চট্টগ্রামে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কথক দাশ নামের এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় অভিবাসন পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। চট্টগ্রামে আনার পর আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আবেদনের শুনানি শেষে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নগরের কোতোয়ালি থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের পতাকা উত্তোলন করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বমানবতার স্বাধীনতার মাস রমজান

ইসলাম সব মানুষকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক শৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা লাভের অধিকার দিয়েছে। মানবতার মুক্তির সনদ আল–কোরআন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি নাজিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। রমজান মাসেই রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন, মানুষের গোলামি বা দাসত্ব থেকে মুক্তি ঘোষণা করলেন, জালিম শাহি ও জুলুমের জিঞ্জির থেকে মুক্তির ঘোষণা দিলেন। তাগুতি শাসন ও শোষণ থেকে এবং সব শয়তানি শক্তির বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।

‘রহমাতুল লিল আলামিন’ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হজের বা আরাফাতের দিবস যেমন সম্মানিত, মক্কা নগর যেমন পবিত্র, কাবা ঘর যেমন মর্যাদাপূর্ণ; সব মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তেমনি সম্মানিত ও সুরক্ষিত।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) 

ইসলাম ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমানা অন্যের অধিকারের প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ।

রমজান মাস ইসলামি দর্শনে যেমনি স্বাধীনতার মাস, তেমনি বিজয়েরও মাস। ইসলামের প্রথম জয় বদর বিজয় হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১৭ তারিখেই। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ জয় মক্কা বিজয় হয়েছিল অষ্টম হিজরিতে ১৯ রমজানে।

শুধু জাগতিক স্বাধীনতা ও বিজয় নয়; বরং আত্মিক মুক্তি ও বিজয় সম্ভব এই রমজান মাসেই। যার জন্য প্রয়োজন যথাযথ উপায়ে সিয়াম সাধনা। তাকওয়া, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতাও বিজয়ের পূর্বশর্ত। আত্মা বা নফস মোহমুক্ত ও স্বাধীন হলেই প্রকৃত অর্থে দুনিয়ার বিজয় বা সফলতা এবং পরকালে মুক্তি বা জীবনের সার্থকতা লাভ হয়। 

মনোজগতে মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, সংযম এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসাই মানুষকে সব ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়। 

কোরআন মজিদে এ বিষয় বোঝাতে স্বৈরাচারী জালুতের বিপুল সৈন্যর সঙ্গে হজরত তালুতের স্বল্পসংখ্যক মুজাহিদ বাহিনীর সফলতা ও বিজয়ের কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘অতঃপর তালুত যখন সৈন্যবাহিনীসহ অভিযানে বের হলো, সে তখন বলল, “আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে তা থেকে পানি পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে এর স্বাদ গ্রহণ করবে না, সে আমার দলভুক্ত। এ ছাড়া যে এক আঁজলা পরিমাণ পানি গ্রহণ করবে, সে–ও আমার দলভুক্ত থাকবে।” অতঃপর অল্পসংখ্যক ব্যতীত তারা তা (নদী) থেকে পান করল। সে (তালুত) এবং তার সঙ্গী ইমানদারেরা যখন তা (নদী) অতিক্রম করল, তখন তারা বলল, জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো শক্তি আজ আমাদের নেই। কিন্তু যাদের দৃঢ়প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। 

‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। তারা যখন যুদ্ধার্থে জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হলো, তখন তারা বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ধৈর্য দান করুন, আমাদের দৃঢ়পদ ও অবিচল রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।” সুতরাং তারা আল্লাহর হুকুমে তাদের পরাভূত করল, দাউদ (আ.) জালুতকে হত্যা করলেন, আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন, তা তাকে শিক্ষা দিলেন। 

‘আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগৎসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল। এসব আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার কাছে তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করছি; আর নিশ্চয়ই তুমি রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৪৯-২৫৩)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শবে কদরের কেন এত কদর
  • পণতীর্থ মহাবারুনী গঙ্গাস্নান শুরু
  • বিশ্বমানবতার স্বাধীনতার মাস রমজান