বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সব জনবল নিয়ে নতুন সিভিল সার্ভিস করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবিত এই সার্ভিসের নাম হবে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (বিএইচএস)’। শুধু তা–ই নয়, এই সার্ভিসের জন্য একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র সচিবালয় করা, নিয়োগের জন্য আলাদা পিএসসি গঠন এবং পৃথক বেতনকাঠামোরও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য খাতের জন্য এখনকার মতো মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে না। অবশ্য বিদ্যমান বিসিএস ক্যাডারভুক্তদের জন্য নতুন সার্ভিসে যাওয়া বা বিকল্প সুযোগ রাখার কথাও বলেছে কমিশন।

বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসির অধীনে) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়; এর মধ্যে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারও রয়েছে। বেতনকাঠামোও অন্যান্য ক্যাডারের মতো। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য খাত পরিচালনা করা হয়। এই দুই বিভাগের দায়িত্বে থাকেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। জাতীয় অধ্যাপক ডা.

এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের প্রতিবেদনে মূল সুপারিশ করা হয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে ওই সব সুপারিশ রয়েছে। পাশাপাশি একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে পিএসসির অধীনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। সম্প্রতি সরকারের কাছে জমা দেওয়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসব ক্যাডারকে ১৩টি সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনটি পিএসসি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সার্ভিসের জন্য পৃথক দুটি পিএসসি করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। নাম হবে পিএসসি (শিক্ষা) ও পিএসসি (স্বাস্থ্য)। বাকি সার্ভিসের জন্য একটি পিএসসি হবে, নাম হবে পিএসসি (সাধারণ)। বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগে একটি পিএসসি কাজ করছে।

কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে বড় ক্যাডার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা আছেন ৩০ হাজারের বেশি। আর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রায় ১৬ হাজার।

এখন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন পুরো স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে সুপারিশ করেছে, সেটি কার্যত বিদ্যমান ব্যবস্থা পাল্টে ফেলার মতো। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, পেশাদারি, দক্ষতা ও জবাবদিহিমূলক সেবার মান নিশ্চিত করতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব জনবল নিয়ে প্রশাসনিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত ও পেশাভিত্তিক একটি নতুন সিভিল সার্ভিস গঠন করতে হবে।

বিদ্যমান পরিচালনা কাঠামোও বদলে ফেলার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, ‘হেলথ সার্ভিসের’ অধীনে ১১টি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থাকবে। এর মধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে একটি করে মোট আটটি এবং ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি করে মোট ৩টি কর্তৃপক্ষ থাকবে। আর হেলথ সার্ভিসের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মুখ্য সচিব পদমর্যাদার একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি হবেন ‘চিফ অব বিএইচএস’। তাঁর অধীনে জনস্বাস্থ্য, ক্লিনিক্যাল সেবা এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা—এই তিনটি প্রধান খাত পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদার তিনজন উপপ্রধান নিযুক্ত হবেন, যাদের নাম হবে ডেপুটি চিফ অব হেলথ বা ডিসিএইচ।

কমিশন বলছে, প্রতিটি খাতের অধীনে একজন করে মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ সৃষ্টি করা হবে, যাঁরা সচিব সমমানের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং কার্যক্রম পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ডেপুটি চিফ অব হেলথের অধীনে কাজ করবেন।

গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে অনুসন্ধান কমিটি

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বলছে, হেলথ সার্ভিসের জন্য আলাদা সচিবালয় থাকবে না। সব ফাইল ডিজি পর্যায় থেকে সরাসরি বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের ডেপুটি চিফের কাছে যাবে।

কমিশন স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এ বিষয়ে কমিশন বলেছে, স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ করে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যের অবস্থা, স্বাস্থ্য সমস্যার ধরন ও রোগতাত্ত্বিক প্রয়োজনীয়তার আলোকে উপজেলাওয়ারি বাজেট ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। আর বিভাগীয় পর্যায়ের কার্যক্রম স্বশাসিত আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে, যা নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস। জনবল নিয়োগ, বদলি, নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয়-সংগ্রহ-আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য দায়দায়িত্বের প্রয়োগযোগ্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বলেছে, কর্মরত জনবলের জন্য একটি স্বতন্ত্র চাকরিবিধি ও পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করতে হবে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন–ভাতা পাবেন, যাতে পেশাদারি, দক্ষতা ও জবাবদিহিমূলক সেবার মান নিশ্চিত হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া নিয়মিত করা এবং স্বচ্ছতা আনার জন্য একটি স্বতন্ত্র পিএসসি (স্বাস্থ্য) গঠন করতে হবে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদের ক্ষেত্রে (যেমন চিফ অব বিএইচএস, ডেপুটি চিফ অব বিএইচএস, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মহাপরিচালক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ইত্যাদি) স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর র স প র শ কর স র ভ স র জন য র স প র শ কর ছ র জন য একট স বতন ত র ব তনক ঠ ম কর মকর ত ব এইচএস অন য ন য ব যবস থ ন ম হব পর য য় পর চ ল চ ফ অব প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নানা অনিয়মের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধীদের সংবাদ সম্মেলন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসক না আসা, রোগনির্ণয়ে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, দালালদের দৌরাত্ম্য রোধসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। রোববার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে তাঁরা একটি স্মারকলিপি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সাকির আহম্মেদ। এতে জেলার আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম, সদস্যসচিব সাব্বির আহমেদ, মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাসসহ অন্য নেতা-কর্মীরা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বেশির ভাগ চিকিৎসক নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে আসেন না। আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতাল থেকে চলে যান। হাসপাতালে আসা রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার জন্য তাঁদের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষার সময় নির্ধারিত না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। এ জন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের নিয়মিত রাউন্ড না দেওয়া, দালালদের উৎপাত, শিশু ওয়ার্ডে দক্ষ নার্স না থাকা, প্রসূতি ওয়ার্ডে বকশিশ গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চিকিৎসা খাতে কোনো সংস্কার হয়নি। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের সবাইকে চাঁদাবাজ বলে হুমকি দেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসকদের সময়মতো উপস্থিতি ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চেম্বারে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন বলেন, হাসপাতালের কোনো তথ্য চেয়ে না পেলে তাঁরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা (বৈষম্যবিরোধী নেতারা) তা না করে দল বেঁধে এসে জোর করে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করায় তিনি প্রতিবাদ জানান। তখনকার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে বোঝা যাচ্ছে, কারা কেমন আচরণ করেছেন। এর বাইরে আপাতত তিনি কিছু বলতে চান না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সীমান্ত ব্যাংক নেবে অফিসার/অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার, স্নাতক পাসে অনলাইনে আবেদন
  • প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ
  • উপহার দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করা নিষিদ্ধের সুপারিশ
  • উপহার দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের সুপারিশ
  • স্বতন্ত্র ‘স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নানা অনিয়মের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধীদের সংবাদ সম্মেলন
  • বেসরকারি ব্যাংকে হেড অব ফরেন রেমিট্যান্স পদে নিয়োগ, প্রয়োজন স্নাতকোত্তর ও অভিজ্ঞতা
  • এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনছে সরকার
  • ফ্লো সাইটোমেট্রি: রক্তরোগ চিকিৎসায় দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মশালা অনুষ্ঠিত