তলদেশের মাটি সরে ভাঙন ঝুঁকিতে সড়ক, ৬০০ বাড়ি
Published: 8th, May 2025 GMT
পানির প্রবল ধাক্কায় বাঁধের বালু-মাটি ধসে পড়ছে নদীতে। সারিবদ্ধ করে ফেলা জিওব্যাগগুলো থেকেও বালু বেরিয়ে মিশে যাচ্ছে পানিতে। গতকাল বুধবার শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ৫-৬টি স্থান এভাবে ভাঙতে দেখা যায়। বাঁধ-সংলগ্ন নদীর তলদেশের মাটি সরে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে।
স্থানীয় পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান বলেন, বাঁধটি নির্মাণের পর এভাবে ভাঙন দেখা দেয়নি। মানুষ স্বস্তিতে বসবাস করছিল। কিন্তু বর্তমানে বাঁধটি ভাঙনের মুখে পড়ায় মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সড়ক, ফসলি জমির পাশাপাশি অন্তত ৬০০ বসতঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। দ্রুত বাঁধটি সংস্কার না করলে স্থানীয়দের পাশাপাশি পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও নদীগর্ভে যাবে।
পাউবো সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প চলার সময় জাজিরার নাওডোবা এলাকায় সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২, দক্ষিণ থানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। তবে ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের পরপরই এখানে নদীভাঙন শুরু হয়। তখন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার এলাকায় বাঁধটি নির্মাণ করে। এর সঙ্গে পরে নদী শাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।
গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার পদ্মায় ধসে পড়ে। এর পর বিবিএ এবং পাউবোর যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, বাঁধ-সংলগ্ন এক কিলোমিটার এলাকায় নদীর তলদেশের মাটি সরে গভীরতা অনেক বেড়েছে। বাকি এক কিলোমিটারেও নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখানেও মাটি সরে ছোট পরিসরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
চলতি বছর মাঝিরঘাট এলাকায় আরও ১০০ মিটার অংশের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে বলে জানা গেছে। পাউবো কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন বর্ষায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে পারে।
স্থানীয়রা জানান, এ দুই কিলোমিটার বাঁধের পাশে রয়েছে মহর আলী মাদবরকান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি ও কালাই মোড়লকান্দি গ্রাম। রয়েছে মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার। এ ছাড়া বাঁধ-সংলগ্ন নাওডোবা-পালেরচর সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সড়ক ও পাঁচ শতাধিক ঘর।
মাদবরকান্দি গ্রামের রাজু মাদবর বলেন, বাঁধটি অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন স্রোত দিক পরিবর্তন করায় বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বলেন, এখানে প্রায় ২০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পানি বাড়লে বাঁধ টিকবে না। আমরা তখন কোথায় যাব?
গত বছর নদীভাঙনে বাড়ির পাশাপাশি ৩০ বিঘা জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব পাইনপাড়া এলাকার ইদ্রিস মাঝি। তিনি বলেন, এখনই টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করলে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিক জানান, দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি ৩৩ হাজার জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছে। বর্ষার আগেই বাঁধটি মেরামত শেষ হবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান জানান, বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামত কাজ চলছে। আর পুরো বাঁধ মজবুত করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন জানান, ধসের বিষয়টি নিয়ে পাউবোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুরো বাঁধ মজবুতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পেঁয়াজের কেজি ৮০–৮৫ টাকা, সবজিও চড়া
বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি।
করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। যেমন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা। এদিকে তিন সপ্তাহ ধরেই বাজারে আগের চেয়ে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে এ দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম ছিল।
ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা।চার মাস পর আবার মূল্যস্ফীতি বাড়লমূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টানা চার মাস কমার পর মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জুনে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্ষা ও বন্যার মৌসুমের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
গত জুন মাসে দেশের যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল, তা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণ হলো, জুলাইয়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। শাকসবজির দামও ছিল চড়া।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এই সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।