আগামী ১২ ও ১৩ মে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় হতে যাচ্ছে ডেনিম শিল্পের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক আয়োজন ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’র ১৮তম আসর।

এ আয়োজনে ডেনিম উৎপাদনে সর্বশেষ উদ্ভাবন, টেকসই প্রযুক্তি এবং বৈচিত্র্যময় পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সক্ষমতা ও বৈশ্বিক ডেনিম শিল্পে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরা হবে।

এ আয়োজনে অংশ নিবেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ডেনিমপ্রেমী, ডেনিম উৎপাদনকারী, ক্রেতা, ফ্যাশন ডিজাইনার, শিল্প নেতৃবৃন্দ এবং এ শিল্পে সাসটেইনিবিলিটি নিয়ে কাজ করছেন, এমন বিশেষজ্ঞ ও স্টেকহোল্ডারগণ। ডেনিম এক্সপোর এবারের আসরে ১৪টি দেশের কোম্পানি অংশ নেবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত বস্ত্র, পোশাক, সুতা, যন্ত্র, উৎপাদনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও উপকরণ প্রদর্শন করবে।

ডেনিমপ্রেমী, শিল্প বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাশন সচেতন মানুষদের একই প্ল্যাটফর্মে এনে ডেনিম শিল্পের কারিগরি উৎকর্ষ, নান্দনিকতা ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরা এই এক্সপোর অন্যতম লক্ষ্য। একইসঙ্গে টেকসই চর্চা, উদ্ভাবন, উন্নয়ন এবং দায়িত্বশীল উৎপাদনে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করাও এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে: আমেরিকান অ্যান্ড ইফার্ড বাংলাদেশ লিমিটেড, আর্গন ডেনিমস লিমিটেড, আসুটেক্স, আজগার্ড নাইন লিমিটেড, বেস্ট টেক্স কেমিক্যালস লিমিটেড, ব্ল্যাক পিওনি টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ব্লুসাইন টেকনোলজিস এজি, চ্যাংঝৌ জিংফা টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, চ্যাংঝৌ কাইলান টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, চেরি বাটন লিমিটেড, ক্লোরিস বায়োকেম ল্যাবরেটরি এলএলসি, সিলিক্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড, কালার সেন্টার এসএ, ড্যানিস, ডেল্টা টেকনোলজিক উরুনলার কিমিয়া সান ভে টিচ লিমিটেড স্টি, ডেনিম সলিউশনস লিমিটেড, ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড, ডায়মন্ড ডেনিম (স্যাফায়ার গ্রুপ), ফোশান দা শিং শুন টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ফোশান ফয়সন টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ফোশান গাভা টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ফোশান হিনটন টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ফোশান হটলাইন টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ফোশান নানহাই দেয়াও টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, জিবিওএস অটোমেট ইনকর্পোরেটেড, গুয়াংজু এইচ অ্যান্ড এইচ টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, হারবার্ট কান্নেগিসার জিএমবিএইচ, হাইলাইট টেক্সটাইল, ইতালিয়ান ট্রেড এজেন্সি, আইওয়াইআই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং-এফজেডসিও, জিয়াংইন চুনলান টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, কন ইন্ডাস্ট্রি মন্ডিসলিক সান ভে টিচ লিমিটেড স্টি, কাইজার টেক্সটাইল ভে কিমিয়েভি ইউরুনলারি পাজার্লামা টিচ এএস, খান অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানি লিমিটেড, লিবার্টি মিলস লিমিটেড, ম্যাকড্রাই ডিসিকেন্ট লিমিটেড, নিয়ারকেমিকা এসপিএ, নিশাত মিলস লিমিটেড, অফিসিনা+৩৯, প্যান্থার টেক্সটাইলস কোম্পানি লিমিটেড, পান্যা ফ্যাশন, রেসাস কেমি, আরএনটি (বিডি) লিমিটেড, এসএবি, শানডং ল্যানইয়ান টেক্সটাইলস কোম্পানি লিমিটেড, শাওশিং ফেইফানলান টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, সিদ্দিকসন্স লিমিটেড, সিম গ্রুপ (আজলান ডেনিম লিমিটেড এবং সিম ফেব্রিকস লিমিটেড), সোকো, সুদর্শন জিন্স প্রাইভেট লিমিটেড, দ্য ফ্ল্যাক্স কোম্পানি এসএএস, দ্য উলমার্ক কোম্পানি, ইউনিভার্সাল ডেনিমস লিমিটেড, এক্সডিডি টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, ওয়াইকেএকে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, জেইটেক্স এসপিএ, জেডএএম ট্রিমস লিমিটেড, ঝেজিয়াং জিনসুয়ো টেক্সটাইলস কোম্পানি লিমিটেড এবং ঝেজিয়াং শিনলান টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড।

প্রদর্শনীতে থাকছে শিক্ষামূলক কর্মশালা, প্রযুক্তিনির্ভর সেমিনার এবং ইন্টার‌্যাকটিভ প্রদর্শনী, যা অংশগ্রহণকারীদের ডেনিম শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর ধারণা দেবে।

ডেনিম শিল্পের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে থাকবে দুটি প্যানেল আলোচনা সভাও।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেছেন, “বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো কেবল দেশীয় প্রতিভার প্রদর্শনী নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের নামী ব্র্যান্ডগুলো এখানে এসে বাংলাদেশের এবং বিভিন্ন দেশের ডেনিম উৎপাদকদের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির অসাধারণ সমন্বয়, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “ডেনিমের কোনো সীমানা নেই, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোও তাই সীমাহীন। আমরা একে এমন একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছি, যেখানে বৈচিত্র্যময় ডিজাইন এবং বৈশ্বিক শিল্পের পরিবর্তনশীল রূপ একসঙ্গে প্রতিফলিত হয়।”

ঢাকা/হাসান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

নাক চেপে ধরে ঢুকতে হয় শহরে

টাঙ্গাইল শহরের দুই প্রবেশপথ বাইপাস রাবনা ও কাগমারী। দুই এলাকায় এলেই কটু দুর্গন্ধ নাকে আসে। কারণ দুই জায়গায়ই রয়েছে ময়লার ভাগাড়। ফলে এ এলাকা দিয়ে শহরে ঢুকতে হলে নাকে রুমাল চেপে ধরতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে খোলা স্থানে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।
১৮৮৭ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। এর পর পার হয়েছে ১৩৮ বছর। আজও গড়ে তোলা হয়নি ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। নেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও। ফলে মহাসড়কের পাশে যত্রতত্রভাবে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। পৌরসভার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আজও তাদের সে দাবি পূরণ হয়নি।
বাইপাস রাবনা ও কাগমারী এলাকায় যেভাবে বর্জ্য ডাম্পিং করা হয়, তাতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। শহরের প্রবেশপথে ময়লা ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আইনের প্রয়োগও দরকার। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্যবান্ধব করতে পৌরসভাকে মূল ভূমিকা নিতে হবে।
রাবনা বাইপাস এলাকার আসিফ হোসেন নামে স্কুলছাত্রের ভাষ্য, ‘এখান দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় দুর্গন্ধে পেট ফুলে যায়। বাতাসের সঙ্গে আসা দুর্গন্ধ বাড়িতেও পাওয়া যায়।’ জায়গাটিতে ময়লা না ফেলতে সবার প্রতি অনুরোধ তার। একই এলাকার দোকানি সরোয়ার হোসেন বলছিলেন, ময়লার জন্য দোকানে গ্রাহক আসতে চান না। খাবারে মাছি বসে। ব্যবসা করা কষ্টকর হয়ে গেছে। তবুও পেটের দায়ে দুর্গন্ধের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শহর থেকে পৌরসভার ভ্যানে করে খোলা স্থানে এসব ফেলা হচ্ছে। জেলার উত্তরের ছয় উপজেলার মানুষ শহরে এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে থাকতে দেখা যায়। পথচারীরা দ্রুত জায়গাটি পার হচ্ছিলেন। ময়লার মধ্যে পশুর মরদেহও পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এর মধ্যেই টোকাইরা বিক্রির উপযোগী সামগ্রী খুঁজছিলেন মনোযোগ দিয়ে। কাগমারী শ্মশানঘাটের উত্তর দিকে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। নাগরপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এ সড়কে যাতায়াত করেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি এমএম আলী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথও এটি। দুর্গন্ধে তারাসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ভাষ্য, ‘আমাদের কি যে খারাপ লাগে, সেটি বলে বোঝোতে পারব না। ঘরে থাকা, রান্না ও খাওয়া কিছুই তৃপ্তি সহকারে করতে পারি না। আমরা অনেকবার বলেছি, কোনো লাভ হয়নি।’ এ সড়কে অটোরিকশা চালান সাহেব আলী। তিনি বলেন, ‘দুর্গন্ধে অবস্থা ভয়াবহ। যাত্রীরা উঠতে চান না।’ লেবু মিয়া নামে এক যাত্রী বলছিলেন, শহরে প্রবেশের মূল সড়কে এমন ভাগাড় অশোভনীয়।’ আর আফজাল হোসেন জানান, এ সড়কে চলাচলের সময় তাঁর শ্বাসকষ্ট হয়।
ময়লার ভাগাড় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এবং রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ও রোগ-জীবাণু ছড়ায়। এখানকার মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নালায় ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
খোলা স্থানের ময়লা-আবর্জনা থেকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের জটিল রোগ হতে পারে। বায়ুদূষণের কারণে এলার্জি এবং অ্যাজমার সমস্যা প্রকট হচ্ছে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। এসব তথ্য জানিয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) নজরুল ইসলাম কনক বলেন, এসব স্থান থেকে রোগ-জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে মানুষ ও পাখ-পাখালির মধ্যে ছড়ায়। বাতাসে ভারী ধাতু ছড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করছে। ফলে লিভার-কিডনির রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানান পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শিহাব রায়হান। তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে কাজ শুরু হবে। দ্রুত ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দারা আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাবেন বলে আশা তাঁর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ