নবীনগর পৌরসভায় বাস্তবায়নাধীন পানি সরবরাহ প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে পৌরবাসীর মনে। 

আদালতপাড়ার বাসিন্দা মো.

আজাদ বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে সাপ্লাইয়ের পানি রাস্তা থেকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য ফির নামে পৌরসভা ১ হাজার ও ৫০০ করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু এক বছরের প্রকল্পটি তিন বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আমরা এখনও পানি পাচ্ছি না।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর তৎকালীন পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শিবশংকর দাস নবীনগর পৌর পানি সরবরাহ প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। আইডিবির পুরো অর্থায়নে কাজটির বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২১ সালের ১২ জুলাই। একই বছরের ১২ আগস্ট কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনপিআইএল-কম্বাইন্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও মেসার্স তানভীর আহমেদ জেভি।

প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো, তিন হাজার ৮৫৫টি হাউস কানেকশন, ১২টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট ও দুটি নলকূপ স্থাপন। নবীনগর জনস্বাস্থ্য অফিস সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩০ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সরেজমিন জানা গেছে, পাইপলাইন বসানো প্রায় শেষ দিকে। দুটি নলকূপের একটি পশ্চিমপাড়ায়, অন্যটি ভোলাচং বাজারে বসানো হয়েছে। কিন্তু হাউসের কানেকশন বসানো হয়নি। কোথাও বসেনি স্ট্রিট হাইড্রেন্টও।

পৌরবাসীর মতে, কাজটি করা হচ্ছে দায়সারাভাবে। পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম ও শাহ আলমের চোখে এটা শুধু পানি সরবরাহ প্রকল্প নয়, বরং উন্নয়ন বাজেটের ভয়াবহ লুটপাট। তিন বছর ধরে তারা শুধু ‘নাটক’ই দেখে যাচ্ছেন, কিন্তু পানি পাচ্ছেন না।

বিল তোলার পর ঠিকাদারের লোকজনের গা-ঢাকা দেওয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফেসবুকে নানা প্রচার চলছে। এ বিষয়ে পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবু তাহের বলেন, ‘কাজটি পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে না। এটার কাজ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই। আমার জানামতে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ কমপ্লিট। আশা করা হচ্ছে, ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনপিআইএল-কম্বাইন্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকেই লাপাত্তা। মেসার্স তানভীর আহমেদ জেভির মালিক সামিম আহমেদের দাবি, ‘প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমরা মাত্র ৩০ শতাংশ বিল পেয়েছি, (যদিও) কাজ ৭০ শতাংশ শেষ। এক-দেড় মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’ 

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ সারোয়ার বাতেনের ভাষ্য, ‘এই কাজটি সম্পূর্ণরূপে ডিপিএইচই বাস্তবায়ন করেছে, পৌরসভা এতে জড়িত নয়। দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়।’

জেলা ডিপিএইচইর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিরউল্লাহ বলেন, এই প্রকল্পের একটি টাকাও উধাও হয়নি, হওয়ার সুযোগও নেই। ঠিকাদাররা এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বিল তুলতে পেরেছেন। প্রায় ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের প্রায় পুরোটাই বসানো হয়েছে। এখন মিটার সংযোগসহ কিছু লাইন স্থাপন বাকি আছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ত ন বছর প রসভ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

নিম্নমানের খাবার, তাও কম

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে পরিমাণেও দেওয়া হচ্ছে কম। দুর্ভোগের মুখে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা এসব অভিযোগ করেন।
সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, রোগীদের খাবার সরবরাহ করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্স নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় স্থান হওয়ার পরও সেই ঠিকাদার খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায়।
স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে হাসপাতালে তোলপাড় শুরু হয়। গত মঙ্গলবার সেখানে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। হাসপাতালের প্রধান ডা. জাকির হোসেন রোগীদের খাবারের উপকরণ পরিমাপ করেন। পরে উপকরণটি বাবুর্চিকে বুঝিয়ে দেন ঠিকাদার মুক্তার আহমদ। এদিকে গত এপ্রিল মাসে হবিগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয় থেকে দুদকের একটি টিম হাসপাতাল পরিদর্শন করে খাবার পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়।  
জানা গেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে ভর্তিরত রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিন সরকারিভাবে প্রতি বেলা ১৭৫ টাকা মূল্যের ৩ বেলা (সকালে নাশতা, দুপুরে ও রাতে ভাত) খাবার দেওয়া হয়। বিশেষ দিবসে তা ২০০ টাকা নির্ধারণ করা থাকে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, হাসপাতালটিতে সপ্তাহে তিন দিন দুপুরে ও রাতে ১৭৫ গ্রাম করে ৩৫০ গ্রাম ভাত, মুরগির মাংস ৭৫ গ্রাম করে ১৫০ গ্রাম দেওয়ার কথা। এর মাঝে মাংস পরিমাণমতো দেওয়া হচ্ছে না। সপ্তাহে চার দিন দুপুরে ও রাতে ৩৫০ গ্রাম ভাত, মাছ ৭৫ গ্রাম করে ১৫০ গ্রাম দেওয়ার কথা। প্রতিদিন রোগীদের সকালে দুটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম, দুটি পাকা কলা দেওয়ার কথা থাকলেও ছোট কলা ও নিম্নমানের পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে। মাছ-মাংসসহ মোটা চালের ভাত, বাসি তরকারিসহ নিম্নমানের খাবার পরিমাণে কম সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের বাবুর্চি সাজিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীদের খাবারে সব ধরনের উপকরণ কম দেওয়া হয়। মাছ-মাংস একজন রোগীর প্লেটে দুপুরে ও রাতে ১৫০ গ্রাম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম। সকালে নিম্নমানের পাউরুটি, ছোট সাইজের কলা দেওয়া হয়। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সের মুক্তার আহমদ কাগজে-কলমে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পেলেও হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আলমাছুর রহমান তাঁকে সহযোগিতা করছেন। তাদের দু’জনের যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
ভর্তিরত রোগী উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউছুফ আলী বলেন, পাঁচ দিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি আছি। হাসপাতালে দু’বার সামান্য ভাত, আলু এক পিস, ছোট সাইজের মাছ-মাংস দেওয়া হয়। মাছ-মাংস পুরোপুরিভাবে রান্না করা হয় না।
পৌর এলাকার বাসিন্দা আকলু মিয়া জানান, চার দিন ধরে তাঁর স্ত্রী ছমরুন বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি। খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। একই কথা জানালেন পৌর এলাকার বাসিন্দা শাহেদা আক্তার। তিনি বলেন, আমার ১১ মাসের মেয়ে মরিয়ম নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের খাবার নিম্নমানের হওয়ায় বাইরে থেকে এনে খাওয়াতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মেসার্স শিউলী এন্টারপ্রাইজের আবু তালেব মুকুল ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৯ টাকা পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিল উত্তোলন করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সের মুক্তার আহমদ ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকার বিল উত্তোলন করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সের মুক্তার আহমদ ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫০ টাকার বিল উত্তোলন করেন। এক বছরের ব্যবধানে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকা অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ইজিপি টেন্ডারে দু’জন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন। সেখানে এক বছরের জন্য সর্বনিম্ন ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ টাকার দর দেন শিউলী এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্স ৩০ লাখ ৪১ হাজার টাকা দর দেন। ইজিপি টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা শিউলী এন্টারপ্রাইজ কাজ পাওয়ার কথা থাকলেও কাগজপত্র সঠিক নয় বলে হাসপাতালের আলমাছ আহমদের সহায়তায় জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ঠিকাদার মুক্তার আহমদ খাবারের পরিমাণ কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খাবারে কিছুটা ত্রুটি থাকবে কারণ ভ্যাট রয়েছে। ব্যবসায়ী হয়ে দেখেন কত হিসাব। খাবারে মাছ-মাংস পরিমাণ থেকে কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। 
হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আলমাছুর রহমান জানান, তিনি ঠিকাদারের অংশীদার নন। যে কেউ এটা বলতে পারে কারও মুখ তো বন্ধ করা যায় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘পুতিন চান ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করুক’
  • হঠাৎ পাম্পগুলোতে পেট্রোল-অকটেনের সংকট
  • অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা কী, আন্দোলন থামাতে এটা কীভাবে কাজ করে
  • পর্যটন শহরে করোনা, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ
  • খেলাপি ঋণ ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে ব্যবসায়ের পরিবেশ সংকুচিত হচ্ছে: ঢাকা চেম্বার
  • চীন–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • নিম্নমানের খাবার, তাও কম
  • ভারত-রাশিয়ার মধ্যে আরও এস-৪০০ সরবরাহ নিয়ে আলোচনা