সংবিধান পুনর্লিখনের পক্ষে নয় গণফোরাম
Published: 10th, May 2025 GMT
বিদ্যমান সংবিধান মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। তাই নতুন করে সংবিধান লেখার পক্ষে নয় গণফোরাম। তবে জন–আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করার পক্ষে দলটি।
শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে এ অবস্থান জানানো হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী, এ কে এম জগলুল হায়দারসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাংবিধানিক সরকারের অধীনে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সংবিধান সংশোধন করতে হলে জাতীয় সংসদ ব্যতিরেকে বর্তমান কাঠামোতে সম্ভব নয়।’
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য চায় গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সংবিধানে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেটা প্রয়োগের ফলেই তিনি স্বৈরশাসক হয়েছেন এবং একচ্ছত্র রাষ্ট্রের পুরো মালিকানা তাঁর হাতে চলে গেছে।’
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে গণফোরাম। তবে এমন সরকারের মেয়াদ ১২০ দিনের পরিবর্তে আগের মতোই ৯০ দিন রাখার পক্ষে তারা।
১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি কামাল হোসেন। দলটি তাঁকে সংবিধানের প্রণেতা বলে দাবি করে। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সংবিধান সংস্কার কমিশনকে বলেছিলেন, জন–আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করা যাবে। তবে সেটা অবশ্যই জাতীয় সংসদের মাধ্যমে করা সমীচীন, এ ছাড়া কোনো সুযোগ নেই।’
সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি থাকতে পারবে না বলে মত দিয়েছে গণফোরাম। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন বলে মত তাদের। একজনের সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পক্ষে তারা। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দলটি আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনে তারা একমত নয়। গণপরিষদ নির্বাচনও সমর্থন করে না তারা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে ঐকমত্যের সম্ভাবনা: জোনায়েদ সাকি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় ষষ্ঠ দিনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক চলছে। মধ্যাহ্নবিরতির আগপর্যন্ত বৈঠকে রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে ঐকমত্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে এই বৈঠকের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ বিষয়ে নতুন একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে কী কী অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও পক্ষপাতহীনতা—এই পাঁচ বিষয়কে সমর্থন করেছেন তাঁরা।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ভবিষ্যতে অন্তত এই পাঁচ বিষয় সংবিধানে থাকতে হবে—এই রকম একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
বৈঠকে একজন ব্যক্তি কয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানান জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী কত বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সে বিষয়ে একটা প্রস্তাব ছিল ১০ বছরের। এই বিষয়ে মোটামুটি একটা ঐকমত্য তৈরির জায়গা হয়েছে।
বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে বলেছি, রাষ্ট্রের যে মূলনীতি, সেটা দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া। গণ–আকাঙ্ক্ষার সাংবিধানিক প্রতিফলন হিসেবে সেটা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তাঁরা মনে করেন মূলনীতি অব্যাহত থাকা দরকার।
সংশোধিত এনসিসির প্রস্তাবের বিষয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সাংবিধানিক পদের নিয়োগগুলো প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার উভয় পক্ষের সবাই মিলে আলোচনা করবেন; সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি থাকবেন, এর চেয়ে সুন্দর প্রস্তাব আর হতে পারে না।