১১০২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: মামলায় এস আলমসহ ৬৬ জন আসামি
Published: 19th, May 2025 GMT
দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ১০২ কোটি আত্মসাৎ করেছেন শিল্পগ্রুপ এস আলমের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম। এ অপকর্মে তাকে সহযোগিতা করেছেন সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় এস আলমের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদসহ ৬৬ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১৯ মে) কমিশন এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়। দুটি মামলায় সাইফুল আলমকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
প্রথম মামলায় ঋণের নামে ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ৫৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে সাইফুল আলমসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন-এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুল ইসলাম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ছুটিতে) সৈয়দ ওয়াসেক মো.
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব (ঋণ প্রস্তাব) শাখা হতে জোনাল অফিস ও পরে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ ও ঋণ অনুমোদন করে নামসর্বস্ব কোম্পানি মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে।২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, জুবিলি রোড শাখায় বাই মুরাবাহা (হাইপো) বিনিয়োগ সীমা ৭২ কোটি এবং এলসি সীমা ৮০ কোটি টাকার বিনিয়োগ (ঋণ) সুবিধা দেওয়া হয়। ওই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ (ঋণ) গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি না নেওয়া, গ্রাহকের ঠিকানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যাচাই না করা, হালনাগাদ বিমা পলিসি ও ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া, ল’ ইয়ার স্যাটিসফেকশন সার্টিফিকেট না নেওয়া, এনইসি গ্রহণ না করা, সহায়ক জামানতের অতিমূল্যায়নসহ যথাযথ রেকর্ডপত্র ছাড়া ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়, ঋণের ক্ষেত্রে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জুবিলি রোড শাখা থেকে বিনিয়োগ সীমার বিপরীতে ২০১২ সালের পরবর্তী বছরগুলোতে ঋণের কোনো টাকা পরিশোধ না করা সত্ত্বেও শাখা কর্তৃক ভুয়া ডকুমেন্ট প্রেরণ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করা হয় এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিনিয়োগ সীমা ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৪৫০ কোটি টাকা সীমাতিরিক্ত বিতরণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মোট ৫৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিভিন্ন নামসর্বস্ব হিসাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এই টাকা বিভিন্ন ডিলের মাধ্যমে সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের হিসাব থেকে মেসার্স শাহাজি ট্রেডার্স, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স জিন্নাহ কর্পোরেশন, মুসা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন কোম্পানির অনুকূলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই হিসাবসমূহ থেকে ৫টি ডিলের মাধ্যমে মোট ১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে (এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম রিফাইন্ড সুগার লি.) স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ অনুসন্ধানকালে প্রতীয়মান হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় একই কায়দায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের নামে ৫৫৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায়ও সাইফুল আলমসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হলেন-এস আলম গ্রুপ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলমগীর হুদা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ছুটিতে) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জহুরুল হক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ হাবিব হাসনাত, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা খায়ের, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী ওসমান আলী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সাবেক) মো. মাসুদুর রহমান শাহ, ইভিপি ও বিভাগীয় প্রধান (অবসরপ্রাপ্ত) ইকরাম উল্লা, ভিপি ও আইএডি প্রধান (সাবেক) সৈয়দ আনিছুর রহমান, ইভিপি ও বিভাগীয় প্রধান (অবসরপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমেদ, এসভিপি ও বিভাগীয় প্রধান (অবসরপ্রাপ্ত) এ. কে. এম. আবু ছগীর চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইনভেস্টমেন্ট ডিভিশনের প্রধান মো. আলমগীর হোসেন, এসইভিপি ও আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান এস. এম. আজহারুল ইসলাম, ভিপি ও বিভাগীয় প্রধান (অব.) মো. ইফতেখার উদ্দিন, ইভিপি ও বিভাগীয় প্রধান কায়সার ইমতিয়াজ, ইভিপি ও বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, ইভিপি ও বিভাগীয় প্রধান সাফায়েত আহমেদ চৌধুরী, এসভিপি ও সাবেক আইএডি প্রধান মো. নাছিম গাওহার, ইভিপি ও বিভাগীয় প্রধান আলী নাহিদ খান, সাবেক এসভিপি ও চট্টগ্রাম উত্তর আঞ্চলিক প্রধান মো. ওয়াহিদুর রহমান, সাবেক ইভিপি ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, এসএভিপি (ছাড়পত্রপ্রাপ্ত) ও জুবিলি রোড শাখার সাবেক ম্যানেজার মোহাম্মদ জাবেদ মোরশেদ, এসএভিপি (অপসারিত) ও সাবেক অপারেশন ম্যানেজার মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ, আন্দরকিল্লা শাখার এসএভিপি ও সাবেক অপারেশন ম্যানেজার ফারজানা শাম্মি, এভিপি ও সাবেক অপারেশন ম্যানেজার ফারহানা নিগার চৌধুরী, এসএভিপি ও সাবেক ম্যানেজার মোহাম্মদ জোবাইর হোসেন, আন্দরকিল্লা শাখার এফএভিপি মোরশেদুল আলম, এফএভিপি সেলিম উল্লাহ এবং এভিপি (অপসারিত) সৈয়দা নাজমা মালেক।
এজাহারে বলা হয়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজ নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারীর সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব (ঋণ প্রস্তাব) শাখা থেকে জোনাল অফিস ও পরে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ ও ঋণ অনুমোদন করে।
এতে বলা হয়, নামসর্বস্ব কোম্পানি মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের নামে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, আন্দরকিল্লা শাখায় বাই মুরাবাহা (হাইপো) বিনিয়োগ সীমা ৫০ কোটি এবং এলসি সীমা ৫৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হয়। উক্ত ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ (ঋণ) গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি না নেওয়া, গ্রাহকের ঠিকানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যাচাই না করা, হালনাগাদ বীমা পলিসি ও ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া, ল’ ইয়ার স্যাটিসফেকশন সার্টিফিকেট না নেওয়া, সহায়ক জামানতের অতিমূল্যায়নসহ যথাযথ রেকর্ডপত্র ছাড়া ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।
এছাড়া ঋণ বিতরণের পর আন্দরকিল্লা শাখা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ইউনিয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান যেমন-ভেনাস ট্রেডিংস লি., রিজেনেবল ট্রেডার্স লি., আব্দুল আওয়াল অ্যান্ড সন্স লি., ইউনিয়ন প্যাসিফিক সোর্স অ্যান্ড ট্রেডের অনুকূলে ঋণের টাকা স্থানান্তর করা হয়।উক্ত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানসমূহের হিসাব থেকে পরবর্তীতে চেক ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ২টি প্রতিষ্ঠানে মোট ১৩০ কোটি টাকা স্থানান্তর করার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, ঋণ প্রদানের পরবর্তী বছরগুলোতে অর্থাৎ, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের আবেদন, শাখা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী বিনিয়োগ হিসাব নিয়মিত রাখার জন্য মুনাফাসহ বছর বছর নবায়ন করা হতো। এই প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত বিনিয়োগ সীমা (ঋণ সীমা) ৪৫ কোটি টাকা থাকলেও সময়ে সময়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থছাড় করে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ করে মোট ৫৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস আলম গ র প অবসরপ র প ত ম হ ম মদ হ ন ম হ ম মদ র ম হ ম মদ ম হ ম মদ ম দ র রহম ন প রস ত ব গ র হক র অপস র ত ল ইসল ম এসভ প আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক রাজউক চেয়ারম্যান ও সাবেক বিজিবি প্রধানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার, তার স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশন এবং সাবেক বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল (অবসরপ্রাপ্ত) ও তার স্ত্রী সোমা ইসলামের ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে মো. ছিদ্দিকুরের ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আবেদন করেন পরিচালক মো. আবুল হাসনাত।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ছিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে ১৩টি বিও হিসাবে বিপুল পরিমাণ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রে বিপুল অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে যা উত্তোলন করে তারা বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাফিনুলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন সূত্রে জানা যায়, তার ও তার স্ত্রী সোমা ইসলামের নামে সিটি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের এফডিআর, সঞ্চয় হিসাব ও চলতি হিসাবে মোট ৬ কোটি ২০ লাখ ৫ হাজার ৯৬৩ টাকা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায় এসব নগদায়ন করে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।