মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 17th, May 2025 GMT
মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, মাইক্রোক্রেডিট’র জন্য আলাদা আইন করতে হবে। এনজিওভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে মাইক্রোক্রেডিটকে ব্যাংকিংয়ের ধারণা গ্রহণ করতে হবে। আর এ ধারণা গ্রহণ করেই ঋণগ্রহীতাকে সেবা দিতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধনকালে এসব কথা জানান। খবর বাসসের
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট এখনো এনজিও। এই এনজিও থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। এনজিও পর্যায়ে থেকে গেলে ব্যাংকিং মেজাজ আসবে না। মেজাজে আসতে হলে এটাকে ব্যাংক হতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট’র জন্য আলাদা আইন করতে হবে।’
গ্রামীণ ব্যাংকের শুরুর সময়কার স্মৃতিচারণ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংক করলাম তখন আপত্তি উঠলো এটাকে ব্যাংক বলা যাবে কি না। আমরা বললাম, আমাদেরটাই প্রকৃত ব্যাংক, তোমাদেরটা লোক দেখানো। ব্যাংক যে শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে সেটা হলো ট্রাস্ট, তোমরা যেটা করছো সেটা ডিসট্রাস্ট। আমাদের ব্যাংকিং মানুষের বিশ্বাসের ভিত্তিতে হয়েছে। জামানতবিহীন ব্যাংক, বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা টাকা দেই।’
তিনি বলেন, ‘আজ এমন সময় আমরা আলাপ করছি যখন জামানতওয়ালা ব্যাংক, যারা নিজেদের প্রকৃত ব্যাংক বলে দাবি করত তাদের অনেকে আজ হাওয়া। টাকা নিয়ে লোপাট। ব্যাংক শেষ। আর মাইক্রোক্রেডিটের পরিসংখ্যান দেখেন। কেউ পয়সা নিয়ে পালায় নাই। এই হলো পরিহাস।’
মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটাই প্রকৃত ব্যাংকিং, আগামী দিনের ব্যাংকিং যেটাতে মানুষ নিজের পরিচয়ে কাজ করবে, নিজের বিশ্বাসের ওপরে ব্যাংকিং চলবে, টাকার উপরে না।’
মাইক্রোক্রেডিটের জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের পর প্রত্যেক এনজিও চেষ্টা করলো একইরকম কিছু করতে। ক্রমে ক্রমে প্রসার হতে আরম্ভ করল। নানারকমের নতুন নতুন জিনিস, নানা আইডিয়া নিজেদের সুবিধার জন্য ঢোকাতে আরম্ভ করল। এটা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে মনে করে একটি রেগুলেটরি অথরিটির প্রয়োজন হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, তারা বলল ‘আমাদের কাজ না’। অর্থ মন্ত্রণালয় শুরুতে গুরত্ব দিল না, পরে বলল ‘আচ্ছা কী করতে হবে জানাও’। তখন আমরা বললাম, ‘রেগুলেটরি অথরিটি হওয়া দরকার, কারণ যে হারে বাড়ছে বড় রকমের সমস্যা হতে পারে।’
‘তৎকালীন গভর্নর ফখরুদ্দীন সাহেব আমাদের সমর্থন করলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এটা হতে পারবে না। তারা ব্যাখ্যা চাইল। আমি বললাম, এটা বহু দেশে বলেছি, এখনো বলি, গ্রামীণ ব্যাংকও ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংকও ব্যাংক। কিন্তু তফাত অনেক। উদাহরণ দেই, আমেরিকান ফুটবলও ফুটবল। ইউরোপিয়ান ফুটবলও ফুটবল। কিন্তু খেলা ভিন্ন। আপনি যদি ইউরোপিয়ান ফুটবলের রেফারিকে দিয়ে আমেরিকান ফুটবল খেলা চালাতে চান ইট উইল বি অ্য ডিজাস্টার। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ করবেন, সে তো ক্ষুদ্রঋণ জানেই না। সে তো ইউরোপীয় ফুটবলের রেফারি,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘অবশেষে ফখরুদ্দীন সাহেব রাজি হলেন। গভর্নরকে দিয়ে এটা পরিচালনা করানোর ব্যাপারেও তাঁকে রাজি করাতে হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে এর অফিস করার আলোচনা ছিল। আমরা বললাম, আলাদা জায়গায় অফিস হতে হবে.
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কে হবে এ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ না, যে দেশেই মাইক্রোক্রেডিট হয়েছে সে দেশই সমস্যায় পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে বারে বারে বলে এসেছি তোমাদের এত কিছু চিন্তা করতে হবে না। কারণ বাংলাদেশ এর সমাধান দিয়ে দিয়েছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি শুধু যে বাংলাদেশের জন্য কাজ করেছে তা না এটা আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশের জন্যে সহায়ক হয়েছে।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রেগুলেটরের ওপর কড়া না হয়ে ইউজার ফ্রেন্ডলি রেগুলেশন যেন হয় সেভাবে আইন করা, যেন কোনোকিছু চাপিয়ে না দেয়া হয়। এমআরএ’কে এখন রেগুলশনের পাশাপাশি প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটিও দেখতে হবে। সেভিংসের রিটার্ন, সার্ভিস চার্জ যেন সহজ হয় সেদিকে নজর দিন। উপকারভোগীদের জন্য যেন সহজ হয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট আজ অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের ১০ শতাংশ সমপরিমাণ সম্পদ আছে মাইক্রোক্রেডিট সেক্টরে। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংকিং খাতে যে জায়গাগুলোতে দুর্বলতা আছে, মাইক্রোক্রেডিট সে জায়গায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সদস্যদের সঞ্চয় বেড়ে ৬৮ হাজার কোটি টাকার ওপর, পুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত বেড়ে ৬১ হাজার কোটি টাকার উপরে হয়েছে। এটা বড় অর্জন। তারা নিজেদের সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলছে। বিদেশি সহায়তা, অনুদান নাই বললেই চলে। দাতা তহবিল তিন হাজার কোটি টাকার মতো। এটা খুবই নগণ্য।’
‘বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতি বাড়ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে পড়ছে। মাইক্রোক্রেডিটের শাখা আছে ২৬ হাজারের মতো। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এখানে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ফরমাল সেক্টরের পদচারণা বাড়ছে, বাড়বে। মাইক্রোফাইন্যান্স ইন্সটিটিউটটে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট আরও ফাংশনাল করতে রেগুলেটরি অথরিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করবে,’ বলেন তিনি।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি নিয়ে নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে। সরকারের কাছে শিগগিরই নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. এম আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ফ টবল আম দ র র জন য র ওপর অথর ট এনজ ও বলল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে দুই শতাধিক মরা গাছে, চলাচলে ঝুঁকি
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই অংশে সড়কের দুই পাশে দুই শতাধিক গাছ মারা গেছে। এসব গাছের অংশই ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো না সরালে বড় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া এলাকার মানুষের একমাত্র চলাচলের সড়ক এটি। একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রুবেল হোসেনের ভাষ্য, ‘আমরা নিয়মিত এ মহাসড়কের মরা গাছের নিচ দিয়ে কারখানায় যাতায়াত করি। যে কোনো সময় এগুলোর অংশ ভেঙে মাথায় পড়তে পারে। ঝড় বা বৃষ্টি হলে বেশি ভয় লাগে। দ্রুত এসব যেন কেটে ফেলা হয়।’
সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের শুধু বালিথা এলাকাতেই বড় আকৃতির শতাধিক মরা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। এই এলাকায় রয়েছে তিনটি পোশাক কারখানাসহ পাঁচটি শিল্প কারখানা। শ্রমিকরা এ মরা গাছের নিচ দিয়ে চলাচল করছেন। এসব গাছের নিচে শ্রমিকদের বহনকারী যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কারণে এসব মারা গেছে বলে মনে করছে বন বিভাগ।
কিছুদিন আগে ঝড়ের সময় মহাসড়কের পাশের একটি মরা গাছের ডাল প্রাইভেটকারের ওপর এসে পড়ে বলে জানান ধামরাইয়ের বালিথা-বাথুলি এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তাঁর গাড়ির কিছুটা ক্ষতি হলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, খাতরা থেকে বারবাড়িয়া পর্যন্ত ছোট-বড় তিন শতাধিক গাছ মারা গেছে। খাতরা এলাকার শতাধিক মরা গাছ কিছুদিন আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেটে নিয়েছে। বালিথা এলাকার মরা গাছগুলো এখনও কাটা হয়নি। অনেক গাছে ঘুণপোকা আক্রমণ করেছে। যে কোনো সময় এগুলো ভেঙে পড়তে পারে যানবাহন ও পথচারীর ওপর।
মহাসড়কের পাশের গাছগুলো মারা যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান বলেন, বাসাবাড়ির বর্জ্য সড়কের পাশে ফেলছে। শিল্প কারখানা ও ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণেও এসব গাছ মারা যাচ্ছে। মহাসড়কের এক পাশের গাছ মারা গেলেও অপরপাশের গাছের কিছুই হয়নি। এমনটি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং কিছু গাছের অনেক বয়স হওয়ার কারণে এমন হতে পারে।
নয়ারহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা বলেন, ‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাছগুলো কাটা বা লাগানোর দায়িত্ব আমাদের না। এগুলো আমাদের আরেকটা বিভাগের কাজ। তার পরও মরা গাছ কাটার জন্য তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি।’