টানা দুই দিন ভারতে শেয়ার সূচকের পতন
Published: 10th, May 2025 GMT
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতের শেয়ারবাজারে। সপ্তাহের শেষ লেনদেনের দিন গতকাল শুক্রবার সেনসেক্স ও নিফটি—উভয় সূচকই কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। যদিও পাকিস্তানে প্রথম আক্রমণের পর গত বুধবার উল্টো ভারতের শেয়ার সূচকের উত্থান হয়েছিল।
কিন্তু গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পারেনি বাজার। ফলে এ দুই দিনে ভারতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৭ লাখ কোটি রুপি। এদিকে গত বৃহস্পতিবারের বিপুল পতনের পরে গতকাল ডলারের নিরিখে রুপির দর বেড়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানের মূল শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, গতকাল ভারতের বাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্সের পতন হয়েছে ৮৮০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট; নেমে এসেছে ৭৯ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে। অর্থাৎ সেনসেক্স আবার ৮০ হাজারের নিচে নেমেছে। নিফটি ২৬৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট পড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৮ পয়েন্ট। ছোট কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। মধ্যম সারির কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। ফলে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে সেনসেক্সের পতন হয়েছে ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৫২ পয়েন্ট; নিফটির পতন হয়েছে ৩৩৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
গতকাল ডলারের দর ২২ পয়সা কমে হয়েছে ৮৫ দশমিক ৩৬ রুপি। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর ১ দশমিক ৩০ রুপি পর্যন্ত নেমে যায়। গত আড়াই বছরে একদিনে সেটাই ছিল রুপির সবচেয়ে বড় পতন। তবে গতকাল রুপির দরপতনে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সেই পতনের রাশ টানা গেছে।
বাস্তবতা হলো, শেয়ার সূচকের পতন নিয়ে বিশ্লেষকেরা যত না উদ্বিগ্ন ছিলেন, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন রুপির দরপতন নিয়ে। গতকাল রুপির দর বৃদ্ধিতে তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তার ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতভর সংঘর্ষের পর উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ফলে বুধবার ভারতের শেয়ারবাজার ধাক্কা সহ্য করতে পারলেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার তা সহ্য করতে পারেনি।
এর আগেও দেখা গেছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষের সময় শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের সময় ৩ মে থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সেনসেক্স ও নিফটির পতন হয়েছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ ভবনে হামলার সময় সেনসেক্সের পতন হয় শূন্য দশমিক ৭ আর নিফটির পতন হয় শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার দুই দিন সেনসেক্স ও নিফটির উল্টো উত্থান হয়েছে যথাক্রমে ৪০০ ও ১০০ পয়েন্ট।
ভারতের ব্রোকারেজ হাউজ আনন্দ রাঠির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক সংঘাত গুরুতর আকার ধারণা করলেও ভারতের শেয়ারবাজারের তেমন একটা বেশি পতন হবে না। বিনিয়োগকারীরা এখন যে কৌশল অবলম্বন করছেন, তাঁদের সেই কৌশলেই থাকা উচিত। তারা মনে করছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে শেয়ারবাজারে সাময়িক অস্থিরতা তৈরি হলেও বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়েই গুরুত্ব দেন। এবারও সে রকম হবে বলে তাদের বিশ্বাস। প্রাথমিকভাবে যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল, দীর্ঘ মেয়াদে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তবে এবার পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে উত্তপ্ত থাকার আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে আগামী সোমবার বাজার খোলার পর আরও কিছুটা পতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাজার বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিস্থিতি ভালোই ছিল। ভারত-যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ইতিবাচক প্রভাব আছে বাজারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্ক যুদ্ধও স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছিল বাজারে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষের কারণে সেই সুফল বাজার নিতে পারছে না। সংঘাত হয়তো তেমন একটা দীর্ঘ হবে না। ফলে সূচক যতটা পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠে আরও ওপরে ওঠার সম্ভাবনা আছে।
এনডিটিভির সংবাদে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। হামলার তীব্রতা বাড়ানোর তেমন ইচ্ছা ভারতের নেই। বাজার আগে থেকেই জানে, এই হামলা হতে পারে। সে কারণে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
এ ছাড়া ভারতের শেয়ারবাজারে কয়েক দিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। সেটাকেই ভারতীয় শেয়ারবাজারের অতটা আক্রান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, গত ১৪ দিনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৩ হাজার ৯৪০ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছেন। মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীরা ভারতের দিকে ঝুঁকছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক স ঘর ষ র র প র দর ন হয় ছ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
টানা দুই দিন ভারতে শেয়ার সূচকের পতন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতের শেয়ারবাজারে। সপ্তাহের শেষ লেনদেনের দিন গতকাল শুক্রবার সেনসেক্স ও নিফটি—উভয় সূচকই কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। যদিও পাকিস্তানে প্রথম আক্রমণের পর গত বুধবার উল্টো ভারতের শেয়ার সূচকের উত্থান হয়েছিল।
কিন্তু গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পারেনি বাজার। ফলে এ দুই দিনে ভারতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৭ লাখ কোটি রুপি। এদিকে গত বৃহস্পতিবারের বিপুল পতনের পরে গতকাল ডলারের নিরিখে রুপির দর বেড়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানের মূল শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, গতকাল ভারতের বাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্সের পতন হয়েছে ৮৮০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট; নেমে এসেছে ৭৯ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে। অর্থাৎ সেনসেক্স আবার ৮০ হাজারের নিচে নেমেছে। নিফটি ২৬৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট পড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৮ পয়েন্ট। ছোট কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। মধ্যম সারির কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। ফলে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে সেনসেক্সের পতন হয়েছে ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৫২ পয়েন্ট; নিফটির পতন হয়েছে ৩৩৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
গতকাল ডলারের দর ২২ পয়সা কমে হয়েছে ৮৫ দশমিক ৩৬ রুপি। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর ১ দশমিক ৩০ রুপি পর্যন্ত নেমে যায়। গত আড়াই বছরে একদিনে সেটাই ছিল রুপির সবচেয়ে বড় পতন। তবে গতকাল রুপির দরপতনে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সেই পতনের রাশ টানা গেছে।
বাস্তবতা হলো, শেয়ার সূচকের পতন নিয়ে বিশ্লেষকেরা যত না উদ্বিগ্ন ছিলেন, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন রুপির দরপতন নিয়ে। গতকাল রুপির দর বৃদ্ধিতে তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তার ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতভর সংঘর্ষের পর উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ফলে বুধবার ভারতের শেয়ারবাজার ধাক্কা সহ্য করতে পারলেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার তা সহ্য করতে পারেনি।
এর আগেও দেখা গেছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষের সময় শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের সময় ৩ মে থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সেনসেক্স ও নিফটির পতন হয়েছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ ভবনে হামলার সময় সেনসেক্সের পতন হয় শূন্য দশমিক ৭ আর নিফটির পতন হয় শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার দুই দিন সেনসেক্স ও নিফটির উল্টো উত্থান হয়েছে যথাক্রমে ৪০০ ও ১০০ পয়েন্ট।
ভারতের ব্রোকারেজ হাউজ আনন্দ রাঠির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক সংঘাত গুরুতর আকার ধারণা করলেও ভারতের শেয়ারবাজারের তেমন একটা বেশি পতন হবে না। বিনিয়োগকারীরা এখন যে কৌশল অবলম্বন করছেন, তাঁদের সেই কৌশলেই থাকা উচিত। তারা মনে করছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে শেয়ারবাজারে সাময়িক অস্থিরতা তৈরি হলেও বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়েই গুরুত্ব দেন। এবারও সে রকম হবে বলে তাদের বিশ্বাস। প্রাথমিকভাবে যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল, দীর্ঘ মেয়াদে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তবে এবার পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে উত্তপ্ত থাকার আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে আগামী সোমবার বাজার খোলার পর আরও কিছুটা পতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাজার বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিস্থিতি ভালোই ছিল। ভারত-যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ইতিবাচক প্রভাব আছে বাজারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্ক যুদ্ধও স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছিল বাজারে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষের কারণে সেই সুফল বাজার নিতে পারছে না। সংঘাত হয়তো তেমন একটা দীর্ঘ হবে না। ফলে সূচক যতটা পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠে আরও ওপরে ওঠার সম্ভাবনা আছে।
এনডিটিভির সংবাদে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। হামলার তীব্রতা বাড়ানোর তেমন ইচ্ছা ভারতের নেই। বাজার আগে থেকেই জানে, এই হামলা হতে পারে। সে কারণে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
এ ছাড়া ভারতের শেয়ারবাজারে কয়েক দিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। সেটাকেই ভারতীয় শেয়ারবাজারের অতটা আক্রান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, গত ১৪ দিনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৩ হাজার ৯৪০ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছেন। মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীরা ভারতের দিকে ঝুঁকছেন।