Samakal:
2025-04-21@05:35:14 GMT

আপার দেখানো পথ

Published: 27th, March 2025 GMT

আপার দেখানো পথ

আমি শৈশবে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। তখন সন্‌জীদা আপা আমাদের দু-একটা ক্লাস নিতেন। প্রথমদিকে জেনারেল বা সব বিষয়ে পড়তে হতো। একটু বড় হয়ে আমি নজরুলসংগীত বাছাই করি। তখন আলাদা হয়ে পড়ি। তবে আমার মামা মাহমুদুর রহমান ছায়ানটের পুরোনো ছাত্র। মামার কাছ থেকেও সন্‌জীদা আপার নাম শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই আপার ব্যাপারে অন্য রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তখন ছায়ানট এত বড় ছিল না। তখন শুধু গানই শেখানো হতো। একটা পর্যায়ে এসে তাদের আদর্শ, জীবন ও দর্শন আমরা ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করলাম। 
এদেশে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় বাধা এলো। তাদের যুক্তি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কবি না ইত্যাদি। আমরা বড় হয়ে এসব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ছায়ানট বড় হয়ে বর্তমান ভবনে এলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা আপা কিছু কথা বারবার বলতেন– ছায়ানটের মূল উদ্দেশ্য কী; বাঙালি সংস্কৃতি কী; কেন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং এই সংস্কৃতি জেনে নিজেকে আমরা কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি। 

একটা সময় আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে ছায়ানটের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হই। শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি একটা পর্যায়ে ছায়ানটের কার্যকরী পরিষদেও যুক্ত হলাম। পরে আমাকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০-২২ বছর এ পদে বহাল ছিলাম। এ সময়ে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা, মেলামেশার সুযোগ হয়। সন্‌জীদা আপা কোন বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। মাঝে মাঝে বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন। আমি তাঁকে বলেই রাখতাম: আপা, আমি কিন্তু বক্তৃতা করতে পারব না। আমার অভ্যেস নেই। তখন তিনি বলতেন, তুই পারবি। আমি দু-একবার টেলিভিশনে তোর কথাবার্তা শুনেছি। তুই ভালো বলিস, তুই খুব পারবি। এই বলে ধীরে ধীরে আমাকে বলতে শেখান। সাহস জোগান। 

খুব কাছে থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু ব্যাপারে আমি খুব অবাক হতাম। তিনি শতভাগ সৎপথে চলার মানুষ। এগুলো দেখতে দেখতে আমরা এমন পর্যায়ে গেছি, ছায়ানটের একটা ছেলে-মেয়ে চট করে অসৎ পথে পা বাড়াতে পারে না। কারণ দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা আর নিজেকে বড় না ভেবে তৈরি করার ব্যাপার। 
আমাদের সবসময় বলা হতো, এটা সাধনার একটা জায়গা। এখানে যখনই প্রবেশ করবে, তুমি এখানে সাধনা করতে এসেছ। সেই ভাবনা নিয়ে পথ চলবে। মেয়েদের সাজগোজের ব্যাপারে সিম্পল থাকার তাগিদ দিতেন। এখানে রং-চং মেখে আসার জায়গা নয়। মন দিয়ে সংগীত শিখবে। আর ধ্যান যাতে সংগীতে থাকে। সেদিকে প্রধানত মনোনিবেশ করবে। 
এসব শুনতে শুনতে সন্জীদা আপার জীবন সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন করাটা আপার জীবনে প্রধান ছিল। জীবনকে খুব সাধারণভাবে পরিচালনা করা। এর মধ্যেই আপা আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রতিবেশীদের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা আনন্দে জীবন কাটিয়েছেন। 

এই যে শিক্ষাটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আমরা শতভাগ রপ্ত করতে না পারলেও আমাদের উচিত তাদের দর্শন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। এর অর্ধেকও যদি একজন ব্যক্তি লালন করতে পারেন, তাহলে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। যারা রবীন্দ্রনাথকে পুনরায় আমাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের মধ্যে সন্জীদা আপা অন্যতম। পহেলা বৈশাখ এভাবে উদযাপনের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওয়াহিদুল হক, মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, ফরিদা হাসানসহ অনেকে রবীন্দ্র আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। আজ তাদেরও আমি স্মরণ করছি। সন্‌জীদা আপার জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হোক।

খায়রুল আনাম শাকিল: ছায়ানটের 
সহসভাপতি 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রব ন দ র ছ য় নট র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোলায় আটকে রাখা ৮টি গ্যাসভর্তি গাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা

ভোলায় পাওয়া গ্যাস দিয়ে জেলার উন্নয়নসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আটক ইনট্রাকো কোম্পানির এলপিজি গ্যাসভর্তি আরও আটটি গাড়ি (কাভার্ড ভ্যান) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বদ্বীপ ছাত্রকল্যাণ সংসদের নেতারা।

এ সময় আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিও দেওয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ভোলার সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড কার্যালয়ের সামনে ছাত্র-জনতা লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটে বসবে।

ভোলাবাসী গত তিন বছর পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। দাবিগুলো হলো, ভোলার গ্যাস ভোলায় ব্যবহার করতে হবে, ঘরে ঘরে গ্যাস–সংযোগ দিতে হবে, ইন্ট্রাকোর সঙ্গে করা অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে, ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে, ভোলার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের শূন্য পদ পূরণ ও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বদ্বীপ ছাত্রকল্যাণ সংসদের আহ্বায়ক রাহিম ইসলাম বলেন, ‘ইন্ট্রাকো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে রোববার রাত পর্যন্ত আমাদের ডাকে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মশাল মিছিল করে এবং ইন্ট্রাকোর আটটি গ্যাসবাহী গাড়ি আটক করে। পরে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে ওপর মহলের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত গ্যাস ভোলার বাইরে যাবে না।’

আরও পড়ুনভোলার গ্যাস নিজেরা ব্যবহার করতে চান ভোলাবাসী, পাঁচ দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৩ ঘণ্টা আগে

রাহিম ইসলাম আরও বলেন, ‘ফেসবুকে কিছু মানুষ আমাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে, আমরা নাকি টাকার বিনিময়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, গাড়িগুলো কেবল নিরাপত্তার স্বার্থে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি।’

‘আগামীর ভোলা’ সংগঠনের মুখ্য সংগঠক মীর মোশাররফ বলেন, ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে একটি বিশেষ আইনের কারণে, যা সরকারের স্বার্থে প্রণীত। অথচ অন্যান্য এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাস–সংযোগ বন্ধ থাকলেও ভোলায় তা চলছে। এখন যেহেতু সংসদ বন্ধ, তাই রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে ঘরে ঘরে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া সম্ভব।

এ সম্পর্কে ইন্ট্রাকোর ভোলা ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক নুরুন্নবী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তাঁরা আমাদের গাড়িগুলো ছেড়ে দিয়েছেন। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমরা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখছি।’

আরও পড়ুনভোলায় গ্যাসভর্তি আরও তিনটি গাড়ি আটকে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, উত্তেজনা১৯ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ