Samakal:
2025-10-29@09:36:05 GMT

আপার দেখানো পথ

Published: 27th, March 2025 GMT

আপার দেখানো পথ

আমি শৈশবে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। তখন সন্‌জীদা আপা আমাদের দু-একটা ক্লাস নিতেন। প্রথমদিকে জেনারেল বা সব বিষয়ে পড়তে হতো। একটু বড় হয়ে আমি নজরুলসংগীত বাছাই করি। তখন আলাদা হয়ে পড়ি। তবে আমার মামা মাহমুদুর রহমান ছায়ানটের পুরোনো ছাত্র। মামার কাছ থেকেও সন্‌জীদা আপার নাম শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই আপার ব্যাপারে অন্য রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তখন ছায়ানট এত বড় ছিল না। তখন শুধু গানই শেখানো হতো। একটা পর্যায়ে এসে তাদের আদর্শ, জীবন ও দর্শন আমরা ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করলাম। 
এদেশে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় বাধা এলো। তাদের যুক্তি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কবি না ইত্যাদি। আমরা বড় হয়ে এসব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ছায়ানট বড় হয়ে বর্তমান ভবনে এলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা আপা কিছু কথা বারবার বলতেন– ছায়ানটের মূল উদ্দেশ্য কী; বাঙালি সংস্কৃতি কী; কেন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং এই সংস্কৃতি জেনে নিজেকে আমরা কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি। 

একটা সময় আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে ছায়ানটের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হই। শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি একটা পর্যায়ে ছায়ানটের কার্যকরী পরিষদেও যুক্ত হলাম। পরে আমাকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০-২২ বছর এ পদে বহাল ছিলাম। এ সময়ে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা, মেলামেশার সুযোগ হয়। সন্‌জীদা আপা কোন বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। মাঝে মাঝে বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন। আমি তাঁকে বলেই রাখতাম: আপা, আমি কিন্তু বক্তৃতা করতে পারব না। আমার অভ্যেস নেই। তখন তিনি বলতেন, তুই পারবি। আমি দু-একবার টেলিভিশনে তোর কথাবার্তা শুনেছি। তুই ভালো বলিস, তুই খুব পারবি। এই বলে ধীরে ধীরে আমাকে বলতে শেখান। সাহস জোগান। 

খুব কাছে থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু ব্যাপারে আমি খুব অবাক হতাম। তিনি শতভাগ সৎপথে চলার মানুষ। এগুলো দেখতে দেখতে আমরা এমন পর্যায়ে গেছি, ছায়ানটের একটা ছেলে-মেয়ে চট করে অসৎ পথে পা বাড়াতে পারে না। কারণ দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা আর নিজেকে বড় না ভেবে তৈরি করার ব্যাপার। 
আমাদের সবসময় বলা হতো, এটা সাধনার একটা জায়গা। এখানে যখনই প্রবেশ করবে, তুমি এখানে সাধনা করতে এসেছ। সেই ভাবনা নিয়ে পথ চলবে। মেয়েদের সাজগোজের ব্যাপারে সিম্পল থাকার তাগিদ দিতেন। এখানে রং-চং মেখে আসার জায়গা নয়। মন দিয়ে সংগীত শিখবে। আর ধ্যান যাতে সংগীতে থাকে। সেদিকে প্রধানত মনোনিবেশ করবে। 
এসব শুনতে শুনতে সন্জীদা আপার জীবন সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন করাটা আপার জীবনে প্রধান ছিল। জীবনকে খুব সাধারণভাবে পরিচালনা করা। এর মধ্যেই আপা আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রতিবেশীদের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা আনন্দে জীবন কাটিয়েছেন। 

এই যে শিক্ষাটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আমরা শতভাগ রপ্ত করতে না পারলেও আমাদের উচিত তাদের দর্শন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। এর অর্ধেকও যদি একজন ব্যক্তি লালন করতে পারেন, তাহলে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। যারা রবীন্দ্রনাথকে পুনরায় আমাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের মধ্যে সন্জীদা আপা অন্যতম। পহেলা বৈশাখ এভাবে উদযাপনের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওয়াহিদুল হক, মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, ফরিদা হাসানসহ অনেকে রবীন্দ্র আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। আজ তাদেরও আমি স্মরণ করছি। সন্‌জীদা আপার জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হোক।

খায়রুল আনাম শাকিল: ছায়ানটের 
সহসভাপতি 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রব ন দ র ছ য় নট র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধসহ ১২ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

জামালপুরের মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধসহ ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মানববন্ধন এবং পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। এতে কলেজটির শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাঁরা প্রথমে শহরের ফৌজদারি মোড়ে মানববন্ধন করেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে যান। পরে সেখানে দাবি বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জামালপুরের বিভিন্ন মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, নছিমন-করিমন অবাধে চলাচল করছে। এসব যানবাহন গতি নিয়ন্ত্রণে অক্ষম ও নিরাপত্তাব্যবস্থা অপ্রতুল। প্রশিক্ষণবিহীন চালকের হাতে পরিচালিত হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং পঙ্গুত্ববরণ করছে। গত সোমবার জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দিগপাইত এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশার সংঘর্ষে আশেক মাহমুদ কলেজের দুজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। অথচ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৪৭ (২) ধারা অনুযায়ী মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচল আইনত নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুনজামালপুরে কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে ইজিবাইকের সংঘর্ষে তিনজন নিহত২৭ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষার্থীদের ১২ দফা দাবির মধ্যে আছে, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, নছিমন-করিমসহ অননুমোদিত যানবাহনের চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; স্থানীয় প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা; ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নির্দিষ্ট গ্রামীণ ও শহরতলির রাস্তা নির্ধারণ; সড়কে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত; মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতা কর্মসূচি ও চালকদের প্রশিক্ষণ জোরদার; তিন চাকার যানগুলোর চালকদের ৬০ ঘণ্টা ট্রেনিং ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা; তিন চাকার যানগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা; চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা ও পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা অথবা প্রয়োজনে ছাত্রদের সাহায্য নেওয়া; প্রতিটি মহাসড়কে ২ জোড়া করে বিআরটিএ (লোকাল) বাস সার্ভিস চালু করা; গাড়ির ফিটনেস নিশ্চিত এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা, ওই সড়ক দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত ও নিহত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় অনুদান নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুস সাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের বিষয়টি শুনেছি। আমি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছি। ওই দিনের সড়ক দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ