বিসিবির নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ পেতে তত মরিয়া হয়ে উঠছেন ক্রিকেট সংগঠকরা। এই লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলতে ক্লাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালে বাছাই লিগে খেলে তৃতীয় বিভাগে উন্নীত হওয়া দলগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। 

এই সময়ে ৯ আসরে ১৮টি ক্লাব তৃতীয় বিভাগে উন্নীত হলেও দুদক তদন্ত করছে ১৪টি ক্লাবের বিরুদ্ধে। চারটি ক্লাব তৃতীয় বিভাগ থেকে অননমিত হওয়ায় আমলে নেওয়া হয়নি। গতকাল দুদকের চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবি কার্যালয়ে যায় তদন্ত-সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে। ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশের (সিসিডিএম) কর্মকর্তারা বোর্ডের ক্ষমতাধর পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের নির্দেশে বাছাই লিগের অংশগ্রহণ ফি পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করে প্রান্তিক ক্রিকেটের ক্ষতি করেছেন। ক্রিকেট সংগঠকরা মনে করেন ১৪টি ক্লাবকে নিষিদ্ধ করা হলে ঢাকার ক্রিকেটে বড় শূন্যতা তৈরি হবে। বিষয়টি আইন-আদলত পর্যন্ত গড়ালে লিগের কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ জানান, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালে সিসিডিএমের কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে স্বেচ্ছাচারিতার কারণ খতিয়ে দেখতে। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আজকে (গতকাল) অভিযানের বিষয়টা ছিল তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অনিয়ম, পাশাপাশি বিসিবিকে গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ। এসব অভিযোগের আলোকে আমরা বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছি। সেগুলো সকাল থেকে পর্যালোচনা করলাম। বিভিন্ন ব্যক্তি-সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের সবার সঙ্গে কথা বললাম। আরও কিছু রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করব, কিছু বক্তব্য গ্রহণ করব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অংশগ্রহণ একসময় খুব সহজ ছিল। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে দেখা যায় কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। এই ইস্যুটা কতটুকু স্পষ্ট বা স্বচ্ছ কিনা, এর বৈধতা কেমন, বাছাই প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম ছিল কিনা, সেটা দেখলাম।’ অ্যাক্সিওম ক্রিকেটার্স, ঢাকা ক্রিকেট একাডেমি, মোহাম্মদপুর ক্রিকেট ক্লাব, নবাবগঞ্জ ক্রিকেট কোচিং, পূর্বাচল স্পোর্টিং ক্লাব, গুলশান ক্রিকেট ক্লাব, ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি, নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স, বনানী ক্রিকেট ক্লাব, মহাখালী ক্রিকেট একাডেমি, ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাব, প্যাসিফিক ক্রিকেট ক্লাব, স্যাফায়ার স্পোর্টিং ক্লাব ও আলফা স্পোর্টিং ক্লাব দুদকের তালিকাভুক্ত।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশ কয়েকটি ক্লাবের নাম পরিবর্তন হয়েছে। প্রাইভেট ক্লাব হওয়ায় পরিবর্তন এসেছে মালিকানায়ও। দুদকের তদন্ত শেষে ক্লাবগুলোকে অবৈধ করা হলে বর্তমান মালিকরা আদালতে যাবেন বলে জানান একজন ক্রিকেট সংগঠক। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লাব স্পন্সর করেছি। প্রাইভেট ক্লাব অলাভজনক বিনিয়োগ আছে। এতগুলো ক্লাবের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া ঠিক হবে না। ব্যক্তি স্বার্থে ক্রিকেটের ক্ষতি করা সমীচীন হবে না।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা