মানিকগঞ্জ মেডিকেলে ক্যাথল্যাব চালুর আগেই চলে যাচ্ছে চমেকে
Published: 15th, May 2025 GMT
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দিতে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হলেও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর দেড়টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা.
মঙ্গলবার (১৩ মে) পাঠানো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মো. শাহাদত হোসেন কবিরের স্বাক্ষর রয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়ছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক রোগীকে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্য থেকে উপযুক্ত একটি স্থানান্তর করা প্রয়োজন।এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন।
এদিকে স্থানীয় রোগীরা জানান, হার্টের রোগীসহ মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ক্যাথল্যাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাব সচল হলে জেলার হাজার হাজার রোগীর জীবন বাঁচবে। একটি ক্যাথল্যাব অন্যত্র চলে গেলে জেলার রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘এমনিতেই হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। তার মধ্যে ক্যাথল্যাব দুটি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে আছে। তার মধ্যে একটি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এটি এ জেলার জন্য এক ধরনের মহাবিপদ। যারা ক্যাথল্যাবটি চালু করতে পারেননি এ দায় ভার তাদের।’’
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘দক্ষ জনবলের অভাবে ক্যাথল্যাব দুটি চালু করা যায়নি। আমি যোগদানের পরে চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। ক্যাথল্যাব পরিচালনার জন্য জনবল প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। দ্রুত ক্যাথল্যাব চালু করা হবে।’’
যেহেতু দুটি ক্যাথল্যাব আছে। একটি দিয়ে রোগীর সেবা প্রদান করা সম্ভব। অন্যটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন কগঞ জ ম ড ক ল ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
উন্নয়ন প্রকল্প যেন অপচয়ের প্রতীক না হয়
উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু এ লক্ষ্য ছাপিয়ে কেবল দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণেই যখন প্রকল্প সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তা উন্নয়ন নয়—একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও সম্পদের অপচয়ের নিদর্শনে পরিণত হয়। জামালপুর, রংপুর ও গোপালগঞ্জে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বর্তমান অবস্থা দেখে সেটিই স্পষ্ট হচ্ছে।
জামালপুরের মেলান্দহে ৫০ একর জমিতে নির্মিত ১৮টি ভবনের একটিও এখনো ব্যবহারে আসেনি। ভবনগুলোয় বাসা বেঁধেছে মাকড়সা, চত্বরজুড়ে ঝোপঝাড়, যন্ত্রপাতিতে জমেছে ধুলাবালু। রংপুরের তারাগঞ্জে নির্মিত ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন, গেস্টহাউস, মেডিকেল সেন্টার, লাইব্রেরি, কোয়ার্টার, হোস্টেলসহ সব ভবনই পড়ে আছে জনবল ও কার্যক্রমহীন। এসব ভবনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো যন্ত্রপাতি ও আসবাব অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। গোপালগঞ্জে সীমিত পরিসরে কিছু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চললেও প্রকল্প শুরুর আগে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি।
সরকারি নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করেছেন, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এই প্রশাসনিক দৈন্য কেবল একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান নয়; পুরো ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক অপচয় নয়; এটি পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার নিদর্শনও বটে।
এ প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তর করা। কিন্তু যেখানে জনবল নিয়োগই হয়নি, সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কীভাবে চলবে? জামালপুরে অনুমোদিত ১১০টি পদের একটিতেও নিয়োগ নেই মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ ছাড়া। রংপুরে ডিজি ও উপপরিচালক ছাড়া কারও নিয়োগ হয়নি। গোপালগঞ্জেও জনবলসংকট প্রকট।
এখানে প্রশ্ন ওঠে—এই প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা ও অনুমোদনের সময় কী পরিমাণ ভাবনাচিন্তা করা হয়েছিল? একটি প্রকল্প শুরু করার আগে এলাকাভিত্তিক চাহিদা, সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী ও বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করে শুধু নির্মাণকাজ শুরু করা হয় কেন—এ প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই দিতে হবে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন পর্যন্ত বলছে, এত একাডেমির প্রয়োজনই নেই। বরং খালি পড়ে থাকা ভবনগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য, কারিগরি শিক্ষা বা দক্ষতা প্রশিক্ষণ খাতে ব্যবহারের জন্য ইজারা দেওয়া যেতে পারে।
আমাদের দাবি, অবিলম্বে এসব প্রকল্প নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা হোক। যাঁরা এসব প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়নে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। ভবন নির্মাণের পেছনে কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ বা এলাকার নামে বরাদ্দ নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন মানে শুধু দালান নয়, মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন—এই বোধ না ফিরলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কেবল অপচয়ের প্রতীক হয়েই থেকে যাবে।