দেশের বড় চামড়ার মোকামগুলোর একটি নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ। বর্তমানে এখানে কাঁচা চামড়ার স্বাভাবিক সরবরাহ নেই। তিন সপ্তাহ পর কোরবানির ঈদ। তখন সরবরাহ বাড়বে। এতে প্রয়োজন হবে প্রচুর লবণের। এ সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিনই বাড়ছে লবণের দাম। ঈদের আগেই কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রধান এ উপকরণের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
শহরে দুই শতাধিক চামড়ার ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের ভাষ্য, এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি লবণের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। বেড়েছে অন্তত ৩০০ টাকা। যদিও লবণ ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চকবৈদ্যনাথ মোকামে দেশের ৩৬ জেলা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া আসে। লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাতের পর চার মাস এসব সংরক্ষিত থাকে। এ সময়ে চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় বিপুল পরিমাণ লবণ। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্য ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। তাদের কাছে মৌসুমি ব্যবসায়ী, ঈদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারী এবং আড়তদার জিম্মি। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। জেলায় চাহিদার তুলনায় লবণের ঘাটতিও রয়েছে।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সিদ্দিকীর ভাষ্য, গত এপ্রিল মাসে তিনি ৫০ বস্তা লবণ ১০ টাকা কেজি দরে কেনেন। ৭০ কেজির বস্তা ৭০০ থেকে ৭১০ টাকায় ছিল। গত শনিবার সেই বস্তা কিনেছেন এক হাজার টাকা দরে। ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে পাঁচ-ছয় টাকা। এক বস্তায় অন্তত ৩০০ টাকা বেড়েছে।
ঈদ সামনে রেখে কয়েকজন লবণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ আব্দুল হালিমের। তারা ইচ্ছেমতো দাম বেঁধে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ জন্য দায়ী সিন্ডিকেট। জেলায় নজরুল ইসলাম, মতিউর রহমান, রাকিব ও দীলিপ চক্রবর্তী লবণের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। 
বাজার ঘুরে জানা গেছে, এক মাস আগে ৭০ কেজির এক বস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা। বর্তমানে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের দু-একদিন আগে এ দাম এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা হওয়ার শঙ্কা চামড়া ব্যবসায়ীদের। বাজারে তেমন কাঁচা চামড়া নেই জানিয়ে ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, এখন তেমন লবণের প্রয়োজন হচ্ছে না। অথচ দাম এক হাজার টাকা করার জন্য দায়ী সিন্ডিকেটও ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না। 
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ১৪ হাজার। নাটোর বিসিক থেকে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে অন্তত ১৩ লাখ টন লবণের প্রয়োজন হবে। এ চাহিদার মাত্র ৬০ শতাংশ মজুত আছে। 
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সায়দার খান বলেন, এক মাস আগের চেয়ে এখন লবণের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ কোনো দুর্যোগ বা অতিরিক্ত চাহিদা নেই। সিন্ডিকেটের কারণে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী জিম্মি। চামড়া ব্যবসায় এমনিতেই লোকসান হচ্ছে। 
যদিও লবণের দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি জেলার শীর্ষ লবণ ব্যবসায়ী একতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী দীলিপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বস্তাপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। কোরবানির মৌসুমে নিয়মিত চামড়ার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও লবণ মজুত করেন। এতে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় দাম বাড়ে। ঈদের আগে সারাদেশেই লবণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়তে থাকে। 
অতিরিক্ত দামের ব্যাপারে আরেক ব্যবসায়ী রাকিব হোসেনের কাছে প্রশ্ন করতেই তিনি আর লবণ বিক্রি করছে না বলে দাবি করেন। বিসিকের প্রমোশন অফিসার কিশোর কুমার সরকার বলেন, বাজারের ওপর চাপ কমাতে ও দাম কিছুটা স্থিতিশীল রাখতে এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলোয় চামড়া সংরক্ষণে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হায়াত বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের দাম কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এটি পালন হচ্ছে কিনা, তদারকি করা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লবণ লবণ র দ ম ব যবস য় র ক রব ন র এক হ জ র স রক ষ ন লবণ লবণ ব

এছাড়াও পড়ুন:

পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু চলতি মাসেই

চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল ডিজেল পাইপলাইন বাণিজ্যিক পরিবহনের জন্য প্রস্তুত। পরীক্ষামূলক তেল পরিবহন সফলভাবে শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল পরিবহন শুরু হবে। এতে বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে। 
শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। এটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৩৭ কিলোমিটার। 

বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান সোমবার সমকালকে বলেন, ‘আশা করছি দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী পাইপলাইন প্রকল্পটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তার পরই আমরা বাণিজ্যিক কাজ শুরু করে দেব। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ছয় হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়েছে।’ 
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন  রেলওয়ের ওয়াগন থাকলেও লোকোমোটিভ পাওয়া যায় না। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে যানজটসহ নানা সমস্যা হয়, দীর্ঘ সময় লাগে। জলপথেও সমস্যা হয়। পাইপলাইনটি চালু হলে এসব সমস্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল ৬৫ শতাংশ। ডিজেলের সরবরাহ নিশ্চিত হবে পাইপলাইনটি চালু হলে। পেট্রোল ও অকটেন আগে যেভাবে সরবরাহ করা হতো, কখনও রেলওয়ে ওয়াগনে করে, কখনও নদীপথে ট্যাঙ্কারে করে– সেভাবেই আসবে।
জানা গেছে, গত ২৪ জুন থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই সরবরাহ শতভাগ সফল বলে বিপিসি কর্মকর্তারা জানান। 

দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়। বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ থেকে ৯০ লাখ টন। পরিশোধিত তেলের মধ্যে সরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ডিজেল। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনে প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এর পর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়  তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয়  ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
বিপিসির এক পরিচালক জানান, পাইপলাইনটি চালু হলে সড়ক ও জলপথে পরিবহনের জন্য কোনো টাকা ব্যয় হবে না। শুধু পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। বছরে প্রকল্পটি থেকে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। সাশ্রয় হবে আড়াইশ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা আগামী ১৬ বছরের মধ্যে উঠে আসবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি তেল পরিবহন খরচ কমবে এবং নির্বিঘ্ন হবে সরবরাহ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ কমবে। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করার যে সংকট, তাও আর থাকবে না। নদীপথে লাইটারেজে করে পরিবহনকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল সিন্ডিকেট আছে। পাইপলাইন চালু হয়ে গেলে এসব বিষয়ও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছে বিপিসি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজা উপত্যকার ৮৫ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে: জাতিসংঘ
  • গ্যাসের অপেক্ষা আর শেষ হয় না
  • মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন
  • দাম বাড়ানোর পরও গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহ কৃষকের
  • চীনকে মোকাবিলায় পরীক্ষার মুখে কোয়াডের ঐক্য
  • ৪০টি চৌকি আদালতে ৭১টি ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ
  • বৃহস্পতিবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
  • ভরা মৌসুমেও ইলিশ সরবরাহ কম, দাম লাগামহীন
  • ইসরায়েলের কাছে ৫১০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র
  • পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু চলতি মাসেই