Samakal:
2025-11-19@09:09:25 GMT

আপার দেখানো পথ

Published: 27th, March 2025 GMT

আপার দেখানো পথ

আমি শৈশবে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। তখন সন্‌জীদা আপা আমাদের দু-একটা ক্লাস নিতেন। প্রথমদিকে জেনারেল বা সব বিষয়ে পড়তে হতো। একটু বড় হয়ে আমি নজরুলসংগীত বাছাই করি। তখন আলাদা হয়ে পড়ি। তবে আমার মামা মাহমুদুর রহমান ছায়ানটের পুরোনো ছাত্র। মামার কাছ থেকেও সন্‌জীদা আপার নাম শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই আপার ব্যাপারে অন্য রকম একটা ধারণা গড়ে ওঠে। তখন ছায়ানট এত বড় ছিল না। তখন শুধু গানই শেখানো হতো। একটা পর্যায়ে এসে তাদের আদর্শ, জীবন ও দর্শন আমরা ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করলাম। 
এদেশে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় বাধা এলো। তাদের যুক্তি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কবি না ইত্যাদি। আমরা বড় হয়ে এসব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ছায়ানট বড় হয়ে বর্তমান ভবনে এলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা আপা কিছু কথা বারবার বলতেন– ছায়ানটের মূল উদ্দেশ্য কী; বাঙালি সংস্কৃতি কী; কেন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং এই সংস্কৃতি জেনে নিজেকে আমরা কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি। 

একটা সময় আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে ছায়ানটের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হই। শিক্ষকতা শুরু করি, পাশাপাশি একটা পর্যায়ে ছায়ানটের কার্যকরী পরিষদেও যুক্ত হলাম। পরে আমাকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০-২২ বছর এ পদে বহাল ছিলাম। এ সময়ে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা, মেলামেশার সুযোগ হয়। সন্‌জীদা আপা কোন বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি আমাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। মাঝে মাঝে বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন। আমি তাঁকে বলেই রাখতাম: আপা, আমি কিন্তু বক্তৃতা করতে পারব না। আমার অভ্যেস নেই। তখন তিনি বলতেন, তুই পারবি। আমি দু-একবার টেলিভিশনে তোর কথাবার্তা শুনেছি। তুই ভালো বলিস, তুই খুব পারবি। এই বলে ধীরে ধীরে আমাকে বলতে শেখান। সাহস জোগান। 

খুব কাছে থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু ব্যাপারে আমি খুব অবাক হতাম। তিনি শতভাগ সৎপথে চলার মানুষ। এগুলো দেখতে দেখতে আমরা এমন পর্যায়ে গেছি, ছায়ানটের একটা ছেলে-মেয়ে চট করে অসৎ পথে পা বাড়াতে পারে না। কারণ দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা আর নিজেকে বড় না ভেবে তৈরি করার ব্যাপার। 
আমাদের সবসময় বলা হতো, এটা সাধনার একটা জায়গা। এখানে যখনই প্রবেশ করবে, তুমি এখানে সাধনা করতে এসেছ। সেই ভাবনা নিয়ে পথ চলবে। মেয়েদের সাজগোজের ব্যাপারে সিম্পল থাকার তাগিদ দিতেন। এখানে রং-চং মেখে আসার জায়গা নয়। মন দিয়ে সংগীত শিখবে। আর ধ্যান যাতে সংগীতে থাকে। সেদিকে প্রধানত মনোনিবেশ করবে। 
এসব শুনতে শুনতে সন্জীদা আপার জীবন সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন করাটা আপার জীবনে প্রধান ছিল। জীবনকে খুব সাধারণভাবে পরিচালনা করা। এর মধ্যেই আপা আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রতিবেশীদের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা আনন্দে জীবন কাটিয়েছেন। 

এই যে শিক্ষাটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আমরা শতভাগ রপ্ত করতে না পারলেও আমাদের উচিত তাদের দর্শন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা। এর অর্ধেকও যদি একজন ব্যক্তি লালন করতে পারেন, তাহলে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। যারা রবীন্দ্রনাথকে পুনরায় আমাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের মধ্যে সন্জীদা আপা অন্যতম। পহেলা বৈশাখ এভাবে উদযাপনের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওয়াহিদুল হক, মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, ফরিদা হাসানসহ অনেকে রবীন্দ্র আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। আজ তাদেরও আমি স্মরণ করছি। সন্‌জীদা আপার জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হোক।

খায়রুল আনাম শাকিল: ছায়ানটের 
সহসভাপতি 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রব ন দ র ছ য় নট র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনের দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ

ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সরকারের দুই মন্ত্রী অবৈধ অবকাঠামো ও বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতির মামলায় পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের প্রেস অফিসার ক্লেয়ার কাস্ত্রো স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, নির্বাহী সচিব লুকাস বারসামিন এবং বাজেট ও প্রশাসন সচিব অ্যামেনাহ পাঙ্গানডামান উভয়েই তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

কাস্ত্রো বলেন, “বন্যা প্রতিরোধমূলক প্রকল্পে তাদের দপ্তরগুলোর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর, প্রশাসনকে বিষয়টি যথাযথভাবে সমাধান করার সুযোগ দেওয়ার দায়িত্বস্বরূপ তারা পদত্যাগ করেছেন।”

ফিলিপাইনের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস-ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং সিনিয়র ফেলো আরিস আরুগে-এর মতে, জুলাই মাসে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বারসামিন এবং পাঙ্গানডামান হলেন মার্কোস সরকারের সর্বোচ্চ পদস্থ সদস্য যারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

তার মতে, প্রেসিডেন্ট নিজে আপাতত বিতর্কের বাইরে থাকলেও পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলাতে পারে।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “এই মুহূর্তে, প্রাসাদ প্রেসিডেন্টকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছে, এবং এই কারণেই নির্বাহী সচিব, বাজেট সচিবের ‘পদত্যাগ’ করা হচ্ছে। তারাই এই বিষয়ে কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন।”

আরুগে বলেন, “মার্কোস জুনিয়রের এখনও সংসদে ‘আরামদায়ক’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কারণ অনেক এমপি এখনও তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের নেতৃত্বের চেয়ে পছন্দ করেন, তবে আরো প্রমাণ সামনে এলে ‘সব বাজি শেষ’।”

চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পলাতক রাজনীতিবিদ জালডি কো বলেন, তিনি একটি বরাদ্দের কমিটির প্রধান থাকাকালে মার্কোস তাকে ‘সন্দেহজনক জনকল্যাণের’ জন্য বাজেটে ১.৭ বিলিয়ন ডলার যোগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

এক মাস ধরে তদন্তের পর দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত অভিযুক্ত প্রথম কর্মকর্তাদের মধ্যে কো ছিলেন।

মার্কিস জুনিয়র চলতি বছরের শুরুতে কংগ্রেসে এক বক্তব্যে বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ঠিকাদারদের নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারের তথ্য প্রকাশের পর দুনীর্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে দেশটির জনগণ রাস্তায় নেমে আসে।  

ফিলিপাইন প্রতিবছরই টাইফুন ও অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের কবলে পড়ে এবং বন্যা সেখানে নিয়মিতভাবে ভয়াবহ একটি সমস্যা।

এই কেলেঙ্কারিতে অভিযোগ উঠেছে যে সরকারি বাজেট থেকে প্রাপ্ত অর্থে দুর্নীতিপূর্ণ বা নিম্নমানের বন্যা প্রতিরোধমূলক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে এবং ম্যানিলার বিক্ষোভে সম্প্রতি ৫ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ