ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতের শেয়ারবাজারে। সপ্তাহের শেষ লেনদেনের দিন গতকাল শুক্রবার সেনসেক্স ও নিফটি—উভয় সূচকই কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। যদিও পাকিস্তানে প্রথম আক্রমণের পর গত বুধবার উল্টো ভারতের শেয়ার সূচকের উত্থান হয়েছিল।

কিন্তু গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পারেনি বাজার। ফলে এ দুই দিনে ভারতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৭ লাখ কোটি রুপি। এদিকে গত বৃহস্পতিবারের বিপুল পতনের পরে গতকাল ডলারের নিরিখে রুপির দর বেড়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানের মূল শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, গতকাল ভারতের বাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্সের পতন হয়েছে ৮৮০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট; নেমে এসেছে ৭৯ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে। অর্থাৎ সেনসেক্স আবার ৮০ হাজারের নিচে নেমেছে। নিফটি ২৬৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট পড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৮ পয়েন্ট। ছোট কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। মধ্যম সারির কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। ফলে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে সেনসেক্সের পতন হয়েছে ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৫২ পয়েন্ট; নিফটির পতন হয়েছে ৩৩৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট।

গতকাল ডলারের দর ২২ পয়সা কমে হয়েছে ৮৫ দশমিক ৩৬ রুপি। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর ১ দশমিক ৩০ রুপি পর্যন্ত নেমে যায়। গত আড়াই বছরে একদিনে সেটাই ছিল রুপির সবচেয়ে বড় পতন। তবে গতকাল রুপির দরপতনে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সেই পতনের রাশ টানা গেছে।

বাস্তবতা হলো, শেয়ার সূচকের পতন নিয়ে বিশ্লেষকেরা যত না উদ্বিগ্ন ছিলেন, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন রুপির দরপতন নিয়ে। গতকাল রুপির দর বৃদ্ধিতে তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তার ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতভর সংঘর্ষের পর উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ফলে বুধবার ভারতের শেয়ারবাজার ধাক্কা সহ্য করতে পারলেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার তা সহ্য করতে পারেনি।

এর আগেও দেখা গেছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষের সময় শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের সময় ৩ মে থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সেনসেক্স ও নিফটির পতন হয়েছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ ভবনে হামলার সময় সেনসেক্সের পতন হয় শূন্য দশমিক ৭ আর নিফটির পতন হয় শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার দুই দিন সেনসেক্স ও নিফটির উল্টো উত্থান হয়েছে যথাক্রমে ৪০০ ও ১০০ পয়েন্ট।

ভারতের ব্রোকারেজ হাউজ আনন্দ রাঠির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক সংঘাত গুরুতর আকার ধারণা করলেও ভারতের শেয়ারবাজারের তেমন একটা বেশি পতন হবে না। বিনিয়োগকারীরা এখন যে কৌশল অবলম্বন করছেন, তাঁদের সেই কৌশলেই থাকা উচিত। তারা মনে করছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে শেয়ারবাজারে সাময়িক অস্থিরতা তৈরি হলেও বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়েই গুরুত্ব দেন। এবারও সে রকম হবে বলে তাদের বিশ্বাস। প্রাথমিকভাবে যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল, দীর্ঘ মেয়াদে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

তবে এবার পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে উত্তপ্ত থাকার আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে আগামী সোমবার বাজার খোলার পর আরও কিছুটা পতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাজার বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিস্থিতি ভালোই ছিল। ভারত-যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ইতিবাচক প্রভাব আছে বাজারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্ক যুদ্ধও স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছিল বাজারে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষের কারণে সেই সুফল বাজার নিতে পারছে না। সংঘাত হয়তো তেমন একটা দীর্ঘ হবে না। ফলে সূচক যতটা পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠে আরও ওপরে ওঠার সম্ভাবনা আছে।

এনডিটিভির সংবাদে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। হামলার তীব্রতা বাড়ানোর তেমন ইচ্ছা ভারতের নেই। বাজার আগে থেকেই জানে, এই হামলা হতে পারে। সে কারণে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

এ ছাড়া ভারতের শেয়ারবাজারে কয়েক দিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। সেটাকেই ভারতীয় শেয়ারবাজারের অতটা আক্রান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, গত ১৪ দিনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৩ হাজার ৯৪০ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছেন। মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীরা ভারতের দিকে ঝুঁকছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক স ঘর ষ র র প র দর ন হয় ছ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির অনুষ্ঠান পালনে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনব্যাপী (মাঝে বিরতি দিয়ে) অনুষ্ঠান করবে সরকার। এই অনুষ্ঠানগুলো পালনের লক্ষ্যে ৩৬ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এই কমিটির সহসভাপতি এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কর্মসূচি সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাগণ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে পুরো জুলাই মাস ধরে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব বলা হয়। এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৩৬ দিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা জানাল সরকার। এ জন্য কোন দিন কী অনুষ্ঠান হবে, তা-ও জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠান হবে২৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ