ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতার মাথায় ছুরিকাঘাত
Published: 16th, May 2025 GMT
হামলার শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহ মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাব্বী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১ নম্বর গেটসংলগ্ন মসজিদের সামনে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন আহত রাব্বী।
রাব্বী নগরীর কেওয়াটখালী মড়লপাড়া পাওয়ার হাউস রোড এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রউফের ছেলে। মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন জানান, রাব্বী স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রদলের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগে রাব্বী উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় তিনি বাকৃবি ১ নম্বর গেটসংলগ্ন মসজিদের সামনে বসেছিলেন। সে সময় কথা-কাটাকাটির সময় মো.
ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্ত ছাব্বির। ঘটনা জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট, কিনে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট চলছে। এতে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সিরিঞ্জ, ক্যানুলাসহ জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে বললে অনেক সময় রোগীর স্বজনদের তোপের মুখে পড়ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাসপাতালে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করত দলীয় সিন্ডিকেট। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী ঘরানার ঠিকাদারেরা আত্মগোপনে চলে যান। এখন তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করছেন না। এ অবস্থায় মাসখানেক ধরে স্যালাইন সেট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জ, হ্যান্ডগ্লাভসসহ নানা ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়ার্ডগুলোতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৫০ হাজার ক্যানুলা প্রয়োজন হয়; কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৫-৩০ হাজার। মাসে ১৪-১৫ হাজার স্যালাইন সেটের দরকার হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ৮-১০ হাজার। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ল্যাব মিলে ১০, ৫ ও ৩ সিসি সিরিঞ্জ প্রতি মাসে দরকার প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো। ওই অবস্থায় ল্যাবগুলোতে সিরিঞ্জ সরবরাহ ঠিক থাকলেও ওয়ার্ডের রোগীদের কিনতে হচ্ছে।
গত রোববার বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের ৬, ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে কথা হয় অন্তত ১০ জন রোগী ও তাঁদের স্বজনের সঙ্গে। জামালপুরের মেলান্দহ থেকে আসা মো. বাদশা (৪৫) ভর্তি আছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বড় একধরনের সিরিঞ্জ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় অন্য সব ওষুধ দিচ্ছে।
এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৫০ হাজার ক্যানুলা প্রয়োজন হয়; কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৫-৩০ হাজার। মাসে ১৪-১৫ হাজার স্যালাইন সেটের দরকার হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ৮-১০ হাজার। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ল্যাব মিলে ১০, ৫ ও ৩ সিসি সিরিঞ্জ প্রতি মাসে দরকার প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো।ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর এলাকার রাকিবুল ইসলামের স্ত্রী মারিয়া আক্তার গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তির সময় স্যালাইন সেট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জও বাইরে থেকে এনে দিতে হয়েছে। ওষুধও বাইরে থেকে আনতে হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে বলায় রোগীর স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে নার্স ও চিকিৎসকদের। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা শনিবার হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক করেন। এতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস, উপপরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) শেখ আলী রেজা সিদ্দিকী, সিনিয়র স্টোর অফিসার ঝন্টু সরকার উপস্থিত ছিলেন। অন্য চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন মো. শাদাব ইবনে শরাফত, বেনজীর আহমেদ, ইফতেখার হায়দার, আরিফ মাহবুব, খায়রুল জুয়েল, মো. আনিসুর রহমান, মহিউদ্দিন মাহি, জাহিদ সোহান, সোহেল রানা হিমেল, তুবাউল লিমাত প্রমুখ।
এ সময় চিকিৎসকেরা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জাম নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের জন্য হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। এ ছাড়া তাঁরা হাসপাতালের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধ করার দাবিসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
হাসপাতালের কিডনি বিভাগের চিকিৎসক মো. শাদাব ইবনে শরাফত প্রথম আলোকে বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগী এলে যে জরুরি জিনিসগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলোর চাহিদামতো সরবরাহ হচ্ছে না। এতে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে জিনিস কিনে আনতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মাসখানেক রোগীদের জন্য অতীব জরুরি স্যালাইন সেট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জ না থাকায় চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম রোগীরা হাসপাতাল থেকে প্রাপ্য। হাসপাতালের ৮০ শতাংশ রোগী দরিদ্র হওয়ায় তাঁদের জন্য কিনে আনাটাও কষ্টকর।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, যেন দ্রুত সমস্যা নিরসন করা হয়। এ ছাড়া হাসপাতাল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা, দালালদের দৌরাত্ম্যসহ অন্যান্য বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে।’
একজন মুমূর্ষু রোগী এলে যে জরুরি জিনিসগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলোর চাহিদামতো সরবরাহ হচ্ছে না। এতে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে জিনিস কিনে আনতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।মো. শাদাব ইবনে শরাফত, কিডনি বিভাগের চিকিৎসকময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদারেরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া। তাঁরা গা ঢাকা দেওয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসপত্র সরবরাহ করছিলেন না। বারবার চিঠি দেওয়া হলেও তাঁরা প্রয়োজনের তুলনায় কম জিনিস সরবরাহ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা চালিয়ে নিলেও মাসখানেক কিছুটা এমন পরিস্থিতি হয়। সেটা ওভারকাম করে ফেলেছি। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া চিকিৎসকেরা যেসব বিষয় উত্থাপন করেছেন, সেগুলো নিরসনে কাজ চলছে।’