Samakal:
2025-12-04@17:43:30 GMT

আপার দেখানো পথ

Published: 27th, March 2025 GMT

আপার দেখানো পথ

আমি শৈশবে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। তখন সন্‌জীদা আপা আমাদের দু-একটা ক্লাস নিতেন। প্রথমদিকে জেনারেল বা সব বিষয়ে পড়তে হতো। একটু বড় হয়ে আমি নজরুলসংগীত বাছাই করি। তখন আলাদা হয়ে পড়ি। তবে আমার মামা মাহমুদুর রহমান ছায়ানটের পুরোনো ছাত্র। মামার কাছ থেকেও সন্‌জীদা আপার নাম শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই আপার ব্যাপারে অন্য রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তখন ছায়ানট এত বড় ছিল না। তখন শুধু গানই শেখানো হতো। একটা পর্যায়ে এসে তাদের আদর্শ, জীবন ও দর্শন আমরা ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করলাম। 
এদেশে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় বাধা এলো। তাদের যুক্তি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কবি না ইত্যাদি। আমরা বড় হয়ে এসব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ছায়ানট বড় হয়ে বর্তমান ভবনে এলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা আপা কিছু কথা বারবার বলতেন– ছায়ানটের মূল উদ্দেশ্য কী; বাঙালি সংস্কৃতি কী; কেন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং এই সংস্কৃতি জেনে নিজেকে আমরা কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি। 

একটা সময় আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে ছায়ানটের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হই। শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি একটা পর্যায়ে ছায়ানটের কার্যকরী পরিষদেও যুক্ত হলাম। পরে আমাকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০-২২ বছর এ পদে বহাল ছিলাম। এ সময়ে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা, মেলামেশার সুযোগ হয়। সন্‌জীদা আপা কোন বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। মাঝে মাঝে বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন। আমি তাঁকে বলেই রাখতাম: আপা, আমি কিন্তু বক্তৃতা করতে পারব না। আমার অভ্যেস নেই। তখন তিনি বলতেন, তুই পারবি। আমি দু-একবার টেলিভিশনে তোর কথাবার্তা শুনেছি। তুই ভালো বলিস, তুই খুব পারবি। এই বলে ধীরে ধীরে আমাকে বলতে শেখান। সাহস জোগান। 

খুব কাছে থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু ব্যাপারে আমি খুব অবাক হতাম। তিনি শতভাগ সৎপথে চলার মানুষ। এগুলো দেখতে দেখতে আমরা এমন পর্যায়ে গেছি, ছায়ানটের একটা ছেলে-মেয়ে চট করে অসৎ পথে পা বাড়াতে পারে না। কারণ দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা আর নিজেকে বড় না ভেবে তৈরি করার ব্যাপার। 
আমাদের সবসময় বলা হতো, এটা সাধনার একটা জায়গা। এখানে যখনই প্রবেশ করবে, তুমি এখানে সাধনা করতে এসেছ। সেই ভাবনা নিয়ে পথ চলবে। মেয়েদের সাজগোজের ব্যাপারে সিম্পল থাকার তাগিদ দিতেন। এখানে রং-চং মেখে আসার জায়গা নয়। মন দিয়ে সংগীত শিখবে। আর ধ্যান যাতে সংগীতে থাকে। সেদিকে প্রধানত মনোনিবেশ করবে। 
এসব শুনতে শুনতে সন্জীদা আপার জীবন সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন করাটা আপার জীবনে প্রধান ছিল। জীবনকে খুব সাধারণভাবে পরিচালনা করা। এর মধ্যেই আপা আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রতিবেশীদের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা আনন্দে জীবন কাটিয়েছেন। 

এই যে শিক্ষাটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আমরা শতভাগ রপ্ত করতে না পারলেও আমাদের উচিত তাদের দর্শন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। এর অর্ধেকও যদি একজন ব্যক্তি লালন করতে পারেন, তাহলে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। যারা রবীন্দ্রনাথকে পুনরায় আমাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের মধ্যে সন্জীদা আপা অন্যতম। পহেলা বৈশাখ এভাবে উদযাপনের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওয়াহিদুল হক, মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, ফরিদা হাসানসহ অনেকে রবীন্দ্র আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। আজ তাদেরও আমি স্মরণ করছি। সন্‌জীদা আপার জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হোক।

খায়রুল আনাম শাকিল: ছায়ানটের 
সহসভাপতি 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রব ন দ র ছ য় নট র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়া-৪ আসনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট চাইলেন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি

আগামী নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়িপাল্লায় ভোট চাইলেন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি।

এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়ার নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজ মাঠে মোস্তফা ফয়সাল পারভেজের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র ও যুব সমাবেশে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহিম হোসেন ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান তাঁর পক্ষে দাঁড়িপাল্লায় ভোট চান।

সমাবেশে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশ থেকে বিভাজনের রাজনীতির কবর দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠাতার সেই চেতনা ভুলে গিয়ে ফ্যাসিবাদের পথেই হাঁটছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের জনগণ নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখছেন, বিএনপি সেই স্বপ্নকে পিষে মারার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জুলাই শহীদদের স্বপ্ন নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মোস্তফা ফয়সাল পারভেজকে বিজয়ী করতে হবে।

সমাবেশে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, শত শত শহীদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। এ দেশে আর কোনো দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না। নতুন বাংলাদেশ হবে জুলাই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ।

চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে দুজন বাংলাদেশি হত্যার পর দেশের বড় দলের দাবিদার একটি রাজনৈতিক দল বিবৃতিটুকুও দিতে পারেনি। দেশের ছাত্রসমাজ অন্য দেশের তাঁবেদার কোনো দলকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান বলেন, দেশের মানুষ নতুন ধারার রাজনীতি চায়। যারা জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম হবে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন পাবনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী নাজিবুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী বগুড়া অঞ্চলের টিম সদস্য নজরুল ইসলাম, বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনের প্রার্থী নূর মোহাম্মদ আবু তাহের, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, ডাকসুর নির্বাহী সদস্য মিফতাহুল হোসাইন, বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির আবদুল হক সরকার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ