সিরিয়ার শারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত
Published: 15th, May 2025 GMT
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাসহ সিরিয়াকে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতির ইঙ্গিত পাওয়ার পরই সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ওয়াশিংটন।
শুধু তাই নয়, এখনো নিজেদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের মতে, ‘সিরিয়াকে মহান হওয়ার জন্য আরেকটি সুযোগ’ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আল-শারার সঙ্গে বৈঠকের কথা ট্রাম্প নিজেই নিশ্চিত করেন। এটি গত ২৫ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। বৈঠকে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও লিংকে যোগ দিয়েছিলেন সিরিয়ার প্রভাবশালী প্রতিবেশী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
রিয়াদে বুধবার সকালে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা করছে, যাতে দেশটি ‘মহান হওয়ার আরেকটি সুযোগ’ পায়। সিরিয়ার ওপর থেকে ‘সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া একটি সম্মানের ব্যাপার’ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রিয়াদে বৈঠকে ট্রাম্প সিরিয়ার সামনে পাঁচটি প্রস্তাব হাজির করেছেন। এর মধ্যে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাও রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁরই মধ্যস্থতায় ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তিতে সই করে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটি ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
এখন ট্রাম্পের আশা, মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশ আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করবে।
আরও পড়ুনসিরিয়ায় বাশারবিরোধী লড়াইয়ে কতটা ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের২১ ডিসেম্বর ২০২৪ট্রাম্প বৈঠকে সিরিয়ার কাছে আরও প্রস্তাব রাখেন, দেশটিকে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। এর অংশ হিসেবে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী’দের সিরিয়া থেকে বিতাড়িত করতে হবে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় থাকা আইএসের বন্দিশিবিরগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে।
জিসিসি সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমি ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চাই। তবে শর্ত হলো, তেহরানকে ‘সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, রক্তাক্ত ছায়া যুদ্ধ এবং স্থায়ী ও যাচাইযোগ্য উপায়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা বন্ধ’ করতে হবে।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও শারার সঙ্গে সাক্ষাতের ঘোষণার পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের রাস্তায় দেশটির সাধারণ মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়। তারা এটিকে ‘সিরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন।
আরও পড়ুনসিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫(বাঁ থেকে) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব
এছাড়াও পড়ুন:
নৃশংসতার সেই রাতের ৯ বছর আজ
৯ বছর আগের এই দিনেই ঢাকার গুলশানের এক নিরিবিলি সন্ধ্যা রূপ নেয় বিভীষিকায়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পর গুলশানে কূটনৈতিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁ, হোলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সেই রাতে ২০ জন নিরীহ মানুষ নির্মমভাবে প্রাণ হারান জঙ্গিদের হাতে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন ইতালি, জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন জঙ্গিদের নিক্ষেপ করা বোমায়।
রাতভর চলা সেই জিম্মি পরিস্থিতির অবসান ঘটে পরদিন সকালে, সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মাধ্যমে। ওই অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জন জিম্মিকে।
হামলার দায় স্বীকার করে ওই রাতেই বিবৃতি দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তৎকালীন সরকার আইএসের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছিল, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এই হামলার জন্য দায়ী।
নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ পেরিয়েছে। এ মামলায় বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্টে রায় হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন দণ্ডিত আসামিরা, যা শুনানির অপেক্ষায়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে ‘নব্য জেএমবির’ সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা গত মাসে (জুন) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক লিভ টু আপিল করেন বলে জানান আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় আসামির ক্ষেত্রে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে লিভ টু আপিলগুলো উপস্থাপন করা হবে।’
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। এঁদের মধ্যে আসলাম হোসেন গত বছরের ৬ জুন গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে কারারক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ওই কারাগারে কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে যায়। তখন কারারক্ষীদের গুলিতে মোট ৬ জন নিহত হন।
এই মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় গত ১৭ জুন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রাসঙ্গিক বিবরণে বলা হয়, তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ফরেনসিক, ব্যালিস্টিক, ডিএনএ ও ইমিগ্রেশন রিপোর্ট এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতৃত্বে অতি উগ্র অংশ নব্য জেএমবি পরিচয়ে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালায়।
সেই হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজন সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হন। তাঁরা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ২২ জনকে হত্যা করেছে বলে প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধে ওই পাঁচজন সন্ত্রাসী অপরাধী। তাঁদের মধ্যে যদি কেউ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁকে এই আইনের অধীনে বিচার শেষে ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ৬(২)(অ) ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত। বিচারিক আদালত ‘একই অভিপ্রায়ের’ বিষয়টি উল্লেখ করে আপিলকারীদের (সাত আসামি) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, তা সঠিক হয়নি। বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(আ) ধারায় সাত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
এদিকে হোলি আর্টিজানের সেই পুরোনো ঠিকানায় এখন আর আগের মতো কোনো রেস্তোরাঁ নেই। জায়গাটির মালিকপক্ষ পরবর্তী সময়ে রেস্তোরাঁটি আর চালু না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে সেটি একটি আবাসিক ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ভবনের দেয়ালের ভেতর আজও জমে থাকা স্মৃতি কেউ কেউ ভুলতে পারেননি। সেই রাতের ঘটনা শুধু নিহতদের নয়, গোটা জাতির স্মৃতিতে আজও স্পষ্ট হয়ে আছে।