শীতের সকালে গণিত উৎসব, আনন্দ-উচ্ছ্বাস কুমিল্লা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের
Published: 11th, January 2025 GMT
কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আঙিনায় আজ শনিবারের সকালটা অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। চারদিকে যেন উৎসবের আমেজ। দূর থেকেই শোনা যাচ্ছিল শিক্ষার্থীদের আলাপচারিতা। বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে জমায়েত হয়েছে সাড়ে পাঁচ শ খুদে গণিতবিদ। আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা নিয়ে তাঁরা অংশ নেয় এবারের ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসবে’।
আজ সকাল ৯টার দিকে বিদ্যালয়টির মাঠে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের শুরু হয়। একই সঙ্গে উত্তোলন করা হয় জাতীয়, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.
উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার, শশীদল আলহাজ মোহাম্মদ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেন। কুমিল্লা বন্ধুসভার সভাপতি ও কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান।
অনেক শিক্ষার্থী অভিভাবকের সঙ্গে ভোরে রওনা দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে পৌঁছায় গণিত উৎসবস্থলে। কিন্তু তাঁদের চোখেমুখে সেই ক্লান্তির ছাপ যেন উধাও। বরং তাদের চোখে দেখা গেছে স্বপ্ন জয়ের আকাঙ্ক্ষা। গণিত উৎসবকে কেন্দ্র করে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আঙিনায় বসেছে প্রথমা, তাম্রলিপি, স্বপ্ন ৭১, তৌফিক, আদর্শসহ পাঁচটি প্রকাশনীর স্টল। প্রতিটি স্টলেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা গেছে। তাঁরা বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। অনেকে নিজের পছন্দের বইও কেনেন।
উদ্বোধনের পর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে কুমিল্লা বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তরপর্ব চলবে।চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা নাউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসপিয়া আক্তার এসেছেন বাবা জামাল হোসেনের সঙ্গে। ভোর সাড়ে ৫টায় রওনা দিয়ে সাড়ে ৮টার আগেই ভেন্যুতে পৌঁছান তাঁরা। তাসপিয়া আক্তার বলেন, ‘গণিত আমার প্রিয় বিষয়। তাই বাবার সঙ্গে গণিত উৎসবে এসেছি।’
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমান ইসলাম আদিব। গণিত উৎসবে অংশ নিতে আগের দিনই কুমিল্লা নগরের নিকটাত্মীয়ের বাসায় চলে আসে সালমান। সালমান নামের দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এতে অংশ নিয়ে আমার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তাই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলল, ‘এ নিয়ে তৃতীয়বার গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছি। প্রতিবছরই অপেক্ষা করে থাকি দিনটির জন্য।’
উদ্বোধনের পর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে কুমিল্লা বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তরপর্ব চলবে। শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের আরেকটি ভবনে চলবে গণিত উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের কাজ।
গণিত অলিম্পিয়াডের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবার প্রচেষ্টায় আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়েও জানান দিতে হবে আমরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেইঅধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গণিত অলিম্পিয়াডের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবার প্রচেষ্টায় আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়েও জানান দিতে হবে আমরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।’
এ আয়োজনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখে অভিভূত হয়েছেন বলে জানান কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী। তাঁর প্রত্যাশা এ ধারাবাহিকতা যেন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা ও কুমিল্লার সদস্যরা। অনলাইনে প্রাথমিক বাছাইপর্বে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা উৎসবে যোগ দেয়। কুমিল্লা অঞ্চলের এ গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষার্থীরা। তিন জেলার প্রায় সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী এ গণিত উৎসবে অংশ নেয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কুমিল্লা জোনের ইনচার্জ আবু কাউছার ছিদ্দিক তাঁর বক্তব্যে গণিত উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সাফল্য কামনা করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখব অনেক দূর যাওয়ার। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননে উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। গণিত একটি উপকরণ। নিয়মিত গণিতের চর্চা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের সাফল্য দেখাবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হলো রথ উৎসব
উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। এ উপলক্ষে রাজধানী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্টো রথটান ছাড়াও পদাবলি কির্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্রী যজ্ঞ, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, ধর্মীয় বৈদিক নৃত্য, ভাগবতকথা, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ২৭ জুন রথ শোভাযাত্রা, রথের মেলাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবারের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছিল। রথযাত্রার ৯ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় উল্টো রথযাত্রা।
গতকাল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে স্বামীবাগের ইসকন আশ্রম মন্দির পর্যন্ত বর্ণাঢ্য উল্টো রথের শোভাযাত্রা আয়োজন করে। দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উল্টো রথযাত্রা উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
আলোচনা সভার পর বিকেলে বরণানুষ্ঠান ও পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনটি বিশাল রথে শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীর প্রতিকৃতিসহ উল্টো রথযাত্রা শুরু হয়। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা ও উলুধ্বনির মধ্যে সব বয়সের শত শত নারী-পুরুষ বর্ণাঢ্য সাজে এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি পলাশীর মোড় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন, শাপলা চত্বর, টিকাটুলি ও জয়কালী মন্দির হয়ে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দিরেও উল্টো রথযাত্রা হয়।
এদিকে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামে নগরীর তুলসীধাম মন্দিরের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটি, নন্দনকানন শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির এবং শ্রীকৃষ্ণ ইসকন মন্দিরের উদ্যোগে আলাদা আলাদাভাবে উল্টো রথযাত্রা বের হয়। এসব আয়োজনে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে এই রথযাত্রার প্রচলন।