শুরুতে নির্লিপ্ত থাকলেও পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কায় শেষমেশ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের
Published: 11th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যখন তুঙ্গে, তখন গত বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, ‘মূলত এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।’ তাঁর যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষকে সংঘাত থেকে সরে আসার পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু এটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নয়।
যদিও এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার সংকট নিরসনে আটঘাট বেঁধে নামেন জেডি ভ্যান্স এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। কারণটা ঠিক সেই পুরোনো ভয়—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত যদি পারমাণবিক দিকে গড়ায়? ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধেও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একই আশঙ্কায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন।
ভারত–পাকিস্তান দ্বন্দ্বে ভ্যান্স ও রুবিওর সক্রিয় হওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল, দুই দেশের বিমানবাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া গুরুতর আকাশযুদ্ধ এবং ভারতের আকাশসীমায় ৩০০–৪০০ ড্রোন পাঠিয়ে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষার পরীক্ষা। তবে শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটিতে বিস্ফোরণের পর সবচেয়ে বড় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। ঘাঁটিটি রাজধানী ইসলামাবাদের পাশে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক কেন্দ্র।
নূর খান ঘাঁটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা, যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান পরিবহন কেন্দ্র। আকাশে থাকা অবস্থায় জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে যুদ্ধবিমানগুলোকে সেখানেই জ্বালানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে এ ঘাঁটির। এটি পাকিস্তানের কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের (এসপিডি) খুব কাছে অবস্থিত। মূলত দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে এ বিভাগ। ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১৭০ বা তার বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড (ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমার সামনে থাকা বিস্ফোরক অংশ) রয়েছে। এসব ওয়ারহেড দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রাখা হয়েছে বলেও মনে করা হয়।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের ভয়াবহ হামলার পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে তীব্র সংঘাত দানা বাধে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক।
এই সংঘাত দ্রুত সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাতে পৌঁছতে পারে—মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে এমন কোনো তথ্য ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। অন্তত প্রকাশ্যে পারমাণবিক যুদ্ধসংক্রান্ত স্পষ্ট কোনো বার্তা, যা কেবল পাকিস্তানের তরফ থেকেই এসেছে।কাশ্মীর নিয়ে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। দুই দেশই অঞ্চলটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু অঞ্চলটির দুটি অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে পরিচিত এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল, তাদের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণকাঠামো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। নূর খান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে ভারত সতর্কতা দিতে চেয়েছে যে তারা চাইলে সেটা করতে পারে।
এই সংঘাত দ্রুত সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাতে পৌঁছাতে পারে—মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে এমন কোনো তথ্য ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। এমনকি প্রকাশ্যে পারমাণবিক যুদ্ধসংক্রান্ত স্পষ্ট কোনো বার্তা কেবল পাকিস্তানের তরফ থেকেই এসেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলেন। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি সরকারের এমন একটি ছোট সংস্থা, যেটি পারমাণবিক অস্ত্র কখন এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর কামানের গোলার আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বাড়ি। নিজের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ভেতরে এক ব্যক্তি। ৭ মে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি শহরের সালামাবাদ গ্রামে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পা পিছলে ট্রেনের নিচে সবজি বিক্রেতা, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চলন্ত ট্রেনের সামনে দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। পাশাপাশি দুটি ট্রেন তুলনামূলক কম গতিতে চলছিল। হঠাৎ একটি ট্রেনের সামনে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান তিনি। ট্রেনটি চলে যায় তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির নাম জালাল উদ্দিন ওরফে জালু (৪০)। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে চরআলগী ইউনিয়নের নিধনিয়া চর ব্যাপারী পাড়ার বাসিন্দা ও পেশায় সবজি বিক্রেতা ছিলেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশন এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
দুর্ঘটনার পর জালাল উদ্দিনকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বিজন মালাকার।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, জালাল উদ্দিন এলাকায় কৃষিকাজ করেন এবং সেখান থেকে কৃষিপণ্য নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্রি করেন। তিনি প্রায়ই ট্রেনে চেপে শ্রীপুর যান এবং রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরেন। গতকাল দুপুরে শাকসবজি নিয়ে ট্রেনে শ্রীপুর যান। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ধরতে রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি দৌড় দেন। এ সময় ট্রেনটি শ্রীপুর স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল। সেটি ধরতে গিয়ে পাশের রেললাইনে থাকা ঢাকাগামী মহুয়া এক্সপ্রেসের ট্রেনের নিচে পড়ে যান জালাল উদ্দিন।
নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী ও গফরগাঁও কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ব্যাপারী জানান, আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে জালাল উদ্দিনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় তাঁর পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারাল।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন বলেন, স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আবদুল বারিক।