বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেত্রী লাকী আক্তারসহ বিশিষ্টজনদের নামে শাহবাগ থানায় করা হয়রানিমূলক ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দলটি। আজ রোববার এক বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং কৃষক সমিতির সংগঠক লাকী আক্তারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে একটি গোষ্ঠী দেশের গণতান্ত্রিক অর্জনকে ভূলুণ্ঠিত করতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করছে। মৌলবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি প্রগতিশীল রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘটনার সময় লাকী আক্তার রাজপথে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অথচ সেই সময়কে উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা করা হয়েছে। সেখানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদসহ আরও অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। সিপিবি নেতারা আরও বলেন, এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে বিচারের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা।

সিপিবির দাবি, লাকী আক্তার বা অভিযুক্ত অন্যদের এ ধরনের ঘটনায় যুক্ত থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, অন্যথায় এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

সিপিবি নেতাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একই ধরনের হয়রানিমূলক মামলা আরও অনেক রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধেও হয়েছে, যাঁরা প্রকৃত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন। এসব মামলা প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করছে এবং বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা নষ্ট করছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচার ও গণআদালতের চেতনা অব্যাহত রাখতে হবে। সিপিবি নেতারা গণআদালত, গণজাগরণ মঞ্চ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সব হয়রানিমূলক মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয়র ন

এছাড়াও পড়ুন:

মার্জিন ঋণ-নেগেটিভ ইক্যুইটি-প্রভিশনের তথ্য চায় বিএসইসি

দেশের পুঁজিবাজারের প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কি পরিমাণ মার্জিন ঋণ রয়েছে এবং এর বিপরীতে সৃষ্ট অনাদায়ী ক্ষতি (নেগেটিভ ইক্যুইটি) ও প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) কি পরিমাণ রয়েছে তার হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। দুটি পৃথক পৃথক নিয়মে এসব তথ্য জমা দিতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিএমবিএ) এসব তথ্য সংগ্রহকে বিএসইসিতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনার চিঠি ডিএসই ও সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএমবিএ’র সভাপতিকে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানগুলোকে মার্জিন অ্যাকাউন্টে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেয় বিএসইসি। তারই আলোকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মার্জিন ঋণ, নেগেটিভ ইক্যুইটি ও প্রভিশনের তথ্য চেয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

ঋণে জর্জরিত ৫ কোম্পানিতে বিএসইসির নজরদারি, কমিটি গঠন

সূচক ডিএসইতে কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ মার্জিন ঋণের বিপরীতে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে প্রভিশনের তথ্য প্রদান করতে হবে। সেই সাথে স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের তথ্য চলতি মাসের মধ্যে জমা দিতে বলা হলো।

এছাড়া নির্দেশনায় নেতিবাচক ইকুইটি ও মার্জিন ঋণে অগ্রগতি প্রতিবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতাষ্ঠানের নাম, ট্রেক নম্বার, মার্জিন হিসাবের নাম, বিও নাম্বার, বিও হিসাব খোলার তারিখ, মার্জিন ঋণ দেওয়া নগদ অর্থ ও শেয়ারের পরিমাণ এর মধ্যে কত জমা ও তোলা হয়েছে, সুদের পরিমাণ, সুদ ও আসল মিলিয়ে সবশেষ মার্জিন ঋণের পরিমাণ এবং পরিশোধের তারিখসহ অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে।

অপরদিকে নির্দেশনায় মার্জিন ঋণে অগ্রগতি প্রতিবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের নাম, ট্রেক নাম্বার, সচল‌ বিও হিসাবের পরিমাণ, মার্জিন ঋণ নেওয়া বিও হিসাবের পরিমাণ, নেগেটিভ ইক্যুইটির বিও এর পরিমাণ, পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ, নিট সম্পদের পরিমাণ ও প্রভিশনের পরিমাণসহ অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে।

তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর থেকে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। গত ১৫ বছরের পুঞ্জিভূত এ সমস্যা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। তাই এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২৮ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করে সহায়তা ও পরামর্শ চায় বিএসইসি। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরামর্শে গত ২৪ এপ্রিল বিএসইসির ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

এ সম্পর্কে বিএসইসি জানায়, ডিবিএ ও বিএমবিএ’র আবেদনের প্রেক্ষিতে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে নেগেটিভ ইক্যুইটি ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারোজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৭টি মার্জিন বিও হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মোট মার্জিন ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ১১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং সুদ ১ হাজার ১৯১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ফলে, ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৩৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।

সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সুদ ২১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ফলে, সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, বিএসইসির অনুমোদিত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ২ হাজার ৭০৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং সুদ ১ হাজার ৪৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট প্রভিশন রেখেছে ২ হাজার ৭০১ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরাসরি: যুদ্ধ বাধলে ইরান-ইসরায়েলের অর্থনীতির কী হাল হবে?
  • সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমায় উল্লম্ফন
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • ইরান বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বিরোধ
  • হাইকোর্টে সাতজনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
  • জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে তৈরি হবে ‘গণমিনার’
  • নারায়ণগঞ্জে প্রশাসন জুলাই বিপ্লবদদের নিয়ে তামাশা করছে : গিয়াসউদ্দিন
  • নারায়ণগঞ্জে প্রশাসন জুলাই বিপ্লবদদের নিয়ে তামাশা করছে : গিয়াসউদ্দ
  • মার্জিন ঋণ-নেগেটিভ ইক্যুইটি-প্রভিশনের তথ্য চায় বিএসইসি
  • দাবি নিষ্পত্তিতে নির্ভরযোগ্য অবস্থানে ‘গার্ডিয়ান’