কবি, চিন্তক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্যই ব্যর্থ হবেন এবং এই সরকার ব্যর্থ হতে বাধ্য অনিবার্যভাবেই। যেহেতু এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের ওপর দাঁড়ানো নেই। যারা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ৫ আগস্টে যারা পরাজয় বরণ করেছিল, তারা নতুন করে নিজেদের সংগঠিত করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহার এ কথাগুলো বলেন। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের থানা প্রতিনিধি সভার এই আয়োজনে ফরহাদ মজহার ছিলেন অতিথি আলোচক।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, আজকে বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে বা তাদের উৎখাত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় জাতিবাদও কিন্তু ফ্যাসিবাদের একটা রূপ। মনে রাখতে হবে, আপনারা যে রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন, সেই দলের লক্ষ্য হচ্ছে সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিপরীতে দাঁড়ানো।

তরুণ নেতাদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার আরও বলেন, আপনারা যে দল করতে চাইছেন, সেই দল হতে হবে জনগণের দল, জনগণের সার্বভৌমত্ব কায়েম করা আপনাদের লক্ষ্য। বাকিটা জনগণ বলে দেবে। আপনাদের অবশ্যই গণ-অভ্যুত্থান সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কারণ গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি অতি দ্রুত মুছে ফেলা হবে। পরিষ্কারভাবে আমাদের বোঝা দরকার, আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব কায়েম আর গণসার্বভৌমত্ব কায়েম করতে হলে বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল করতে হবে, চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিন) অপসারণ করতে হবে এবং একটা নতুন গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটিকে পরামর্শ দিয়ে ফরহাদ বলেন, আপনারা এখন দল করতে নেমেছেন, কিন্তু আমি এখন সন্দেহ করব আপনারা কি আরেকটা বিএনপি বানাবেন, নাকি গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণ করার সাংগঠনিক শক্তি ও পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে আবার ইতিহাসে হাজির হবেন! যদি আরেকটি লিবারেল দল, নির্বাচনবাদী বা নির্বাচনসর্বস্ব দল হয়...। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নির্বাচন মানে লুটেরা এবং মাফিয়াদের নির্বাচন। এই কোটি কোটি টাকা দিয়ে আপনারা যদি আবার শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বদলাতে চান, নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে চান, এটা দুঃস্বপ্ন। ইতিমধ্যে এই রাষ্ট্র নিজেকে সংহত করছে। যারা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা এই রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারা যে পরাজয়টা বরণ করেছিল ৫ আগস্টে, তারা নতুন করে নিজেদের সংগঠিত করছে। আপনারা সেটা খেয়াল করছেন না।

ফরহাদ মজহার বলেন, ৫ আগস্টে জনগণের হাতে ক্ষমতা এসে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ক্ষমতা আমরা রাখতে পারিনি।...কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে জনগণ চাইলে অবশ্যই ঘোষণা দিতে পারে। এই রাষ্ট্রের বা অধ্যাপক ইউনূসের কোনো অধিকার নেই ঘোষণাকে বন্ধ করার। ঘোষণাপত্র একটা ঐতিহাসিক দলিল। এটা একই সঙ্গে একটা আইনি দলিল। ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী তার হাজিরা বা উপস্থিতি সারা বিশ্বকে জানায়, যে কারণে আমরা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়েছিলাম।

৫ আগস্টের পর থেকেই দিল্লি বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ১২ ফেব্রুয়ারি তার যে সাক্ষাৎ হবে, তারই আগে এটা ছিল লিটমাস টেস্ট। এটা পরীক্ষা আপনাদের জন্য যে আপনারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান? এর বিপরীতে যারা বলেছেন যে আমরা ভাঙার রাজনীতি চাই না, আমি তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু ভাঙার রাজনীতি একই সঙ্গে গড়ারও রাজনীতি। যেকোনো ফ্যাসিস্ট আইকনের বিরুদ্ধে আপনাকে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু খেয়াল করতে হবে ভূরাজনৈতিক যে বিন্যাস পৃথিবীব্যাপী, এরা প্রচার করবে যে বাংলাদেশে কোনো সরকার নেই।

৫ আগস্টের পর মাজার ভাঙার কড়া সমালোচনা করেন ফরহাদ। এখন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কী করে হতে পারে, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের আগে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন শিশির তাঁর বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে পেটানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এটিকে ‘ভালো কাজ’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাজনূভা জাবীনের সঞ্চালনায় এই পর্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা আলী আহসান জোনায়েদ, মো. আতাউল্লাহ, সাদ্দাম হোসাইন, জাবেদ রাসিন ছাড়াও সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তাঁদের অনেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।

প্রশ্নোত্তর

বক্তব্য পর্ব শেষে অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সংগঠনের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব পর্বটি পরিচালনা করেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সব ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশে কোনো ধর্মবিদ্বেষীর স্থান হবে না, সেটা যে ধর্মই হোক।’

আরেক প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেন, সরকারকে সাধারণ মানুষের আয়-রোজগারের সংকটের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। অন্যায্য ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে জনগণের কাজে ব্যয় করতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যা করা দরকার, সরকারকে তা করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে না পারলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মামলা করে আন্তর্জাতিকভাবে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, জনগণের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। নইলে এগুলো ভেঙে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে সারজিস আলম বলেন, তারা যে নতুন দল করতে যাচ্ছেন, সেই দলে ক্ষমতা কোনো পরিবারের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকবে না। নিজেদের যেকোনো ভুল শোধরানোর জন্য তাঁরা সবসময় প্রস্তুত থাকবেন। অতীতের কোনো নষ্ট চর্চা তাঁরা হতে দেবেন না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ৫ আগস ট দল করত জনগণ র র জন য ক ষমত সরক র ল করত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু হবে বিএনপির ‘বিজয় মাস’ উদ্‌যাপন

মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে সারা দেশে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মশাল রোড শোর মাধ্যমে এবারের উদ্‌যাপন কর্মসূচি শুরু হবে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রোড শো শেষ হবে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ এবং জনগণের বিজয়ের আনন্দ আরও বর্ণিল এবং অর্থবহ করতে এবারও সারা দেশে সাড়ম্বরে গৌরবের ৫৫তম মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করতে আলোচনা সভা, বিজয়ের রোড শোসহ মাসব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির উদ্যোগে ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ কর্মসূচি ‘বিজয়ের মাসে বিজয় মশাল রোড শো’।

মির্জা ফখরুল জানান, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। এই ঐতিহাসিক বেতারকেন্দ্র থেকেই শুরু হবে এবারে বিএনপির ‘বিজয় মাস’ উদ্‌যাপন কর্মসূচি। তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বিজয় মশালযাত্রা শুরু হবে। সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে একই দিন চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছাবে। বিজয় মিছিলের মশাল একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন জুলাই যোদ্ধা বহন করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জনের আর ২০২৪ হলো দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব আরও জানান, পর্যায়ক্রমে সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং কুমিল্লা ও ফরিদপুরে বিজয় মশাল রোড শো এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি জায়গায় মশাল বহন করবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন জুলাই যোদ্ধা।

মির্জা ফখরুল জানান, দুই সপ্তাহের এই বিশেষ ‘রোড শো’ উদ্‌যাপনের সময় বিভিন্ন বিভাগের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের নির্বাচিত অংশ প্রচার, জাসাসের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন হবে। তিনি বলেন, জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি। এই পুরো আয়োজনে বিএনপির থিম সং—সবার আগে বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি সম্পদ নন, তিনি বাংলাদেশের সম্পদ : মাসুদুজ্জামান
  • খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি সম্পদ নয়, তিনি বাংলাদেশের সম্পদ : মাসুদুজ্জামান
  • রূপগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে জামাতের মতবিনিময় সভা
  • ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন: জামায়াত আমির
  • দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে: মির্জা ফখরুল
  • নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
  • বারবার মানুষ জীবন দেয় কিন্তু ক্ষমতায় যায় বুর্জোয়ারা: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
  • কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু হবে বিএনপির ‘বিজয় মাস’ উদ্‌যাপন
  • লন্ডন থেকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে কেউ দেশ চালাতে পারবে না: সাদিক কায়েম
  • যাঁরা লুট করেছেন, তাঁদের ধরেন, কারখানাগুলো চালু থাকুক: ফখরুল