যশোর শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা, ফরম পূরণের সময় বৃদ্ধি
Published: 10th, May 2025 GMT
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোরের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষার ২০২৫ সালের পরীক্ষার্থীদের বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের সময় পুনর্বর্ধিত করে সময় বাড়ানো করা হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যানের আদেশে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কার্যক্রমের সময় বাড়ানোর আদেশ জারি করেছেন।
দরকারি তথ্য—
১. বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের পুনর্বর্ধিত সময়: ১২ মে থেকে ১৮ মে ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত।
২.
৩. জেনে রাখুন: উল্লেখিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানগণকে পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং ফি পরিশোধ সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ফরম পূরণের আর কোনো সময় বৃদ্ধি বা অনুমিত প্রদান করা হবে না।
* বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইটআরও পড়ুনকম খরচ এবং সহজে ভিসার কারণে উচ্চশিক্ষায় বেছে নিতে পারেন এই ৫ দেশ০৮ মে ২০২৫আরও পড়ুনজাপানের স্টাডি সাপোর্ট স্কলারশিপ, ইংরেজি ও জাপানিজ দুই ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন০৮ মে ২০২৫
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৪৮ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাল্যবিবাহের শিকার সালেহা
সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় সালেহা খাতুনকে। পড়াশোনা ছেড়ে গৃহস্থালির কাজে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া মেনে নিতে পারেননি তিনি। ইচ্ছা ছিল আবার পড়াশোনা করার। ধীরে ধীরে সেই ইচ্ছা পূরণ করছেন তিনি। এবার তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তক্তপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সালেহা খাতুন (৪৮) এবার ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহার আলীর স্ত্রী।
গতকাল সোমবার রাতে তক্তপাড়া গ্রামে শাহার–সালেহা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলে বসে আছেন সালেহা। বড় ছেলে চাকরির প্রস্তুতির জন্য যে টেবিলে পড়তেন, এখন সেখানে ছেলের বইয়ের পাশে নিজের বই খুলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
সালেহা খাতুন বলেন, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই আবার পড়া শুরু করেন। স্বামী ও ছেলেরা সহযোগিতা করায় ২০১৯ সালে নতুন করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন উপজেলার শ্রীপুর রামনগর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভোকেশনাল শাখায়। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন গত ২৬ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘পরীক্ষা ভালো হচ্ছে।’
নিজের জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে সালেহা বলেন, তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার অর্জুনপাড়া গ্রামে। বাবা আবদুস সাত্তার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়। সালেহা বলেন, ‘এই বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। কিন্তু পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না। স্বামীর বাড়িতে এসে সংসার শুরু করি। সন্তানের মা হই।’
স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সালেহার পরিবার। বড় ছেলে শামীম হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে সাগর হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে অনার্স শ্রেণিতে পড়ছেন।
লেখাপড়া আবার শুরু করার বিষয়ে সালেহা বলেন, ‘আমরা ছয় ভাইবোনের মধ্যে চারজনই শিক্ষিত। তাঁরা সবাই শিক্ষকতা পেশায়। আমি কেন পিছিয়ে থাকব? সুযোগ থাকলে স্নাতক শেষ করে এলএলবি পড়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ার ইচ্ছা আছে।’ স্বামী ও সন্তানেরা সব সময় তাঁকে সহযোগিতা করেন ও উৎসাহ দেন।
তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহার আলী বলেন, ‘স্ত্রী সালেহা খাতুনের মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখেছি। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আছে। ছেলেদের সুশিক্ষিত করার পর এখন নিজে শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সংসার সামলেই সে লেখাপড়া করছে।’
সালেহার বড় ছেলে শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য মায়ের অবদান বেশি। এই বয়সে মায়ের লেখাপড়ার টান ও ধৈর্য দেখে আমি অবাক। মায়ের জন্য গর্ব হয়।’
ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সালেহা খাতুন তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছেন। এই বয়সেও তাঁর আগ্রহ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।