Samakal:
2025-12-13@07:33:56 GMT

আপার দেখানো পথ

Published: 27th, March 2025 GMT

আপার দেখানো পথ

আমি শৈশবে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। তখন সন্‌জীদা আপা আমাদের দু-একটা ক্লাস নিতেন। প্রথমদিকে জেনারেল বা সব বিষয়ে পড়তে হতো। একটু বড় হয়ে আমি নজরুলসংগীত বাছাই করি। তখন আলাদা হয়ে পড়ি। তবে আমার মামা মাহমুদুর রহমান ছায়ানটের পুরোনো ছাত্র। মামার কাছ থেকেও সন্‌জীদা আপার নাম শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই আপার ব্যাপারে অন্য রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তখন ছায়ানট এত বড় ছিল না। তখন শুধু গানই শেখানো হতো। একটা পর্যায়ে এসে তাদের আদর্শ, জীবন ও দর্শন আমরা ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করলাম। 
এদেশে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় বাধা এলো। তাদের যুক্তি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কবি না ইত্যাদি। আমরা বড় হয়ে এসব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ছায়ানট বড় হয়ে বর্তমান ভবনে এলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা আপা কিছু কথা বারবার বলতেন– ছায়ানটের মূল উদ্দেশ্য কী; বাঙালি সংস্কৃতি কী; কেন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং এই সংস্কৃতি জেনে নিজেকে আমরা কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি। 

একটা সময় আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে ছায়ানটের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হই। শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি একটা পর্যায়ে ছায়ানটের কার্যকরী পরিষদেও যুক্ত হলাম। পরে আমাকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০-২২ বছর এ পদে বহাল ছিলাম। এ সময়ে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা, মেলামেশার সুযোগ হয়। সন্‌জীদা আপা কোন বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। মাঝে মাঝে বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন। আমি তাঁকে বলেই রাখতাম: আপা, আমি কিন্তু বক্তৃতা করতে পারব না। আমার অভ্যেস নেই। তখন তিনি বলতেন, তুই পারবি। আমি দু-একবার টেলিভিশনে তোর কথাবার্তা শুনেছি। তুই ভালো বলিস, তুই খুব পারবি। এই বলে ধীরে ধীরে আমাকে বলতে শেখান। সাহস জোগান। 

খুব কাছে থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু ব্যাপারে আমি খুব অবাক হতাম। তিনি শতভাগ সৎপথে চলার মানুষ। এগুলো দেখতে দেখতে আমরা এমন পর্যায়ে গেছি, ছায়ানটের একটা ছেলে-মেয়ে চট করে অসৎ পথে পা বাড়াতে পারে না। কারণ দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা আর নিজেকে বড় না ভেবে তৈরি করার ব্যাপার। 
আমাদের সবসময় বলা হতো, এটা সাধনার একটা জায়গা। এখানে যখনই প্রবেশ করবে, তুমি এখানে সাধনা করতে এসেছ। সেই ভাবনা নিয়ে পথ চলবে। মেয়েদের সাজগোজের ব্যাপারে সিম্পল থাকার তাগিদ দিতেন। এখানে রং-চং মেখে আসার জায়গা নয়। মন দিয়ে সংগীত শিখবে। আর ধ্যান যাতে সংগীতে থাকে। সেদিকে প্রধানত মনোনিবেশ করবে। 
এসব শুনতে শুনতে সন্জীদা আপার জীবন সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন করাটা আপার জীবনে প্রধান ছিল। জীবনকে খুব সাধারণভাবে পরিচালনা করা। এর মধ্যেই আপা আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রতিবেশীদের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা আনন্দে জীবন কাটিয়েছেন। 

এই যে শিক্ষাটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আমরা শতভাগ রপ্ত করতে না পারলেও আমাদের উচিত তাদের দর্শন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। এর অর্ধেকও যদি একজন ব্যক্তি লালন করতে পারেন, তাহলে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। যারা রবীন্দ্রনাথকে পুনরায় আমাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের মধ্যে সন্জীদা আপা অন্যতম। পহেলা বৈশাখ এভাবে উদযাপনের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওয়াহিদুল হক, মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, ফরিদা হাসানসহ অনেকে রবীন্দ্র আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। আজ তাদেরও আমি স্মরণ করছি। সন্‌জীদা আপার জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হোক।

খায়রুল আনাম শাকিল: ছায়ানটের 
সহসভাপতি 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রব ন দ র ছ য় নট র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তারেক রহমান দেশে এলে রাজনীতিতে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে: আমীর খসরু

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে এলে রাজনীতিতে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ কারণে দলের নেতা–কর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক কর্মশালায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন।

বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই কর্মশালায় আজ ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির নেতারা অংশ নিয়েছেন।

ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—তা নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের জন্য ধারাবাহিক এই কর্মশালার আয়োজন করছে বিএনপি। এতে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচনের জন্য দলের নেতাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই নির্বাচনে জয় বিএনপির নয়; এই নির্বাচনের জয় হচ্ছে গণতন্ত্র, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের টর্চ বেয়ারার।’

দেশের বাইরে হওয়া একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ওই জরিপে মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দিতে চায়—সে প্রশ্নের উত্তরে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম এসেছে। পাশাপাশি গণতন্ত্রের ধারক–বাহক হিসেবে বিএনপির নাম উঠে এসেছে।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনা নিয়ে আমীর খসরু বলেন, এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। এর আগেও চট্টগ্রাম মহানগরের বিএনপির সভাপতির ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায়।

আরও পড়ুন২৫ ডিসেম্বর দেশে আসছেন তারেক রহমান১৫ ঘণ্টা আগে

দলের নেতা–কর্মীদের চোখ–কান খোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যে রাজনীতি হচ্ছে তা মবোক্রেসির রাজনীতি। অপরের প্রতি অসম্মান রেখে কথা বলার রাজনীতি। অন্যকে ছোট করার রাজনীতি। যেকোনো অজুহাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার রাজনীতি। যেটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য কাম্য হতে পারে না। বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনীতির প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। সেখান থেকে সরে দাঁড়ানো যাবে না।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়া হায়দার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।

আরও পড়ুননির্বাচন না হওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে: আমীর খসরু১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ