কোনো নতুন ধারণা, পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্যোগ ‘স্টার্টআপ’ নামে পরিচিত। এর প্রধান লক্ষ্য নতুন কোনো বিষয়ে বড় পরিসরে গ্রাহক সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং তার ওপর ভিত্তি করে টেকসই বাণিজ্যিক মডেল দাঁড় করানো।
গত দুই দশকে দেশে ই-কমার্স ও লজিস্টিকস স্টার্টআপের পরিধি বাড়লেও কৃষিনির্ভর প্রযুক্তি নেই বললেই চলে। অথচ শ্রমবাজারের ৪০ শতাংশ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। যদিও সমতল ভূমির কৃষকরা উৎপাদন মৌসুমে পণ্যের দামে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়েন হাওরাঞ্চলের কৃষক। কারণ পরস্পরের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদানে তারা সবচেয়ে পিছিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে অনেক কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নতুন ধ্যান-ধারণার সঙ্গে ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী। বাজার ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণই পারে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে। মনোযোগটা দিতে হবে সেখানেই।
আমরা জানি, হাওরাঞ্চল দেশের মোট বোরো ধানের ১৮ শতাংশ, মিঠাপানির মাছের ২০ শতাংশ এবং গবাদি পশুর ২২ শতাংশ জোগান দেয় (২২ মার্চ ২০২৫, সমকাল)। কিন্তু কম জানি, বর্ষার পানি সরে যাওয়ার পর প্রতিটি হাওরে ৫-৭টি বাথান জেগে ওঠে; যেখানে সবুজ ঘাস আর ঘাস। প্রায় ছয় মাস এগুলো গবাদি পশুর চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একেকটি বাথানে তিন-চারশ গরু মোটাতাজা করা যায়।
৪০-৫০ হাজার টাকার একেকটি গরু ছয় মাস বাথানে লালনপালনের পর সেই গরু কমবেশি ১ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ একটু চেষ্টা করলেই দ্বিগুণ লাভ সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, গবাদি পশু উৎপাদনে প্রায় ৭০ শতাংশ খাবার খরচ হয়। হাওরে সেই খরচ প্রায় শূন্য। শুকনো মৌসুমের ছয় মাসে একজন কৃষক মাত্র ২ মণ ধান ও ১ হাজার টাকা গরুপ্রতি পান। একজন কৃষক ৩০-৪০টি গরু পালন করতে পারেন।
হাওরে গরুবিষয়ক স্টার্টআপের শুরুতে ৩০টি গরু চারণভূমিতে লালনপালন করা হবে এবং গরুপ্রতি সব খরচ রেকর্ড রাখা হবে। ইতোমধ্যে আধুনিক কসাইখানা এবং চিলিং রুম স্থাপন করা হবে। অতঃপর গরুগুলো জবাইয়ের উপযোগী হলে তাদের আধুনিক কসাইখানায় জবাই ও মাংস চিলিং করা হবে। শহরে একটি আউটলেট থাকবে, যেখানে এই মাংস চিলিং ভ্যানে পরিবহন করে আউটলেটে বিক্রি হবে।
এভাবে গরু পালন থেকে আউটলেটে বিক্রি পর্যন্ত টোটাল খরচ ও লাভ বের করা হবে। পশু পালনকারীদের কাছে সেই তথ্য ও লাভের পরিমাণ প্রকাশ করা হবে। ফলে খামারিরা নিজে থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে কমিউনিটি ফার্মার্স সোসাইটি গঠন করবে। সোসাইটির প্রত্যেক সদস্যকে আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞানসম্মত জবাই এবং মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বীমার আওতায় আনা হবে। এভাবে স্টার্টআপ শুরু করলে হাওরাঞ্চলে গবাদি পশু পালনে রূপান্তর ঘটবে কৃষকের; আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নতুন কর্মসংস্থান ঘটবে।
দেশের প্রতিটি হাওর এ স্টার্টআপ মডেলের আওতায় এলে আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। প্রতিদিন একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের প্রায় ১২০ গ্রাম মাংস খাওয়া উচিত, যা বছরে দাঁড়ায় ৪৩ কেজি প্রায়। ‘এফএও’র তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন আমরা কেবল ২০ গ্রাম মাংস খাচ্ছি। গরুর মাংসের দাম বেড়েই চলেছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে তা অধরাই থেকে যাচ্ছে।
অনেকে কেবল কোরবানির ঈদের সময় মাংস খেতে পারে। এ অবস্থায় প্রকৃতি প্রদত্ত ঘাসের ওপর ভিত্তি করে গবাদি পশুর স্টার্টআপ যোগ করতে পারলেই হাওরাঞ্চল হয়ে উঠতে পারে অর্গানিক মাংসের বৃহত্তর উৎস। এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতা, সঠিক প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগী খামারি প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতির ‘গডমাদার’, গাজায় বসতি নিয়ে কী তাঁর ভাবনা
ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের নেত্রী ড্যানিয়েলা ওয়েইস সব সময়ই একজন জায়নবাদী। ৭৯ বছর বয়সী ড্যানিয়েলা নিজেই টেলিফোনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘জায়নবাদ ছিল আমাদের পারিবারিক আলোচনার মূল বিষয়।’
ড্যানিয়েলা বসবাস করেন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের উত্তরে অবস্থিত একটি অবৈধ ইহুদি বসতিতে।
ড্যানিয়েলা বলেন, ‘আমি গর্বিত যে ঈশ্বর আমাকে একজন ইহুদি হিসেবে পাঠিয়েছেন। আমাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, বাইবেলের প্রতি ভালোবাসা, ঈশ্বর আমাকে এই অপার আশা ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছেন, যা অন্য কিছুর সঙ্গে বদলানো যায় না।’
এই উগ্র জায়নবাদী ড্যানিয়েলা ইহুদি বসতি আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ। তিনি নিজেই বলেছেন, ৫০ বছর ধরে তিনি ‘ইসরায়েলের ভূমি গড়ে তোলার কাজে নিবেদিত’। তিনি দাবি করেন, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা ১৪১টি বসতি ও ২২৪টি অবৈধ চৌকি গঠনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
গত মাসে ড্যানিয়েলা বিবিসির লুইস থেরাউক্সের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য সেটেলার’-এ এক আলোচনায় হাজির হন। প্রামাণ্যচিত্রে তাঁকে ‘উগ্রপন্থী বসতি নেত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ, তিনি ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা ও হামলায় উসকানি এবং তাতে অংশ নিয়েছেন’, যা যুক্তরাজ্যের গাজা যুদ্ধ নিয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ।আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ। আর ১৯৯০-এর দশক থেকে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তৈরি হওয়া চৌকিগুলো ইসরায়েলি আইনেও অবৈধ।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ—এই তিন মাসে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ১ হাজার ৮০৪টি হামলা নথিভুক্ত করেছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা নিজেরা অথবা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে হামলা চালিয়ে ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর আক্রান্ত হয়েছে, গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, ফলের বাগান ধ্বংস করা হয়েছে এবং রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা গাজামুখী ত্রাণবাহী গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। ওসিএইচএ বলেছে, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও চলাচলে বাধার কারণে ৮৪৪ জন ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গত মাসে ড্যানিয়েলা বিবিসির লুইস থেরাউক্সের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য সেটেলার’-এ এক আলোচনায় হাজির হন। প্রামাণ্যচিত্রে তাঁকে ‘উগ্রপন্থী বসতি নেত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ, তিনি ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা ও হামলায় উসকানি এবং তাতে অংশ নিয়েছেন’, যা যুক্তরাজ্যের গাজা যুদ্ধ নিয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ।
তবে থেরাউক্স যখন তাঁকে বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে বসতি স্থাপনকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তখন তিনি হেসে বলেন, ‘এটা হালকা ধরনের অপরাধ।’
একসময় ড্যানিয়েলাকে ‘নেসেট ক্যাফেটেরিয়ার রানি’ বলা হতো। কারণ, তিনি নিয়মিত ইসরায়েলি পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রাখতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এবং বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তিনি আবার আলোচনায় আসেন। এখন তিনি এমন একটি আন্দোলনের মূল নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, যাঁদের বর্তমান নেতা ইতামার বেন–গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ। দুজনই ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।
সমর্থকদের সঙ্গে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪, জেরুজালেম