ১০ থেকে ১৫ বছর আগে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাস্তার সরকারি জমি দখল করে দোকান স্থাপন করেন। পরে এসব দোকান নিরাপত্তার টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাস্তার সরকারি জমিতে একটি ভলকানাইজিং, দুটি রেস্তোরাঁ, দুটি স্টেশনারি দোকান, সাইকেল মেকারের দোকান, সিএনজি অটোরিকশাচালক সমিতি, মাইক্রোবাস (লাইটেস) চালক সমিতি ও ট্রাক, পিকআপচালক সমিতির অফিস স্থাপন করা হয়। এ পথে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা যাতায়াত করলেও এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নেন না।

অন্যদিকে দখলকৃত জমির পেছনে শমশেরনগর কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে চা বাগানের ঝিলের পানিপ্রবাহের নালার মুখ বন্ধ করে ফেলার অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ময়লা-আবর্জনায় নালার মুখ বন্ধ হওয়ায় মাছবাজারসহ বাসাবাড়ির ময়লা কালো পানি রাস্তার ওপরে চলে আসছে। ফলে এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচলে এ এলাকায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নালার মুখ বন্ধ থাকায় বাজারের নালার কালো ময়লা পানি রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় এ পথে চলাচলকারী শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লি ও সাধারণ মানুষজন ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।

শমশেরনগর ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে ঝিলের পানিপ্রবাহের নালার মুখ বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। নালার ওপর দোকানঘর থাকায় পরিচ্ছন্নতা কাজেও বাধা সৃষ্টি হয়। চা বাগানের বিভিন্ন টিলার বৃষ্টির পানি নেমে এ নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখন নালার মুখ না খুলে দিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চা প্লান্টেশন এলাকায় পানি প্রবেশ করবে।
শমশেরনগর বাজার ইজারাদার আসাইদ মিয়া জানান, তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে বাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগের ইজারাদার নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা-আবর্জনায় সেটি ভরে গিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
দখলকৃত জায়গার শিঙাড়া বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, এই জায়গার মালিক উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালিক বাবলুর ছোট ভাই শিবলু মিয়া। তাঁর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দোকানদারি করছেন তিনি। প্রতি মাসে তাঁকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। মালিক নিজে এসে ভাড়া নিয়ে যান। এদিকে চা ব্যবসায়ী মুমিন মিয়া বলেন, মাহমুদ আলী নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে তিনি ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে দখলদার ব্যবসায়ী মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এটি সরকারি জমি এ কথা সঠিক। তবে তিনি ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই স্থানের দখল নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। পরে সেগুলো অন্য ব্যবসায়ীদের ভাড়া দিয়েছেন। তিনি জানান, তাঁর মতো আরও অনেকেই বিভিন্ন স্থানে টাকার বিনিময়ে জমির দখল নিয়ে দোকানপাট ভাড়া দিয়েছেন। কার কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়েছেন– এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্থানীয় এই ব্যবসায়ী।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুই-এক দিনের ভেতরে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ল র প ন প রব হ ন ল র ম খ বন ধ শমশ রনগর ব যবস য় করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। আজ শুক্রবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ করেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী শনাক্ত হয়েছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আজ রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, বিল্পবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের নেতা-কর্মীসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

মিছিলপরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আহসান লাবিব।

সমাবেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান বলেন, ‘গত ৯ মাসে বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে প্রায় দেড় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এই বাংলাদেশে আর হতে দেব না। আপনারা যদি না শোধরান, তাহলে হয়তো আগামীতে আপনাদের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হবে, কিন্তু কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকবেন, সেটা ছাত্র-জনতা আবার ঠিক করে দেবে।’

সমাবেশে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি শাফায়েত মীর বলেন, ‘আবার যারা আওয়ামী লীগের পুরোনো বন্দোবস্ত চালু করতে চায়, আবার চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন করতে চাচ্ছে, সেই দলকে আমরা বলব, চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করুন, আমরা ভিক্ষা দেব। কিন্তু আমরা আপনাদের জুলুম, নির্যাতন, খুন মেনে নেব না। প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামব।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘বিএনপি যদি এই খুন, রাহাজানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো সেদিন বেশি দূরে নেই, যে পথে আমরা লীগকে পাঠিয়েছি, সেই পথে ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সহযোদ্ধা বিএনপিকেও হয়তো হাঁটতে হবে।’

পুরান ঢাকায় নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার রাত আটটায় ক্যাম্পাসে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ