স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। এছাড়াও বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি, রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেছে কমিশন।

আজ সোমবার সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করে কমিশন।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ:

স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি
স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি বিভাগে লাইন প্রমোশনের জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে 'সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস'-এ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ
নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিনে তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন
সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন' প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি
সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আইএইচটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করার সুপারিশ করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর স বতন ত র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগ, আপত্তিও উঠেছে

দেশে বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে চায় সরকার। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সরকার এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। তবে সরকারের এ উদ্যোগ নিয়ে সংস্থাগুলোর কারও কারও মধ্যে আপত্তি রয়েছে।

বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে একাধিক সংস্থা কাজ করে। কেউ বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়, কেউ নিবন্ধন দেয়, কেউ দেয় জমি বরাদ্দ। এ ছাড়া পরিবেশ ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স প্রভৃতি প্রয়োজনেও বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হয়। তবে মাঠপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। ফলে পদে পদে বিনিয়োগকারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব নিয়ে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ ছিল, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এতগুলো সংস্থার বদলে একটি সংস্থা থাকলে তাতে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হতো। সেই চিন্তা থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান।

যদিও এ কমিটি গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য, বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য একটি একক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম করা যেতে পারে। যেটি বিনিয়োগকারীদের জন্য এক দরজায় সেবা (ওএসএস) হিসেবে কাজ করবে। তবে সব প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করা ঠিক হবে না। কারণ, অনেক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত দক্ষতার দুর্বলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। আবার বিনিয়োগকারীরা কিছু প্রতিষ্ঠানের অধীন বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। ফলে ভালো করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কমিটি গঠন

গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গভর্নিং বোর্ডের সভায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একীভূতকরণের প্রস্তাব ওঠে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডার গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় একীভূতকরণের প্রস্তাব যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। সে আলোকে কমিটি গঠন করে ৩০ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

আট সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে। কমিটিতে সদস্যসচিব করা হয়েছে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীকে। বাকি ছয় সদস্য হলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়–সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ও অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূতকরণের বিষয়ে বিডার উত্থাপিত প্রস্তাবের সামগ্রিক বিষয় পরীক্ষা ও যাচাইপূর্বক মতামত প্রদান করবে এ কমিটি। যদিও বেজা ও বিডা বাদে অন্য চার সংস্থার কাছে প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হয়নি।

আপত্তি সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের

ছয়টি সংস্থাকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়ে ইতিমধ্যে আপত্তি জানিয়েছে একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কয়েকটি সংস্থা। যেমন  নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ১৪ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে, এমন একটি চীনা কোম্পানি ২৩ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছে। চিঠিতে ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, বেপজার বিনিয়োগ–সহায়ক নীতির কারণে তাঁরা ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছেন। এখন ছয় সংস্থা একীভূত হলে তাঁদের সামনে অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ (এফডিআই) নিরুৎসাহিত হবে।

আবার ঢাকা ইপিজেডে কার্যক্রম পরিচালনা করা আরেকটি চীনা বস্ত্র কোম্পানি ২৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বিষয়ে চিঠি লেখে। চিঠিতে একীভূত করার উদ্যোগ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে কোম্পানিটির এমডি বলেন, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত আসা উচিত।

বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বেজা, বেপজা, হাইটেক পার্কের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাও এ উদ্যোগের নানা জটিলতার কথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেজা ও বেপজার দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিডা বিনিয়োগের নিবন্ধন দেয়, কিন্তু জমি বরাদ্দ দিতে পারে না। বেপজা ও বেজা আলাদা আইনের অধীন পরিচালিত হয়। আর বেপজা শুধু রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে। ফলে তাদের কাজের পরিধি, ধরন ও সক্ষমতায় অনেক পার্থক্য রয়েছে। আবার এই ছয় সংস্থার বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট সেবা দেয়। এগুলো সমন্বয় করে একীভূত প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দুরূহ বিষয়। বরং সব কটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সাধারণ ওএসএস ধরনের প্ল্যাটফর্ম করা যেতে পারে।

ঢাকা চেম্বারের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, সংস্থাগুলো একীভূত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি ভালো পদক্ষেপ। এতে বিনিয়োগকারীরা সহজে সেবা পাবেন এবং সরকারের পক্ষেও কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে। তবে বেপজাকে এ প্রক্রিয়া থেকে আলাদা রাখা প্রয়োজন বলে মত দেন শামস মাহমুদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিকিৎসকদের নিয়ে ‘হেলথ সার্ভিস’ করে আলাদা বেতনকাঠামো ও পিএসসির সুপারিশ
  • সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
  • প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ
  • সাতক্ষীরায় গোবিন্দভোগ, গোলাপখাসসহ কয়েক জাতের আম বাজারজাতকরণ শুরু
  • কোরবানির পশুর চামড়ার ন‍্যায‍্যমূল‍্য নিশ্চিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগ, আপত্তিও উঠেছে
  • বেসরকারি ব্যাংকে হেড অব ফরেন রেমিট্যান্স পদে নিয়োগ, প্রয়োজন স্নাতকোত্তর ও অভিজ্ঞতা
  • বিটিআরসি নেবে ৩৯ জন, নবম-১০মসহ বিভিন্ন গ্রেডে চাকরি
  • এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনছে সরকার