গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো সংস্কার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “আমরা কাউকে মালিকানা দেইনি, যারা আগামীর বাংলাদেশের সংস্কার করবে।সংস্কার হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থনের মাধ্যমে। এর বাইরে সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই।”

মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী’ উপলক্ষে ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ  আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

দাকোপ ও চালনা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

টাঙ্গাইলে বিএনপির একাংশের বিক্ষোভ, উত্তেজনা

আমীর খসরু বলেন, “ফ্যাসিস্টের পলায়নের পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন আসছে, সেটা কী আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব? ধারণ করতে পারব? এই বিষয়টা আজকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের যদি বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হয়, তার বাহক হচ্ছে-একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে হবে। এটার কোনো দ্বিতীয় অল্টারনেটিভ নেই।”

তিনি বলেন, “এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে কাজগুলো শুরু করা দরকার, সে কাজগুলো শুরু হতেই দেখতে পারছি না। আমরা সেই কাজের আশেপাশে নাই কিন্তু। বিগত দিনে আমরা যেগুলো দেখে আসছি, মনে হচ্ছে সেগুলো একটা ভিন্ন রূপে আমাদের কাছে চালু হয়ে গেছে। এখানে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আমরা ৩১ দফা সংস্কার দিয়েছি। এর আগে, বিএনপি ২৭ দফা সংস্কার দিয়েছে। তার সাত বছর আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ এর মাধ্যমে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এখন যারা সংস্কারের কথা বলছে, এদের কারো চেহারা আমরা দেখি নাই। আর এদের অনেকে রাস্তায়ও ছিল না। এখন যারা বড় বড় কথা বলছে, এর বেশিরভাগ লোকের চেহারা আমরা দেখি নাই আন্দোলনের সময়। এদের মধ্যে কারো কারো চেহারা উঁকিঝুকি মেরেছে। যখন শেখ হাসিনার ক্ষমতার চাপ তাদের ওপর গেছে, তারা গর্তে ঢুকে গেছে আর বের হয় নাই। এখন তারা গর্তে থেকে বের হয়ে আমাদের সংস্কারের তালিম দিচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা পরিস্কারভাবে বলেছি, যে সমস্ত সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য হবে, সেগুলোর জন্য আমরা প্রস্তুত। দেরি কেন? আমরা কেন জানতে পারছি না, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল প্রস্তাব দিয়ে বসে আছে। আমরা তো অপেক্ষা করছি, ঐকমত্য কোথায় হবে। তারাও বলছে, ঐকমত্য করতে হবে আমরাও বলছি ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে হবে। তাহলে কোথায় ঐকমত্যটা, কোথায় আমরা জানতে পারছি না কেন?”

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, “কেউ যদি মনে করেন, ওই শেখ হাসিনার মালিকানা এখন অন্য কারো হাতে গেছে, তারা দেশের সিদ্ধান্ত নেবে, জনগণ কী চায়, না চায় তার কোনো তোয়াক্কা করবে না; সেই মালিকানা কাউকে দেয়া হয় নাই। বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। তারা সিদ্ধান্ত নিবে, আগামী দিনে কী সংস্কার হবে। সংসদে আলোচনা হবে, বাইরেও আলোচনা হবে।”

মানবিক করিডর নিয়ে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন,“এই যে একটা আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি, বাংলাদেশকে নিয়ে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে-এটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন না? মাননিক করিডোরের অর্থটা কি? এটা কার সাথে আলাপ হয়েছে? একটা অনির্বাচিত সরকার কথা বলে যাচ্ছে,তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিবিদ তো জানেন না, সিভিল সোসাইটির কেউ জানে না। এটা কার অ্যাজেন্ডা? এর পেছনে কী? বাংলাদেশকে কি আমরা আবার একটা গাধায় পরিণত করতে চাই? আবার একটি যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ঠেলে নিয়ে যেতে চাচ্ছি? কী স্বার্থে, কার স্বার্থে এই প্রশ্নগুলো তো সামনে চলে আসবে।”

আমীর খসরু বলেন, “শেখ হাসিনা বলত, আমি তো বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছি, আপাতত নির্বাচন না হলেও চলবে। মানবাধিকার কিছু না। তো এরকম কিছু কিছু কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি ইদানিং। এখানে অনেক কিছু হচ্ছে। আমি বলছি, কারো চেহারা দেখে এখানে কেউ বিনিয়োগ করবে না।বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরাও করবে না, বিদেশিরাও করবে না। নির্বাচিত সরকার ব্যতীত অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের যে আগামীদিনের অর্থনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানোর যে বড় বিষয়টা আছে, সেটা সম্ভব হবে না।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার সংসদ ব্যতিত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হবে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয় নাই। আমরা অপেক্ষা করছি, নির্বাচনের পরে শুরু হবে।”

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মো.

হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র ঐকমত য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।

এরপর ওই বিধান নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি ও ছোট দলগুলো। ছোট দলগুলো এ নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও উৎকণ্ঠার কথা কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানায়। একপর্যায়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আপত্তি জানায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ এবং নির্দেশনায় আরপিওতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
  • দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কেন এমন দুর্বোধ্য পথ
  • এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ দেওয়ার আহ্বান
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, তারা নিজেদের কাজে ফিরে যান: খসরু