আমি শৈশবে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। তখন সন্জীদা আপা আমাদের দু-একটা ক্লাস নিতেন। প্রথমদিকে জেনারেল বা সব বিষয়ে পড়তে হতো। একটু বড় হয়ে আমি নজরুলসংগীত বাছাই করি। তখন আলাদা হয়ে পড়ি। তবে আমার মামা মাহমুদুর রহমান ছায়ানটের পুরোনো ছাত্র। মামার কাছ থেকেও সন্জীদা আপার নাম শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই আপার ব্যাপারে অন্য রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তখন ছায়ানট এত বড় ছিল না। তখন শুধু গানই শেখানো হতো। একটা পর্যায়ে এসে তাদের আদর্শ, জীবন ও দর্শন আমরা ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করলাম।
এদেশে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় বাধা এলো। তাদের যুক্তি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কবি না ইত্যাদি। আমরা বড় হয়ে এসব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ছায়ানট বড় হয়ে বর্তমান ভবনে এলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সন্জীদা আপা কিছু কথা বারবার বলতেন– ছায়ানটের মূল উদ্দেশ্য কী; বাঙালি সংস্কৃতি কী; কেন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং এই সংস্কৃতি জেনে নিজেকে আমরা কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি।
একটা সময় আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে ছায়ানটের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হই। শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি একটা পর্যায়ে ছায়ানটের কার্যকরী পরিষদেও যুক্ত হলাম। পরে আমাকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০-২২ বছর এ পদে বহাল ছিলাম। এ সময়ে সন্জীদা আপার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা, মেলামেশার সুযোগ হয়। সন্জীদা আপা কোন বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। মাঝে মাঝে বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন। আমি তাঁকে বলেই রাখতাম: আপা, আমি কিন্তু বক্তৃতা করতে পারব না। আমার অভ্যেস নেই। তখন তিনি বলতেন, তুই পারবি। আমি দু-একবার টেলিভিশনে তোর কথাবার্তা শুনেছি। তুই ভালো বলিস, তুই খুব পারবি। এই বলে ধীরে ধীরে আমাকে বলতে শেখান। সাহস জোগান।
খুব কাছে থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু ব্যাপারে আমি খুব অবাক হতাম। তিনি শতভাগ সৎপথে চলার মানুষ। এগুলো দেখতে দেখতে আমরা এমন পর্যায়ে গেছি, ছায়ানটের একটা ছেলে-মেয়ে চট করে অসৎ পথে পা বাড়াতে পারে না। কারণ দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা আর নিজেকে বড় না ভেবে তৈরি করার ব্যাপার।
আমাদের সবসময় বলা হতো, এটা সাধনার একটা জায়গা। এখানে যখনই প্রবেশ করবে, তুমি এখানে সাধনা করতে এসেছ। সেই ভাবনা নিয়ে পথ চলবে। মেয়েদের সাজগোজের ব্যাপারে সিম্পল থাকার তাগিদ দিতেন। এখানে রং-চং মেখে আসার জায়গা নয়। মন দিয়ে সংগীত শিখবে। আর ধ্যান যাতে সংগীতে থাকে। সেদিকে প্রধানত মনোনিবেশ করবে।
এসব শুনতে শুনতে সন্জীদা আপার জীবন সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন করাটা আপার জীবনে প্রধান ছিল। জীবনকে খুব সাধারণভাবে পরিচালনা করা। এর মধ্যেই আপা আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রতিবেশীদের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা আনন্দে জীবন কাটিয়েছেন।
এই যে শিক্ষাটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আমরা শতভাগ রপ্ত করতে না পারলেও আমাদের উচিত তাদের দর্শন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। এর অর্ধেকও যদি একজন ব্যক্তি লালন করতে পারেন, তাহলে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। যারা রবীন্দ্রনাথকে পুনরায় আমাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের মধ্যে সন্জীদা আপা অন্যতম। পহেলা বৈশাখ এভাবে উদযাপনের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওয়াহিদুল হক, মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, ফরিদা হাসানসহ অনেকে রবীন্দ্র আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। আজ তাদেরও আমি স্মরণ করছি। সন্জীদা আপার জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হোক।
খায়রুল আনাম শাকিল: ছায়ানটের
সহসভাপতি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রব ন দ র ছ য় নট র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বার্সার কাছে শীর্ষস্থান হারানোর পর আলোনসো: সামনের পথ এখনো লম্বা
টানা ড্রয়ের হতাশা সত্ত্বেও দলকে নিয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জাবি আলোনসো। তাঁর ভাষায়, “মৌসুম অনেক লম্বা। সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর।”
রবিবার লা লিগায় জিরোনার মাঠে ১-১ ব্যবধানে থেমেছে রিয়াল, যা তাদের টানা তৃতীয় ড্র। মন্টিলিভিতে বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে আজ্জেদিন উনাহির গোলে পিছিয়ে পড়ে মাদ্রিদ। পরে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিন্তু জয়ের প্রয়োজনীয় গোলটি আর করতে পারেনি লস ব্ল্যাঙ্কোস।
আরো পড়ুন:
রোনালদোর রেকর্ড ভেঙে চ্যাম্পিয়নস লিগে এমবাপ্পের দ্রুততম হ্যাটট্রিক
বেলিংহামের শেষ মুহূর্তের গোলে হার এড়াল রিয়াল
এই ড্রয়ের ফলে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে থাকল রিয়াল। বার্সেলোনা আবার মঙ্গলবার খেলবে চতুর্থস্থানের আতলেতিকোর বিপক্ষে।
আলোনসো ম্যাচ শেষে বলেন, “দ্বিতীয়ার্ধে আমরা অনেক ভালো খেলেছি, সুযোগও তৈরি করেছি। কিন্তু তিন পয়েন্ট তুলে নেওয়ার মতো নিখুঁত হতে পারিনি। তারপরও মৌসুমটা দীর্ঘ এবং আমাদের লড়ে যেতে হবে।”
মৌসুমের শুরুটা দুর্দান্ত কাটিয়েছিল রিয়াল। প্রথম ১১ ম্যাচের ১০টিতেই জয়। কিন্তু নভেম্বর মাসে ভায়েকানো, এলচে ও জিরোনার বিপক্ষে তিন ড্র, সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুলের কাছে হারের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আলোনসোর প্রকল্প নিয়ে।
আলোনসো বলেন, “মৌসুমের আলাদা আলাদা পর্যায় থাকে। শুরুতে আমরা অ্যাওয়ে ম্যাচে বেশি ধারাবাহিক ছিলাম। আজ ১-০ পিছিয়ে থেকেও দলটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় গোল করার মতো তিন-চারটা পরিষ্কার সুযোগ তো ছিলই।”
নিজেদের চেষ্টা নিয়ে তিনি কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি, “পিছিয়ে যাওয়ার পর দলের প্রতিক্রিয়া আমার ভালো লেগেছে। যদিও যথেষ্ট ছিল না, তবু আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম। এখন একসঙ্গে থাকতে হবে, আত্মসমালোচনাও দরকার এবং জেতার মানসিকতা ধরে রাখতে হবে। সামনে আবার অ্যাওয়ে ম্যাচ, বুধবার বিলবাওতে সুযোগ আছে।”
ম্যাচে রদ্রিগোকে বক্সে ফাউল করা নিয়ে ভিএআর না দেখায় কিছুটা বিস্ময়ও প্রকাশ করেন আলোনসো, “আমি ঘটনাটা দেখিনি, কিন্তু শুনেছি ভিএআর দেখতে পারত। এমন মুহূর্তগুলোই অনেক সময় ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়।”
ঢাকা/আমিনুল